বাংলাদেশ ইতিহাস

চট্টগ্রাম জেলার পরিচিতি, ইতিহাস ও দর্শনীয় স্থান

চট্টগ্রাম জেলাচট্টগ্রাম জেলা

চট্টগ্রাম

বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী ও দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। এর ঐতিহাসিক নাম পোর্টো গ্র্যান্ডে এবং ইসলামাবাদ। সমৃদ্ধ ইতিহাস, ঐতিহ্যে প্রাচীন আর বৈচিত্রে পরিপূর্ণ বার আউলিয়ার দেশখ্যাত বন্দরনগরী চট্টগ্রাম । বাংলাদেশের বৃহত্তম ও ব্যস্ততম সমুদ্রবন্দরটি এই চট্টগ্রামেরই সম্পদ। পাহাড়, সমুদ্র, উপত্যকা, বন-বনানীর কারণে চট্টগ্রামের মতো ভৌগোলিক বৈচিত্র্য বাংলাদেশের আর কোন জেলার নেই। এটি এশিয়ায় ৭ম এবং বিশ্বের ১০ম দ্রুততম ক্রমবর্ধমান শহর।

চট্টগ্রাম জেলার নামকরণের ইতিহাস

বৈচিত্রময়ী চট্টগ্রামের নামের কারণও বৈচিত্রে ভরা। খ্রিষ্টীয় দশক শতকের আগে চট্টগ্রাম নামের অস্তিত্ব ছিল না। অর্থাৎ চট্টগ্রাম নামের কোন উৎসের সন্ধান পাওয়া যায় না। তাই দেখা যায় যে, সুপ্রাচীনকাল থেকে এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন পরিব্রাজক, ভৌগোলিক এবং পন্ডিতগণের লিখিত বিবরণে, অঙ্কিত মানচিত্রে, এখানকার শাসক গৌড়ের সুলতান ও রাজাদের মুদ্রায় চট্টগ্রামকে বহু নামে খ্যাত করেছিলেন। এ পর্যন্ত চট্টগ্রামের ৪৮টি নাম পাওয়া গেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‌‌-সুহ্মদেশ, ক্লীং, রম্যভূমি, চাতগাঁও, চট্টল, চৈত্যগ্রাম, সপ্তগ্রাম, চট্টলা, চক্রশালা, শ্রীচট্টল, চাটিগাঁ, পুস্পপুর, চিতাগঞ্জ, চাটিগ্রাম ইত্যাদি। কিন্তু কোন নামের সঙ্গে পাঁচজন একমত হন না। সে সব নাম থেকে চট্টগ্রামের নাম উৎপত্তির সম্ভাব্য ও চট্টগ্রামের নামের সঙ্গে ধ্বনিমিলযুক্ত তেরটি নামের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরা হলো।

  • চৈত্যগ্রাম: চট্টগ্রামের বাঙালি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অভিমত এই যে, প্রাচীনকালে এখানে অসংখ্য বৌদ্ধ চৈত্য অবস্থিত ছিল বলে এ স্থানের নাম হয় চৈত্যগ্রাম। চৈত্য অর্থ বৌদ্ধমন্দির কেয়াং বা বিহার। এই চৈত্যের সঙ্গে গ্রাম শব্দ যুক্ত হয় বলে চৈত্যগ্রাম নামের উদ্ভব হয়। পরবর্তীকালে চৈত্যগ্রাম নাম বিবর্তিত হয়ে চট্টগ্রাম রূপ প্রাপ্ত হয়।
  • চতুঃগ্রাম: ব্রিটিশ আমলের গেজেটিয়ার লেখক ও’মলি সাহেবের মতে, সংস্কৃত চতুঃগ্রাম শব্দ থেকে চট্টগ্রাম নামের উৎপত্তি। চতুঃ অর্থ চার। চতুঃ শব্দের সঙ্গে গ্রাম শব্দ যুক্ত হয়ে চতুঃগ্রাম হয়। চতুঃগ্রাম বিবর্তিত হয়ে চট্টগ্রাম রূপ প্রাপ্ত হয়।
  • চট্টল: চট্টগ্রামের তান্ত্রিক ও পৌরাণিক নাম ছিল চট্টল। হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন তন্ত্র ও পুরাণগ্রন্থে চট্টল নামের উল্লেখ দেখা যায়।

দেবী পুরাণ চন্ডিকা খন্ডেঃ

বিন্ধ্য পর্বতমারভ্য বিন্ধ্যাচলাবধি প্রিয়ে,
অশ্বাক্রান্তেতি বিখ্যাতং বিষ্ণুলোকেষু দুর্লভং,
বিন্দু পর্বত মারভ্য যাবৎ চট্টল বাসিনী
চুড়ামণি তন্ত্রেঃ
চট্টলে দক্ষ বাহুর্যে ভৈরবচন্দ্র শেখরঃ,
ব্যক্ত রূপা ভগবতী ভবানীতন্ত্র দেবতা।
বারাহী তন্ত্রেঃ
চট্টলে দক্ষিণোবাহু ভৈরবচন্দ্র শেখরঃ,
সস্যৈব কতিদেশস্থো বিরূপাক্ষ মহেশ্বর।
কলৌস্থানঞ্চ সর্ব্বোষাৎ দেষানাৎ চট্টল শুভে।
যোগিনী তন্ত্রেঃ
সাদ্ধ ত্রিকোটি দেবানাৎ বসতিশ্চৎ চট্টল শুভে।
ত্রিপুরার রাজমালাঃ

গ্রন্থকারের মতে প্রাচীনকালে এখানে চট্টভট্ট নামক কুলীন ব্রাহ্মণ জাতির নিবাস ছিল বলে এই স্থানের নামকরণ হয়েছিল চট্টল।

  • শাৎগঙ্গ: বার্ণোলী সাহেবের মতে আরবি শাৎগঙ্গ শব্দ বিবর্তিত হয়ে চট্টগ্রাম নামের উদ্ভব হয়েছে। শাৎ অর্থ বদ্বীপ, গঙ্গ অর্থ গঙ্গানদী। চট্টগ্রাম গঙ্গানদীর মোহনাস্থিত বদ্বীপ- প্রাচীন আরব বণিক-নাবিকদের এই ভুল ধারণা থেকে এর নামকরণ করা হয়েছিল শাৎগঙ্গ। পরবর্তীকালে শাৎগঙ্গ নাম বিবর্তিত হয়ে চট্টগ্রাম নামের উৎপত্তি।
  • চিৎ-তৌৎ-গৌং: খ্রিষ্টীয় দশম শতকের মধ্যবর্তীকাল অবধি ফেনী নদীর দক্ষিণ তীর থেকে নাফ নদীর উত্তর তীরের মধ্যবর্তী ভূভাগটির চট্টগ্রাম নাম প্রচলিত ছিল না। তখন এই ভূরাজ্যটি আরাকানরাজ্যভূক্ত ছিল। তৎকালীন আরাকানরাজ সুলতইং চন্দ্র ৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে নিজ অধিকৃত রাজ্যাংশের উক্ত ভূভাগের বিদ্রোহী ‘সুরতন’কে ( সুলতানকে ) দমন করতে এসে সসৈন্য আধুনিক সীতাকুন্ড থানার কুমিরার কাউনিয়া ছড়ার দক্ষিণ তীর অবধি অগ্রসর হন এবং সেখানে একটি পাথরের বিজয়স্তম্ভ নির্মাণ করে তাতে চিৎ-তৌৎ-গৌং (যুদ্ধ করা অনুচিত) বাণী উৎকীর্ণ করে স্বদেশে ফিরে যান। তখন থেকে এই ভূভাগটি চিৎ-তৌৎ-গৌং নামে খ্যাত হয়। আরাকানের প্রাচীন রাজাদের ইতিহাস রাজোয়াং সূত্রে এ তথ্য জানা যায়। কালক্রমে চিৎ-তৌৎ-গৌং নাম বিবর্তিত হয়ে চট্টগ্রাম নামের উদ্ভব হয়।

 

  • চাটিগ্রাম: সম্ভবত রাজোয়াং বর্ণিত উপরিউক্ত চিৎ-তৌৎ-গৌং নামটি মধ্যযুগে বিবর্তিত ও সংস্কৃতায়িত হয়ে চাটিগ্রাম রূপ প্রাপ্ত হয়। গৌড়ের রাজা গণেশ দনুজমর্দন দেবের ১৩৩৯-১৩৪০ শকাব্দে ও রাজা মহেন্দ্র দেবের ১৩৪০ শকাব্দে চট্টগ্রামে তৈরি মুদ্রায় টাকশালের নাম চাটিগ্রাম উল্লেখ দেখা যায়। বাংলার সুলতান সৈয়দ আলাউদ্দিন হোসেন শাহ্‌ ( ১৪৯৩-১৫১৯ খ্রি. ) ও সৈয়দ নাসির উদ্দিন নশরত শাহ্‌র আমলে (১৫১৯-১৫৩২ খ্রি.) কবীন্দ্র পরমেশ্বর বিরচিত পরাগলী মহাভারতে এবং বৈষ্ণব সাহিত্য চৈতন্য-ভাগবত প্রভৃতিতে চাটিগ্রাম নামের উল্লেখ রয়েছে।
  • চাটিজান: চট্টগ্রামের মুসলমানদের মধ্যে প্রচলিত কুসংস্কার থেকে জানা যায় যে, প্রাচীনকালে চট্টগ্রাম ছিল জ্বীনপরী অধ্যুষিত দেশ। পীর বদর শাহ্‌ এখানে আগমন করে অলৌকিক চাটির (মৃৎ-প্রদীপ) আলোর তেজের সাহায্যে জ্বীনপরী বিতাড়িত করে নামাজের জন্য আজান দেয়ার ফলে এই স্থানের নাম হয় চাটিজান।
  • চতকাঁও/চাটগাঁও:বাংলার সুলতান গিয়াসুদ্দিন আজম শাহ্‌র (১৩৮৯-১৪০৯ খ্রি.) ও সুলতান জালালুদ্দিন মোহাম্মদ শাহ্‌র (১৪১৮-১৪৩২ খ্রি.) মুদ্রায় চতকাঁও টাকশালের নাম উৎকীর্ণ দেখা যায়। ১৩৯৭ খ্রিষ্টাব্দে লিখিত সুবিখ্যাত সুফি সাধক মুজাফফর শামস বলখির চিঠিতে চাটগাঁও নামের উল্লেখ দেখা যায়।

 

  • সুদকাওয়ান: আফ্রিকা মহাদেশের অন্তর্গত মরক্কোর অধিবাসী ইবনে বতুতা ১৩৪৬ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে বঙ্গ ও আসাম পরিভ্রমণ করেন। তিনি তার ভ্রমণকাহিনীতে চট্টগ্রামকে সুদকাওয়ান নামে উল্লেখ করেন।
  • চাটিকিয়াং: চীন দেশ থেকে ১৪০৯, ১৪১২, ১৪১৫, ১৪২২ বা ১৪২৩, ১৪২৯ ও ১৪৩২ খ্রিষ্টাব্দে মোট সাতবার বাংলার সুলতানদের দরবারে রাজদূত প্রেরিত হয়েছিল। তাদের লিখিত বিবরণে চট্টগ্রামকে চাটিকিয়াং রূপে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
  • শাতজাম: তুর্কি সুলতান সোলায়মানের রেডফ্লিটের ক্যাপ্টেন সিদি আলী চেহেলভি ১৫৫৪ খ্রিষ্টাব্দে জাহাজযোগে ভারত মহাসাগরীয় দেশসমূহ পরিভ্রমণ করেন। এবং এ সময় তিনি আরাকান থেকে চট্টগ্রামের সমুদ্র উপকূল হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আগমন করেন। তার ভ্রমণকাহিনীতে চট্টগ্রামের নাম শাতজাম নামে লিপিবদ্ধ হয়েছে।
  • চার্টিগান: পরিব্রাজক রালফ ফিচ ১৫৫০ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রাম পরিভ্রমণ করেন। তার লিখিত ভ্রমণকাহিনীতে চট্টগ্রামের নাম চার্টিগান রূপে লিপিবদ্ধ হয়েছে।
  • জেটিগা: ১৬৬০ খ্রিষ্টাব্দে ফ্যান্ডেন ব্রুক অঙ্কিত মানচিত্রে চট্টগ্রামের নাম জেটিগা রূপে লিখিত আছে।

চট্টগ্রাম জেলার ইতিহাস

সীতাকুণ্ড এলাকায় পাওয়া প্রস্তরীভূত অস্ত্র এবং বিভিন্ন মানবসৃষ্ট প্রস্তর খন্ড থেকে ধারণা করা হয় যে, এ অঞ্চলে নব্যপ্রস্তর যুগে অস্ট্রো-এশিয়াটিক জনগোষ্ঠীরবসবাস ছিল। তবে, অচিরে মঙ্গোলদের দ্বারা তারা বিতাড়িত হয় (হাজার বছরের চট্টগ্রাম, পৃ‌২৩)। লিখিত ইতিহাসে সম্ভবত প্রথম উল্লেখ গ্রিক ভৌগোলিক প্লিনির লিখিত পেরিপ্লাস। সেখানে ক্রিস নামে যে স্থানের বর্ণনা রয়েছে ঐতিহাসিক নলিনীকান্ত ভট্টশালীর মতে সেটি বর্তমানের সন্দ্বীপ। ঐতিহাসিক ল্যাসেনের ধারণা সেখানে উল্লিখিত পেন্টাপোলিশ আসলে চট্টগ্রামেরই আদিনাম। মৌর্য সাম্রাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টি নিশ্চিত নয় তবে পূর্ব নোয়াখালীর শিলুয়াতে মৌর্য যুগেরব্রাহ্মী লিপিতে একটি মূর্তির পাদলিপি পাওয়া গেছে। তিব্বতের বৌদ্ধ ঐতিহাসিক লামা তারানাথের একটি গ্রন্থে চন্দ্রবংশের শাসনামলের কথা দেখা যায় যার রাজধানী ছিল চট্টগ্রাম। এর উল্লেখ আরাকানের সিথাং মন্দিরের শিলালিপিতেও আছে।

তারানাথের গ্রন্থে দশম শতকে গোপীনাথ চন্দ্র নামের রাজার কথা রয়েছে (বাংলাপিডিয়া, খণ্ড ৩, পৃ২৭৬)। সে সময় আরবীয় বণিকদের চট্টগ্রামে আগমন ঘটে। আরব ভৌগোলিকদের বর্ণনার ‘সমুন্দর’ নামের বন্দরটি যে আসলে চট্টগ্রাম বন্দর তা নিয়ে এখন ঐতিহাসিকরা মোটামুটি নিশ্চিত (হাজার বছরের চট্টগ্রাম, পৃ‌২৩)। সে সময় পালবংশের রাজা ছিলেন ধর্মপাল। পাল বংশের পর এ অঞ্চলে একাধিক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যের সৃষ্টি হয়। ৯৫৩ সালে আরাকানের চন্দ্রবংশীয় রাজা সু-লা‌-তাইং-সন্দয়া চট্টগ্রাম অভিযানে আসলেও কোন এক অজ্ঞাত কারণে তিনি বেশি দূর অগ্রসর না হয়ে একটি স্তম্ভ তৈরি করেন। এটির গায়ে লেখা হয় ‘চেৎ-ত-গৌঙ্গ’ যার অর্থ ‘যুদ্ধ করা অনুচিৎ’। সে থেকে এ এলাকাটি চৈত্তগৌং হয়ে যায় বলে লেখা হয়েছে আরাকানীয় পুথি ‘রাজাওয়াং’-এ। এ চৈত্তগৌং থেকে কালক্রমে চাটিগ্রাম, চাটগাঁ, চট্টগ্রাম, চিটাগাং ইত্যাদি বানানের চল হয়েছে (হাজার বছরের চট্টগ্রাম, পৃ‌২৩)।

চন্দ্রবংশের পর লালবংশ এবং এরপর কয়েকজন রাজার কথা কিছু ঐতিহাসিক উল্লেখ করলেও ঐতিহাসিক শিহাবুদ্দিন তালিশের মতে ১৩৩৮ সালে সুলতান ফখরুদ্দীন মোবারক শাহ‌-এর চট্টগ্রাম বিজয়ের আগ পর্যন্ত ইতিহাস অস্পষ্ট। এ বিজয়ের ফলে চট্টগ্রাম স্বাধীন সোনারগাঁও রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। সে সময়ে প্রায় ১৩৪৬ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম আসেন বিখ্যাত মুর পরিব্রাজক ইবনে বতুতা। তিনি লিখেছেন -“বাংলাদেশের যে শহরে আমরা প্রবেশ করলাম তা হল সোদকাওয়াঙ (চট্টগ্রাম)। এটি মহাসমুদ্রের তীরে অবস্থিত একটি বিরাট শহর, এরই কাছে গঙ্গা নদী- যেখানে হিন্দুরা তীর্থ করেন এবং যমুনা নদী একসঙ্গে মিলেছে এবং সেখান থেকে প্রবাহিত হয়ে তারা সমুদ্রে পড়েছে। গঙ্গা নদীর তীরে অসংখ্য জাহাজ ছিল, সেইগুলি দিয়ে তারা লখনৌতির লোকেদের সঙ্গে যুদ্ধ করে। …আমি সোদওয়াঙ ত্যাগ করে কামরু (কামরূপ) পর্বতমালার দিকে রওনা হলাম।”

১৩৫২-৫৩ সালে ফখরুদ্দীন মোবারক শাহ এর পুত্র ইখতিয়ার উদ্দিন গাজী শাহকে হত্যা করে বাংলার প্রথম স্বাধীন সুলতান ইলিয়াস শাহ বাংলার মসনদ দখল করলে চট্টগ্রামও তার করতলগত হয়। তার সময়ে চট্টগ্রাম বাংলার প্রধান বন্দর হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর পর হিন্দুরাজা গণেশ ও তার বংশধররা চট্টগ্রাম শাসন করে। এরপরে বাংলায় হাবসি বংশ প্রতিষ্ঠা হয়। কিন্তু ১৪৯২ সালে সুলতান হোসেন শাহ বাংলার সুলতান হোন। কিন্তু চট্টগ্রামের দখল নিয়ে তাকে ১৪১৩-১৪১৭ সাল পর্যন্ত ত্রিপুরার রাজা ধনমানিক্যের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত থাকতে হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত রাজা ধনমানিক্যের মৃত্যুর পর হোসেন শাহ‌-এর রাজত্ব উত্তর আরাকান পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। তার সময়ে উত্তর চট্টগ্রামের নায়েব পরবগল খানের পুত্র ছুটি খাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় শ্রীকর নন্দী মহাভারতের একটি পর্বের বঙ্গানুবাদ করেন।

পর্তুগিজদের আগমন ও বন্দরের কর্তৃত্ব লাভঃ

১৫১৭ সাল থেকে পর্তুগিজরা চট্টগ্রামে আসতে শুরু করে। বাণিজ্যের চেয়ে তাদের মধ্যে জলদস্যুতার বিষয়টি প্রবল ছিল। সুলতান প্রবলভাবে তাদের দমনের চেষ্টা করেন। কিন্তু এ সময় আফগান শাসক শের শাহ বাংলা আক্রমণ করবে শুনে ভীত সন্ত্রস্ত হোসেন শাহ পর্তুগিজদের সহায়তা কামনা করেন। তখন সামরিক সহায়তার বিনিময়ে ১৫৩৭ সালে পর্তুগিজরা চট্টগ্রামে বাণিজ্য কুঠি নির্মান করে। একই সঙ্গে তাদেরকে বন্দর এলাকার শুল্ক আদায়ের অধিকার দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ১৫৩৮ সালে শের শাহ‌-র সেনাপতি চট্টগ্রাম দখল করে। তবে, ১৫৮০ পর্যন্ত আফগান শাসনামলে সবসময় ত্রিপুরা আর আরাকানীদের সঙ্গে যুদ্ধ চলেছে।

আরাকানী শাসনঃ
১৫৮১ সাল থেকে ১৬৬৬ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম সম্পূর্ণভাবে আরাকান রাজাদের অধীনে শাসিত হয়। তবে, পর্তুগিজ জলদস্যুদের দৌরাত্ম এ সময় খুবই বৃদ্ধি পায়। বাধ্য হয়ে আরাকান রাজা ১৬০৩ ও ১৬০৭ সালে শক্ত হাতে পর্তুগিজদের দমন করেন। ১৬০৭ সালেই ফরাসি পরিব্রাজক ডি লাভাল চট্টগ্রাম সফর করেন।তবে সে সময় পর্তুগিজ জলদস্যু গঞ্জালেস সন্দ্বীপ দখল করে রাখে। পর্তুগিজ মিশনারি পাদ্রি ম্যানরিক ১৬৩০-১৬৩৪ সময়কালে চট্টগ্রামে উপস্থিতকালে চট্টগ্রাম শাসক আলামেনের প্রশংসা করে যান। ১৬৬৬ সালে চট্টগ্রাম মোঘলদের হস্তগত হয়। চট্টগ্রামে আরাকানী শাসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রাম আরাকানীদের কাছ থেকে অনেক কিছুই গ্রহণ করে। জমির পরিমাণে মঘী কানির ব্যবহার এখনো চট্টগ্রামে রয়েছে। মঘী সনের ব্যবহারও দীর্ঘদিন প্রচলিত ছিল। সে সময়ে আরাকানে মুসলিম জনবসতি বাড়ে। আরকান রাজসভায় মহাকবি আলাওল, দৌলত কাজী, এবং কোরেশী মাগন ঠাকুর এর মতো বাংলা কবিদের সাধনা আর পৃষ্ঠপোষকতায় সেখানে বাংলা সাহিত্যের প্রভূত উন্নতি হয়। পদ্মাবতী আলাওলের অন্যতম কাব্য।

মোঘল শাসনামলঃ
১৬৬৬ সালে মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব বাংলার সুবেদার শায়েস্তা খানকে চট্টগ্রাম দখলের নির্দেশ দেন। সুবেদারের পুত্র উমেদ খাঁর নেতৃত্বে কর্ণফুলী নদীর মোহনায় আরাকানীদের পরাজিত করে এবং আরাকানী দূর্গ দখল করে। যথারীতি পর্তুগিজরা আরাকানীদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে মোঘলদের পক্ষ নেয়। মোঘল সেনাপতি উমেদ খাঁ চট্টগ্রামের প্রথম ফৌজদারের দায়িত্ব পান। শুরু হয় চট্টগ্রামে মোঘল শাসন। তবে মোঘলদের শাসনামলের পুরোটা সময় আরাকানীরা চট্টগ্রাম অধিকারের চেষ্টা চালায়। টমাস প্রাট নামে এক ইংরেজ আরাকানীদের সঙ্গে যোগ দিয়ে মোঘলদের পরাজিত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। কোলকাতার গোড়াপত্তনকারী ইংরেজ জব চার্নকও ১৬৮৬ সালে চট্টগ্রাম বন্দর দখলের ব্যর্থ অভিযান চালায়। ১৬৮৮ সালে ক্যাপ্টেন হিথেরও অনুরূপ অভিযান সফল হয় নি। ১৬৭০ ও ১৭১০ সালে আরাকানীরা চট্টগ্রামের সীমান্তে ব্যর্থ হয়। কিন্তু ১৭২৫ সালে প্রায় ৩০ হাজার মগ সৈন্য চট্টগ্রামে ঢুকে পড়ে চট্টগ্রামবাসীকে বিপদাপন্ন করে ফেলে। তবে শেষপর্যন্ত মোঘলরা তাদের তাড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়। এই সময় মোঘলদের কারণে ইংরেজরা চট্টগ্রাম বন্দর কোনভাবেই দখল করতে পারেনি। মোঘলরা পার্বত্য এলাকার অদিবাসীদের সঙ্গে, বিশেষ করে চাকমা সম্প্রদায়ের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে সদ্ভাব বজায় রাখে।

পলাশীর যুদ্ধ ও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনঃ
পলাশীর যুদ্ধে বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের পর ইংরেজরা চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য নবাব মীর জাফরের ওপর চাপ সৃস্টি করে। তবে, মীরজাফর কোনভাবেই ইংরেজদের চট্টগ্রাম বন্দরের কর্তৃত্ব দিতে রাজী হননি। ফলে, ইংরেজরা তাঁকে সরিয়ে মীর কাশিমকে বাংলার নবাব বানানোর ষড়যন্ত্র করে। ১৭৬১ সালে মীর জাফরকে অপসারণ করে মীর কাশিম বাংলার নবাব হয়ে ইংরেজদের বর্ধমান, মেদিনীপুর ও চট্টগ্রাম হস্তান্তরিত করেন। চট্টগ্রামের শেষ ফৌজদার রেজা খাঁ সরকারিভাবে চট্টগ্রামের শাসন প্রথম ইংরেজ চিফ ভেরেলস্ট-এর হাতে সমর্পন করেন। শুরু হয় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন। কোম্পানির শাসনামলে চট্টগ্রামবাসীর ওপর করারোপ দিনে দিনে বাড়তে থাকে। তবে, ১৮৫৭ সালের আগে চাকমাদের বিদ্রোহ আর সন্দ্বীপের জমিদার আবু তোরাপের বিদ্রোহ ছাড়া ইংরেজ কোম্পানিকে তেমন একটা কঠিন সময় পার করতে হয়নি।

সন্দ্বীপের জমিদার আবু তোরাপ কৃষকদের সংগঠিত করে ইংরেজদের প্রতিরোধ করেন। কিন্তু ১৭৭৬ সনে হরিষপুরের যুদ্ধে তিনি পরাজিত ও নিহত হলে সন্দ্বীপের প্রতিরোধ ভেঙ্গে পড়ে। অন্যদিকে ১৭৭২ থেকে ১৭৯৮ সাল পর্যন্ত চাকমারা প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলে। সম্মুখ সমরে চাকমাদের কাবু করতে না পেরে ইংরেজরা তাদের বিরুদ্ধে কঠিন অর্থনৈতিক অবরোধ দিয়ে শেষ পযর্ন্ত চাকমাদের কাবু করে। ইংরেজরা আন্দরকিল্লা জামে মসজিদকে গোলাবারুদের গুদামে পরিণত করলে চট্টগ্রামবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। মসজিদের জন্য নবাবী আমলে প্রদত্ত লাখেরাজ জমি ১৮৩৮ সালের জরিপের সময় বাজেয়াপ্ত করা হয়। পরে খান বাহাদুর হামিদুল্লাহ খান কলিকাতায় গিয়ে গভর্নরের কাছ থেকে এটি উদ্ধার করেন। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লবের সময় ৩৪তম বেঙ্গল পদাতিক রেজিমেন্টের ২য়, ৩য় ও ৪র্থ কোম্পানীগুলি চট্টগ্রামে মোতায়েন ছিল।

১৮ নভেম্বর রাতে উল্লিখিত তিনটি কোম্পানী বিদ্রোহী হয়ে ওঠে এবং জেল থেকে সকল বন্দী মুক্ত করে। হাবিলদার রজব আলী ও সিপাহী জামাল খান এই বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন। সিপাহীরা ৩টি সরকারি হাতি, গোলাবারুদ ও ধনসম্পদ নিয়ে চট্টগ্রাম ত্যাগ করে। তারা পার্বত্য ত্রিপুরার সীমান্ত পথ ধরে এগিয়ে সিলেট ও কাছাড়ে পৌঁছে। ইংরেজ কোম্পানির অনুরোধে ত্রিপুরা রাজ তাদের বাঁধা দেন। এভাবে বিভিন্ন স্থানে লড়াই সংগ্রাম এবং রসদের অভাবে বিদ্রোহীরা অনেকখানি কাবু হয়ে পড়ে। শেষে ১৮৫৮ সালের ৯ জানুয়ারি সিলেটের মনিপুরে ইংরেজ বাহিনীর সঙ্গে এক লড়াই-এ চট্টগ্রাম সেনা বিদ্রোহের অবসান হয়।

ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনঃ
১৮৯২, ১৮৯৬ ও ১৯০১ সালে চট্টগ্রামকে বাংলা থেকে পৃথক করে আসামের সঙ্গে জুড়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেয় ইংরেজ সরকার। এই প্রচেষ্ঠার প্রতিরোধে চট্টগ্রামে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে। একটি ১৮৯৫-৯৬ সালে ব্রিটিশ পণ্য বর্জন জোরদার ও ১৯০২ সালে চট্টগ্রাম বিভাগীয় সম্মীলন নামে একটি রাজনৈতিক সংস্থার প্রতিষ্ঠা। ১৯০২ সালের ২৯ ও ৩০ মার্চ প্যারেড ময়দান-এ সংস্থার প্রথম বার্ষিক সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন যাত্রা মোহন সেন।
১৯৩০ সালে মাস্টারদা সূর্যসেনের নেতৃত্বে কয়েকজন স্বাধীনতাকামী বিপ্লবী ব্রিটিশ পুলিশ ও সহায়ক বাহিনীর চট্টগ্রামে অবস্থিত অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের চেষ্টা চালায়।

১৯৩০ সালের ১৮ই এপ্রিল অভিযান শুরু হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী গণেশ ঘোষের নেতৃত্বে একদল বিপ্লবী পুলিশ অস্ত্রাগারের এবং লোকনাথ বাউলের নেতৃত্বে দশজনের একটি দল সাহায্যকারী বাহিনীর অস্ত্রাগারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা গোলাবারুদের অবস্থান শনাক্ত করতে ব্যর্থ হন। বিপ্লবীরা সফলভাবে টেলিফোন ও টেলিগ্রাফ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে সক্ষম হন এবং রেল চলাচল বন্ধ করে দেন। সফল বিপ্লবের পর বিপ্লবী দলটি পুলিশ অস্ত্রাগারে সমবেত হন এবং সেখানে মাস্টারদা সূর্য সেনকে মিলিটারী স্যালুট প্রদান করা হয়। সূর্য সেন জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন এবং অস্থায়ী বিপ্লবী সরকার ঘোষণা করেন। ভোর হবার পূর্বেই বিপ্লবীরা চট্টগ্রাম শহর ত্যাগ করেন এবং নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পার্বত্য চট্টগ্রামের দিকে যাত্রা করেন এ‍‍বং পাহাড়ের গায়ে আশ্রয় গ্রহণ করেন। কয়েক দিন পরে পুলিশ বিপ্লবীদের অবস্থান চিহ্নিত করে।

২২ এপ্রিল ১৯৩০ সালে কয়েক হাজার সৈন্য চট্টগ্রাম সেনানিবাস সংলগ্ন জালালাবাদ পাহাড়ে আশ্রয় নেয়া বিপ্লবীদের ঘিরে ফেলে। প্রচণ্ড যুদ্ধে ব্রিটিশ বাহিনীর ৭০ থেকে ১০০ জন এবং বিপ্লবী বাহিনীর ১২ জন শহীদ হন। সূর্য সেন ছোট ছোট দলে বিভক্ত করে তার লোকজনকে পার্শ্ববর্তী গ্রামে লুকিয়ে রাখে এবং বিপ্লবীরা পালাতে সক্ষম হয়। কলকাতা পালিয়ে যাওয়ার সময় কয়েকজন গ্রেফতার হয়। কয়েকজন বিপ্লবী পুনরায় সংগঠিত হয়।২৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৩২ সালে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের নেতৃত্বে বিপ্লবীরা ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করে এবং এক মহিলা মারা যায়। কিন্তু তাদের পরিকল্পনায় বিপর্যয় ঘটে এবং বেশ কিছু বিপ্লবী নিহত হন ও আহতাবস্থায় ধরা পড়েন। প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার সায়ানাইড গলাধঃকরন করে আত্মহত্যা করেন।ব্রিটিশরা সূর্য সেনকে জীবিত অথবা মৃত অবস্থায় ধরার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রাখে।

১৯৩৩ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারি রাতে পটিয়া থেকে ৫ মাইল দূরে গৈরালা নামক স্থানে আত্মগোপনে থাকাকালীন এক বৈঠক থেকে অস্ত্রসহ সূর্য সেন ধরা পড়েন। সূর্য সেনকে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠণের মামলায় প্রধান আসামি বলিয়া অভিহিত করা হয়। সূর্য সেনের বিচারের জন্য ইন্ডিয়ান পেনাল কোডের ১২১/১২১এ ধারা অনুযায়ী স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ১৪ আগষ্ট ১৯৩৩ সালে ট্রাইব্যুনাল সূর্য সেনকে ১২১ ধারা অনুসারে দোষী সাব্যস্ত করিয়া প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত করেন। কলকাতা হাইকোর্টে আপীল করা হলে ১৪ নভেম্বর ১৯৩৩ সালে প্রদত্ত রায়ে হাইকোর্ট স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের দেয়া দণ্ড বহাল রাখে। ১৯৩৪ সালের ১২ই জানুয়ারি মধ্যরাতে সূর্য সেনের ফাঁসী কার্যকর করা হয়।

পাকিস্তান শাসনামল ও ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধে চট্টগ্রাম:
১৯৫১ সালের ১৬-১৯ মার্চ চট্টগ্রামের হরিখোলার মাঠে ৪ দিনব্যাপী সংস্কৃতি সম্মেলনে আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ সভাপতির যে ভাষণটি প্রদান করেন সেটি পূর্ব বাংলার স্বাধিকার চিন্তা ও জাতির সাংস্কৃতিক ধারাকে বেগবান করে তোলে। ঐ ভাষণে তিনি বলেন, ‘মানুষে মানুষে বিভেদ আছে সত্য। এই বিভেদকে জয় করাই শক্তি। সংস্কৃতি ঐক্যের বাহন, বিভেদের চামুণ্ডা নয়।’ ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের চূড়ান্ত আন্দোলন-সংগ্রামের তুঙ্গপর্বে চট্টগ্রামের এই সাংস্কৃতিক আন্দোলন দেশব্যাপী লেখক-বুদ্ধিজীবী ও সংস্কৃতিকর্মীদের ব্যাপক অনুপ্রেরণা দেয়। এই সম্মেলনের প্রভাবে চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক ও শ্রমজীবী মানুষের আন্দোলনও জোরদার হয় এবং পাকিস্তানের শাসক শোষকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ প্রবল হয়ে ওঠে।

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর পর ১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি খাজা নাজিমউদ্দিন ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’-এ ঘোষণা দিলে সারা পূর্ব বাংলায় বিক্ষোভ শুরু হয়। চট্টগ্রামে ৪ ফেব্রুয়ারি ধর্মঘট ও হরতাল পালিত হয়। আন্দরকিল্লায় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। তরুণ সাহিত্যিক মাহবুব-উল-আলম চৌধুরীকে আহ্বায়ক, আওয়ামী মুসলিম লিগ চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক এম এ আজিজ ও রেল শ্রমিক নেতা চৌধুরী হারুনর রশিদকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়। কমিটিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ক্লাব, যুব সম্প্রদায়, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও শ্রমজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা অন্তর্ভুক্ত হন। চট্টগ্রামে ছাত্র-ছাত্রীদের ভূমিকাও ছিলো উল্লেখযোগ্য, ৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকে ভাষা আন্দোলনকে বেগবান করতে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। আবদুল্লাহ আল হারুনকে আহ্বায়ক, মোহাম্মদ আলী ও ফরিদ উদ্দিন আহমদকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়। চট্টগ্রামের ছাত্র-ছাত্রীরা আন্দোলনে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন।

ভাষা আন্দোলনের ডাক চট্টগ্রামের গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজে রাজনৈতিক ও ছাত্র নেতৃত্বের পাশাপাশি রাজনীতিসচেতন শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী ও তরুণ লেখকরা বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন। তারা চট্টগ্রাম শহর ও গ্রামাঞ্চলে গণসংগীত, কবিগান ও নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ভাষা আন্দোলনের মর্মবাণী ও পূর্ব বাংলার মানুষের জাতীয়তাবাদী ও স্বাধিকার চেতনা ছড়িয়ে দেন। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রাক্কালে ২৩ ও ২৪ মার্চ সোয়াত জাহাজ থেকে পাকিস্তানিরা অস্ত্র নামানোর বিরুদ্ধে শ্রমিক জনতার রক্তক্ষয়ী প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ‘সোয়াত’ জাহাজ থেকে অস্ত্র লুট করে চট্টগ্রামের খালাসিরা বিরাট অবদান রাখেন। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা প্রচারে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

 

ভৌগোলিক পরিচিতি

ভৌগোলিক অবস্থান: বাংলাদেশের দক্ষিণপূর্বে ২০০৩৫’ থেকে ২২০৫৯’ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১০২৭’ থেকে ৯২০২২’ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ বরাবর এর অবস্থান।

ভৌগোলিক সীমানা:
উত্তরে ফেণী জেলা ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, দক্ষিণে কক্সবাজার জেলা, পূর্বে বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলা এবং পশ্চিমে নোয়াখালী জেলা ও বঙ্গোপসাগর। পাহাড়, নদী, সমূদ্র, অরণ্য, উপত্যকা প্রভৃতি প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের জন্যে এ জেলা অন্যান্য জেলা থেকে স্বতন্ত্র।চট্টগ্রাম জেলার আয়তন ৫,২৮২.৯৮ বর্গ কিমি।
বার্ষিক গড় তাপমাত্রা: সর্বোচ্চ ৩৩.৮o সে. এবং সর্বনিম্ন ১৪.৫oসে. ।
বার্ষিক বৃষ্টিপাত: ৩,১৯৪ মিমি।

জেলার প্রধান নদ-নদী: কর্ণফুলী, হালদা, মুহুরী ও সাঙ্গু।

প্রশাসনিক এলাকাসমূহ
চট্টগ্রাম জেলা ৪১ ওয়ার্ড বিশিষ্ট ১টি সিটি কর্পোরেশন, ১৪টি উপজেলা, ২৭টি থানা, ১৩টি পৌরসভা, ১৯৪টি ইউনিয়ন, ১২৬৭টি গ্রাম, ৮৯০টি মৌজা, ১৬টি সংসদীয় আসন নিয়ে গঠিত।

উপজেলা সমূহঃ চট্টগ্রাম জেলা ১৪টি উপজেলা। উপজেলাগুলো হলো:
• আনোয়ারা,
• বাঁশখালী,
• বোয়ালখালী,
• চন্দনাইশ,
• ফটিকছড়ি,
• ভূজপূর,
• হাটহাজারী,
• লোহাগড়া,
• মীরসরাই,
• পটিয়া,
• রাঙ্গুনিয়া,
• রাউজান,
• সন্দ্বীপ,
• সাতকানিয়া,
• সীতাকুণ্ড এবং
• কর্ণফুলী।

চট্টগ্রাম শহর এলাকা ১৬টি থানার অধীন:
চান্দগাঁও, বায়জীদবোস্তামী, বন্দর, ডবলমুরিং, পতেঙ্গা, কোতোয়ালী, পাহাড়তলী, পাঁচলাইশ, বাকলিয়া, কর্ণফুলী, হালিশহর, খুলশী থানা এবং নবগঠিত চকবাজার,আকবরশাহ, সদরঘাট ও ইপিজেড।

 

চট্টগ্রাম জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ

ঐতিহাসিক স্থান

  • কধুরখীল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাচীন মৃৎভবন ও পার্বতী চরণ দীঘি
  • কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র
  • কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, চট্টগ্রাম
  • গুপ্ত জমিদার বাড়ি
  • চট্টগ্রাম ওয়ার সিমেট্রি
  • চট্টগ্রাম সেনানিবাস
  • চাকমা রাজবাড়ি
  • জেএম সেন হল
  • দামপাড়া বধ্যভূমি
  • দেয়াঙ পাহাড়
  • পণ্ডিতবিহার
  • পরৈকোড়া জমিদার বাড়ি
  • প্রসন্ন কুমার জমিদার বাড়ি
  • ফতেহপুর শিলালিপি
  • বড় উঠান জমিদার বাড়ি
  • ভুজপুর জমিদার বাড়ি
  • ভৈরব সওদাগরের জমিদার বাড়ি
  • মঘাদিয়া জমিদার বাড়ি
  • যদুনাথ চৌধুরীর জমিদার বাড়ি
  • রামধন জমিদার বাড়ি
  • শমসের গাজীর কেল্লা, মীরসরাই
  • সত্য সাহার জমিদার বাড়ি
  • সারিকাইত জমিদার বাড়ি
  • হালিশহর সেনানিবাস

ক্রীড়া ও বিনোদন

  • এম এ আজিজ স্টেডিয়াম
  • চট্টগ্রাম বন্দর স্টেডিয়াম
  • জব্বারের বলীখেলা
  • জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম
  • মক্কার বলীখেলা

চিত্তাকর্ষক স্থান

  • খৈয়াছড়া ঝর্ণা
  • গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত
  • চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা
  • চট্টগ্রাম তোরণ
  • চন্দ্রনাথ পাহাড়
  • চুনতি বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য
  • জাম্বুরী পার্ক
  • দুধপুকুরিয়া-ধোপাছড়ি বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য
  • নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা
  • পতেঙ্গা
  • পারকি সমুদ্র সৈকত
  • প্রজাপতি পার্ক বাংলাদেশ
  • ফয়েজ লেক
  • বাটালি পাহাড়
  • বাড়ৈয়াঢালা জাতীয় উদ্যান
  • বাঁশখালী ইকোপার্ক
  • বুদবুদি ছড়া
  • বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকো-পার্ক, সীতাকুণ্ড
  • ভাটিয়ারী
  • মহামায়া হ্রদ
  • শেখ রাসেল পক্ষিশালা ও ইকোপার্ক
  • সন্দ্বীপ
  • সহস্রধারা ঝর্ণা
  • সিআরবি হিল
  • সীতাকুণ্ড জাহাজ ভাঙ্গা এলাকা
  • সুপ্তধারা ঝর্ণা
  • স্বাধীনতা কমপ্লেক্স
  • হাজারিখিল বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য

ধর্মীয় স্থাপনা

ইসলাম ধর্ম

  • আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ
  • আমানত শাহ দরগাহ
  • আলওয়াল মসজিদ
  • ওয়ালী খান মসজিদ
  • ওয়াশিল চৌধুরীপাড়া মসজিদ
  • কদম মোবারক মসজিদ (১৭১৯)
  • কাপাসগোলা জামতলা শাহী জামে মসজিদ
  • চুনতি বড় মিয়াজী ও ছোট মিয়াজী মসজিদ
  • ছুটি খাঁ মসজিদ
  • জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ
  • ফকির মসজিদ
  • ফকিরা জামে মসজিদ
  • বখশী হামিদ মসজিদ
  • বদর আউলিয়ার দরগাহ
  • বায়েজিদ বোস্তামীর মাজার
  • মসজিদ-ই-সিরাজ উদ-দৌলা
  • মাইজভান্ডার দরবার শরীফ
  • মুসা খাঁ মসজিদ (১৬৫৮)
  • মোহছেন আউলিয়ার দরগাহ
  • শেখ বাহার উল্লাহ জামে মসজিদ
  • শ্রীপুর বুড়া মসজিদ
  • হাম্মাদিয়ার মসজিদ

হিন্দু ধর্ম

  • চট্টেশ্বরী মন্দির
  • চন্দ্রনাথ মন্দির
  • প্রাচীন শিব মন্দির , মির্জাপুর
  • মেধস মুনির আশ্রম

বৌদ্ধ ধর্ম

  • চক্রশালা (পটিয়া)
  • চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহার
  • ধর্মচক্র বৌদ্ধ বিহার
  • বিশ্বশান্তি প্যাগোডা (হাটহাজারী)
  • মহামুনি বৌদ্ধ বিহার

 

চট্টগ্রাম জেলার বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব

বিপ্লবী

ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন

অনন্ত সিং, অনিল কুমার রক্ষিত, অনুরূপচন্দ্র সেন, অপূর্ব সেন, অমরেন্দ্রলাল নন্দী, অম্বিকা চক্রবর্তী, অর্ধেন্দু দস্তিদার, আবদুল বারী চৌধুরী, কল্পনা দত্ত, কল্যাণী দাস, কৃষ্ণকুমার চৌধুরী, জীবন ঘোষাল, তারকেশ্বর দস্তিদার, ধীরেন্দ্রলাল বড়ুয়া, নিত্যগোপাল ভট্টাচার্য, নিত্যরঞ্জন সেন, নির্মল লালা, নির্মলকুমার সেন, পুলিনচন্দ্র ঘোষ, পূর্ণেন্দু দস্তিদার, প্রভাসচন্দ্র বল, প্রমোদরঞ্জন চৌধুরী, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, ফণিভূষণ নন্দী, বিনোদ বিহারী চৌধুরী, মতিলাল কানুনগো, মধুসূদন দত্ত, মনোরঞ্জন সেন, মহেন্দ্রলাল বড়ুয়া, মহেন্দ্রলাল বিশ্বাস, মহেশচন্দ্র বড়ুয়া, রজতকুমার সেন, রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী, রামকৃষ্ণ বিশ্বাস, রোহিণীকুমার কর, রোহিণীরঞ্জন বড়ুয়া, লালমোহন সেন, লোকনাথ বল, শশাঙ্কশেখর দত্ত, শৈলেশ্বর চক্রবর্তী, সুবোধ দে, সূর্য সেন, হরিগোপাল বল, হরিপদ মহাজন, হরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, হিমাংশুবিমল চক্রবর্তী।

অসহযোগ আন্দোলন

কাজেম আলী, যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত।

ভারত ছাড় আন্দোলন

মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, মাহবুব উল আলম চৌধুরী।

ভাষা আন্দোলন

আবুল কাসেম, মাহবুব উল আলম চৌধুরী।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ

বীর উত্তম খেতাব প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা

বেলায়েত হোসেন, মোজাহার উল্লাহ।

বীর বিক্রম খেতাব প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা

অলি আহমেদ, আবদুল করিম, আবদুল হক।

বীর প্রতীক খেতাব প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা

আবু তাহের মোহাম্মদ সালাহউদ্দীন, আহমেদ হোসেন, এম হারুন-অর-রশিদ, কবির আহম্মদ, তাজুল ইসলাম, দুদু মিয়া, মোজাম্মেল হক, মোহাম্মদ নূরুল হক, মোহাম্মেদ দিদারুল আলম, সিরাজুল হক, সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম।

ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব

সুফি সাধক

আলী রজা, নুরুচ্ছাফা নঈমী, বদর আউলিয়া, মোহছেন আউলিয়া, শাহ আমানত, সৈয়দ আহমদ উল্লাহ, সৈয়দ গোলামুর রহমান, সৈয়দ জিয়াউল হক, সৈয়দ দেলাওয়ার হোসাইন, সৈয়দ ফৌজুল আজিম, সৈয়দ মুহাম্মদ আজিজুল হক, সৈয়দ শফিউল বশর।

ইসলামী ব্যক্তিত্ব

আবদুর রহমান, আবুল কাসেম নূরী, ইদ্রিছ রেজভী, ওবাইদুল হক নঈমী, জালালুদ্দিন আল কাদেরী, জুনায়েদ বাবুনগরী, নুরুল ইসলাম হাশেমী, মুহাম্মদ আব্দুল মান্নান, মুহাম্মদ ফয়জুল্লাহ, শাহ আহমদ শফী, সৈয়দ মোহাম্মদ ছাইফুর রহমান নিজামী শাহ, সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ।

হিন্দু ধর্ম সংস্কারক

চিন্ময় কুমার ঘোষ।

বৌদ্ধ ধর্মীয় পণ্ডিত

বিশুদ্ধানন্দ মহাথের, বেণীমাধব বড়ুয়া, শুদ্ধানন্দ মহাথের।

রাজনীতিবিদ

অলি আহমেদ, আ জ ম নাছির উদ্দীন, আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, আফছারুল আমীন, আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী, আবুল কাসেম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আসহাব উদ্দীন আহমদ, এ বি এম আবুল কাসেম, এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, এ বি এম মহিউদ্দীন চৌধুরী, এম এ জিন্নাহ, এম এ মতিন, এম আবদুল লতিফ, এল কে সিদ্দিকী, ওবায়দুল হক খোন্দকার, ওয়াসিকা আয়শা খান, গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, জাকির হোসাইন, জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, জিয়া উদ্দীন আহমেদ বাবলু, ডাঃ আবুল কাসেম, দিদারুল আলম, দিলীপ বড়ুয়া, নজরুল ইসলাম চৌধুরী, ফজলুল কবির চৌধুরী, ফজলুল কাদের চৌধুরী, মইন উদ্দীন খান বাদল, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, মাহজাবীন মোরশেদ, মাহফুজুর রহমান মিতা, মুজফ্‌ফর আহ্‌মেদ, মুস্তাফিজুর রহমান, মুহাম্মদ আব্দুল মান্নান, মোরশেদ খান, মোশাররফ হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, মোহাম্মদ ইউসুফ, মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম, মোঃ কোরবান আলী, যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত, যাত্রামোহন সেন, রফিকুল আনোয়ার, শামসুল ইসলাম, শাহজাহান চৌধুরী, সাইফুজ্জামান চৌধুরী, সাবিহা নাহার বেগম, সামশুল হক চৌধুরী, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, সুলতান আহমেদ চৌধুরী, সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম, সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী, হাছান মাহমুদ।

পেশাজীবী

অর্থনীতিবিদ

মইনুল ইসলাম, মুহাম্মদ ইউনূস, হোসেন জিল্লুর রহমান।

আইনবিদ

মোহাম্মদ ফজলুল করীম।

কূটনীতিক

মুহম্মদ নূরুল ইসলাম।

চিকিৎসক

অন্নদাচরণ খাস্তগীর, নুরুল ইসলাম, যোবায়দা হান্নান, সায়েবা আখতার।

বিজ্ঞানী

জামাল নজরুল ইসলাম, মুহাম্মদ ইব্রাহিম, শুভ রায়।

ব্যবসায়ী

আবদুল বারী চৌধুরী, আবুল কাসেম খান, মির্জা আহমেদ ইস্পাহানি।

ভাস্কর

নভেরা আহমেদ।

শিক্ষাবিদ

অপূর্ব দত্ত, আবদুল করিম, আবুল কাশেম সন্দ্বীপ, আবুল কাসেম, কাজেম আলী, কামিনীকুমার ঘোষ, প্রণব কুমার বড়ুয়া, বিকিরণ প্রসাদ বড়ুয়া, বেণী মাধব দাস, মুহম্মদ এনামুল হক, মোহাম্মদ ফেরদাউস খান, সুকোমল বড়ুয়া।

সমাজ সংস্কারক

নূতন চন্দ্র সিংহ, যোবায়দা হান্নান।

সামরিক

সরওয়ার জাহান নিজাম।

সাংবাদিক

আবদুল খালেক, ওহীদুল আলম, মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, রাশেদ রউফ।

লেখক

গবেষণামূলক প্রবন্ধকার

অন্নদাচরণ খাস্তগীর, অপূর্ব দত্ত, আবুল কাসেম, আহমদ ছফা, নকুলেশ্বর দাশগুপ্ত।

ইতিহাসবিদ

আবদুল করিম, আবদুল হক চৌধুরী, আহমদ শরীফ।

সাহিত্যিক

আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ, আবুল ফজল, আশুতোষ চৌধুরী, আসহাব উদ্দীন আহমদ, ওহীদুল আলম, ফরিদা হোসেন, মাহবুব-উল আলম, মুহম্মদ এনামুল হক, রমা চৌধুরী, সুব্রত বড়ুয়া।

ঔপন্যাসিক

আহমদ ছফা, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, হরিশংকর জলদাস।

কবি

আবদুল গফুর হালী, আবদুল হাকিম, আবুল কাসেম, আলাওল, আলী রজা, আশুতোষ চৌধুরী, আস্কর আলী পণ্ডিত, আহমদ ছফা, এম এন আখতার, ওহীদুল আলম, কবীন্দ্র পরমেশ্বর, কাজি হাসমত আলী, কোরেশী মাগন ঠাকুর, দৌলত উজির বাহরাম খান, দৌলত কাজী, নওয়াজিশ খান, নবীনচন্দ্র সেন, নসরুল্লাহ খাঁ, বিমল গুহ, মাহবুব উল আলম চৌধুরী, মুহম্মদ কবির, মুহম্মদ মুকিম, রমেশ শীল, রহিমুন্নিসা, রাশেদ রউফ, শাহ মুহম্মদ সগীর, শ্রীকর নন্দী, সাবিরিদ খান, সুকুমার বড়ুয়া, হামিদ আলী।

বিনোদনদাতা

চলচ্চিত্র পরিচালক

কাজী মোরশেদ, পিপলু খান।

অভিনয়শিল্পী

অপর্ণা ঘোষ, আদিল হোসেন নোবেল, ইমতু রাতিশ, কবরী সারোয়ার, চিত্রলেখা গুহ, নুসরাত ফারিয়া মাজহার, পার্থ বড়ুয়া, পূর্ণিমা, মেহজাবিন চৌধুরী, শাবানা, সারিকা সাবরিন।

মঞ্চ অভিনেতা

অমলেন্দু বিশ্বাস।

নৃত্যশিল্পী

বুলবুল চৌধুরী।

সঙ্গীতজ্ঞ

সঙ্গীত পরিচালক

ইমন সাহা, সত্য সাহা।

সঙ্গীতশিল্পী

আইয়ুব বাচ্চু, আবদুল গফুর হালী, উমা খান, এম এন আখতার, কুমার বিশ্বজিৎ, তপন চৌধুরী, নকীব খান, পার্থ বড়ুয়া, প্রবাল চৌধুরী, ফণী বড়ুয়া, মিনার রহমান, মিলা ইসলাম, মিহির কুমার নন্দী, মোহাম্মদ নাসির, রবি চৌধুরী, শেফালী ঘোষ, শ্যামসুন্দর বৈষ্ণব।

যন্ত্র সঙ্গীতশিল্পী

বিনয় বাঁশী জলদাস।

ক্রীড়াবিদ

ক্রিকেটার

আকরাম খান, আফতাব আহমেদ, ইরফান শুক্কুর, তামিম ইকবাল, নাজিমউদ্দিন, নাফিস ইকবাল, নূরুল আবেদীন নোবেল, মিনহাজুল আবেদীন নান্নু।

ফুটবলার

নাসিরউদ্দিন চৌধুরী, মামুনুল ইসলাম, সাখাওয়াত হোসেন রনি।

 

 

 

আরও জানতে পড়তে পারেন: সাতক্ষীরা জেলার ইতিহাস ও পরিচিতি

তথ্যসূত্রঃ চট্টগ্রাম জেলা তথ্য বাতায়ন, উইকিপিডিয়া

Leave a Reply

%d bloggers like this: