লাইফ স্টাইল ও টিপস

হস্তমৈথুন নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারণা

হস্তমৈথুন নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারণাহস্তমৈথুন নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারণাল ধারণা

হস্তমৈথুন নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারণা

আমাদের কী জানতে হবে-
আমাদের মাঝে হস্তমৈথুনকে কেন্দ্র করে অনেক ধরনের ভুল ধারণা এবং লোকমুখে প্রচলিত ধারণা রয়েছে।এই ভুল ধারণা গুলোকে চর্চা করতে করতে মানুষ ভেবেই নিয়েছে হস্তমৈথুনের সাথে নিজের চুল পড়া থেকে শুরু করে অন্ধত্ব পর্যন্ত এটার সাথে সম্পর্কযুক্ত। তাই মোটা দাগে একটা কথা খুব ভালো করে জেনে রাখা প্রয়োজন , তা হলো এই ভুল ধারণা এবং লোকমুখে প্রচলিত ধারণা গুলোর কোনো ধরনের বৈজ্ঞানিক প্রেক্ষাপট নাই। এটা সত্য যে হস্তমৈথুনের ফলে কিছু ঝুঁকি রয়েছে কিন্তু সার্বিকভাবে এটার সাথে কোনো ক্ষতিকর প্রভাবের কিছুই নেই।
বরঞ্চ এর বিপরীতে যে সত্য লুকিয়ে আছে তা হলো- হস্তমৈথুনের ফলে কিছু নির্ধারিত সংখ্যক শারীরিক এবং মানসিক সুবিধা রয়েছে।আপনি নিজের মানসিক চাপমুক্ত হতে পারেন,মনকে প্রফুল্ল করতে পারেন এবং ভালো লাগার অনুভুতিকে মুক্ত করতে পারেন। এটি অবশ্যই নিজের শরীর এবং নিজেকে ভালোবাসার সবচে নিরাপদ মাধ্যম।
১)হস্তমৈথুনের ফলে কি চুল পড়ে যায়?
অকালে চুল পড়ে যাওয়ার ঘটনা প্রাথমিকভাবেই জেনেটিক কারণেই ঘটে থাকে,হস্থমৈথুনের ফলে নয়। গড় অবস্থা বিবেচনায় আমেরিকান চর্মরোগবিশেষজ্ঞদের মতে ,অধিকাংশ মানুষেরই প্রতিদিন ৫০ থেকে ১০০টি চুল পড়ে যায়, এবং সার্বিকভাবে নতুন চুল আবারও ওঠে। এটি কিন্তু প্রাকৃতিকভাবে চুল বৃদ্ধি হওয়ার একটি স্বাভাবিক পর্যায়।
যদি কোনো ভাবে এই পর্যায়ে কোনো গন্ডগোল দেখা দেয় অথবা আমাদের মাথার ত্বকে ক্ষুদ্র পকেট ধরনের ছিদ্র গুলো ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু দ্বারা আক্রান্ত হয়ে যায় , তাহলে এটি চুল পড়ার প্রধান কারণ হতে পারে নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই।
প্রায়শই,আমাদের জেনেটিক বৈশিষ্ট্য চুলের এমন পড়ে যাওয়ার জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। এই বংশগত অবস্থাকে বলা হয় ছেলেদের টাক বা মেয়েদের টাক। পুরুষের ক্ষেত্রে এই বৈশিষ্ট্য খুব অল্প বয়সেও দেখা দিতে পারে,বিশেষ করে বয়ঃসন্ধিকালীনে।
এছাড়াও অন্যান্য যে কারণগুলো চুল পড়ে যাওয়ার জন্য দায়ীঃ
  • হরমোনের পরিবর্তন
  • মাথার ত্বকের বিভিন্ন সংক্রমণ ঘটলে
  • ত্বকের বিভিন্ন ব্যাধি দেখা দিলে
  • অতিরিক্ত চুল টানা টানি করলে
  • অতিরিক্ত চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিজনিত রাসায়নিক নিলে
  • নির্দিষ্ট ঔষধ সেবন করলে
  • ্যাডিয়েশন থেরাপি নিলে
২) হস্তমৈথুন কি অন্ধত্ব ঘটায়?
না।এটা খুবই সাধারণ একটা ভুল ধারণা যে অন্ধ হস্তমৈথুনের ফলে অন্ধ হয়ে যায়, কিন্তু এটার কোনো ধরনের বৈজ্ঞানিক যুক্তি নেই,গবেষণাও নেই।
চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যাওয়ার উপযুক্ত যে কারণগুলো রয়েছে তা হলো-
  • জেনেটিক বৈশিষ্ট্য
  • চোখে ছানি পড়া বা কেটার্যাক্ট(কেটার্যাক্ট এর ফলে চোখের লেন্স এর পরিবর্তন ঘটে,যার ফলে আবছা আবছা দেখা যায়)
  • গ্লুকোমা(এর ফলে চোখের নার্ভ গুলোতে ক্ষতি হয়)
  • চোখে আঘাতজনিত কারণে
  • নির্দিষ্ট কিছু স্বাস্থ্য পরিস্থিতির কারণেও ঘটে,যেমনঃডায়াবেটিস
৩)হস্তমৈথুন কি যৌন অক্ষমতার জন্য দায়ী?
কোনো গবেষণায় এমনটা পাওয়া যায়নি যেখানে হস্তমৈথুনের ফলে যৌন অক্ষমতাকে দায়ী করা হয়েছে। তাহলে যৌন অক্ষমতা কিসের জন্য ঘটে? এটার ব্যাপারে অসংখ্য শারীরিক এবং মানসিক ফ্যাক্টর জড়িত,যেগুলো কোনোভাবেই হস্তমৈথুনের সাথে জড়িত না।
সেই ফ্যাক্টর গুলো কী কী-
  • অন্তরঙ্গ অবস্থার জন্য সঙ্গীর সাথে সমস্যা
  • মানসিক চাপ বা উদ্বেগ
  • দুশ্চিন্তা
  • অতিরিক্ত পরিমাণ ড্রিংকস করলে বা ধূমপান করলে
  • উচ্চ বা নিম্নরক্ত চাপ থাকলে
  • উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরোল থাকলে
  • স্থূল হলে বা ডায়াবেটিস থাকলে
  • হৃদরোগে আক্তান্ত্র থাকলে
৪) হস্তমৈথুনে ফলে কি যৌনাঙ্গে ক্ষতি হবে?
না। হস্তমৈথুনের ফলে আপনার যৌনাঙ্গে কোনো ধরনের ক্ষতি হবে না। যদি আপনার হস্তমৈথুনের ক্ষেত্রে যথেষ্ঠ তারল্য অবস্থা না থাকে তাহলে আপনার অবশ্যই মর্দন এবং কোমলভাবে মানিয়ে নেওয়া অভিজ্ঞতা আছেই।
৫) হস্থমৈথুন কি সন্তান উৎপাদনের প্রভাব ফেলবে?
এমনটি হওয়া সত্যিই অসম্ভব।প্রতিদিনও যদি বীর্যপাত হয়ে থাকে তারপরেও শুক্রানুর অবস্থা একই পরিমাণেই থাকে।
পুরুষের উর্বরতা প্রভাবিত হতে পারে যে যে কারণে-
  • নির্দিষ্ট কিছু চিকিৎসার শর্ত সাপেক্ষে, যেমন- আনডিসেন্ডেড টেসটিক্যাল।( যদি কারও ক্ষেত্রে ভাস ডিফারেন্সিয়ার শুরু দিকে অর্থাৎ পেটের ভেতরের দিকে টেসটিস্ট থাকে-তখন এই পেটের ভিতরের টেসটিস্ট কেই বলা হয় আনডিসেন্ডেড টেসটিক্যাল)
  • শুক্রানু নির্গত হওয়ার মধ্যে কোনো সমস্যা থাকলে
  • ্যাডিয়েশন বা কেমোথেরাপী নিলে
  • পরিবেশগত বিভিন্ন উপাদান এবং রাসায়নিক উপাদানের প্রভাব ঘটলে
নারীদের উর্বরতা প্রভাবিত হতে পারে যে যে কারণে-
  • নির্দিষ্ট কিছু চিকিৎসার শর্ত সাপেক্ষে হতে পারে,যেমনঃ এন্ডোমেট্রিওসিস
  • অকালে মেনোপোজ ঘটলে
  • ্যাডিয়েশন বা কেমোথেরাপী নিলে
  • পরিবেশগত বিভিন্ন উপাদান এবং রাসায়নিক উপাদানের প্রভাব ঘটলে
৬)হস্তমৈথুন কি মানসিক স্বাস্থ্যের উপরে প্রভাব ফেলে?
না, বরঞ্চ,গবেষণায় এটা পাওয়া গেছে যে,হস্তমৈথুন প্রকৃতপক্ষে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধন করায়।যখন ভালো লাগার অনুভুতি কাজ করে তখন নিজের মধ্যে
  • স্বাচ্ছন্দ্যে চাপ মুক্ত হওয়া যায়
  • নিজের মেজাজকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়
  • বিশ্রাম নিতে সাহায্য করে
  • ভালো ঘুমের জন্য সহায়তা পাওয়া যায়
৭)হস্তমৈথুন কি যৌন সক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়?
অধিকাংশ মানুষই বিশ্বাস করে যে হস্তমৈথুন তাদের যৌন সক্ষমতাকে দমিয়ে দেয়,কিন্তু এটি বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত নয়।যৌন সক্ষমতা person to person অর্থাৎ ব্যাক্তি থেকে ব্যাক্তির মধ্যে ভিন্নতা বহন করে এবং কামপ্রবৃত্তি প্রাকৃতিক ব্যাপার তাই এটা কম বেশি হওয়া ব্যাপারও ব্যাক্তি ক্ষেত্রেই নির্ভরশীল।
হস্তমৈথুন এর ফলে আপনার চাহিদার কম পরিমাণ যৌন অবস্থা দিতে সক্ষম,এটাও সঠিক নয়।প্রকৃতপক্ষে এটা সত্য যে, হস্তমৈথুন আপনাকে আরো বেশি কামপ্রবণ করে দেয় ,এমনকি আপনি যদি কম যৌনক্ষমও হয়ে থাকেন।
তাহলে কম কামপ্রবণ হওয়ার কারণগুলো কী কী-এটার জন্য অনেক অনেক কারণ রয়েছে ,তবে
  • স্বল্প টেস্টোস্টেরন হরমোন থাকলে
  • দুশ্চিতা ও চাপের মধ্যে থাকলে
  • ঘুমের ব্যঘ্যাতজনিত কারণেও,যেমনঃঘুমের মধ্যে হঠাৎ শ্বাস-প্রশ্বাস আটকে যাওয়ার মতো লক্ষণ থাকলে
  • নির্দিষ্ট ওষধের ফলেও
৮) অধিক পরিমাণে হস্তমৈথুন করা কি সম্ভব?
হতে পারে। যদি আপনি নিজে নিশ্চিত না হয়ে থাকেন যে বেশি মাত্রায় হস্তমৈথুন হচ্ছে কিনা, তাহলে নিচের প্রশ্ন গুলো নিজের মধ্যে ভেবে দেখুন-
  • হস্তমৈথুনের ফলে আপনি কি প্রতিদিনের কর্মকান্ড বা কাজ উপেক্ষা করে যাচ্ছেন ?
  • হস্তমৈথুনের ফলে আপনি কি নিজের আবশ্যিক কাজ এবং স্কুল কলেজ এগুলোতেও অনিয়মিত হয়ে যাচ্ছেন?
  • হস্তমৈথুনের ফলে আপনি কি আপনার বন্ধুদের সাথে কিংবা পরিবারের সাথে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডকে বাদ দিয়ে দিচ্ছেন?
  • হস্তমৈথুনের ফলে আপনি কি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক কর্মকান্ডগুলোকেও উপেক্ষা করে যাচ্ছেন?
যদি এগুলোর কোনো একটি প্রশ্নের উত্তরও হ্যাঁ হয়, তাহলে এটা নিশ্চিত যে আপনি খুবই বেশি সময় পার করছেন হস্তমৈথুনের ব্যাপারে। যদিও হস্তমৈথুন খুবই স্বাভাবিক এবং স্বাস্থ্যকর,কিন্তু অতিরিক্ত হস্তমৈথুনের ফলে দৈনন্দিন কাজ,স্কুল,কলেজে যাওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন কাজ এবং বিভিন্ন জনের সাথে সম্পর্কের মধ্যেও খারাপ প্রভাব ফেলে।
যদি আপনি দেখেন যে অতিরিক্ত হস্তমৈথুন করছেন,তাহলে ডাক্তারের সাথে কথা বলে পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
৯)হস্তমৈথুনের ফলে কি সঙ্গীর যৌন জীবনে ধ্বংসাত্মক প্রভাব পড়ে?
না। বরঞ্চ এটা তার বিপরীত।হস্তমৈথুন মূলত সঙ্গীর সাথে যৌন সম্পর্কের মধ্যে উন্নতি এনে দেয়। পারস্পারিক হস্তমৈথুনের গ্রহনযোগ্যতার ফলে দম্পতিরা তাদের নিজেদের বিভিন্ন ইচ্ছাকে বিকাশ করতে পারেন।
হস্তমৈথুনের ফলে নিজেরা যে আনন্দ উপভোগ করে এর দ্বারা দম্পতির মধ্যে প্রেগনেন্সিকে উপেক্ষা করা থেকে যৌন সম্পর্কিত বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ থেকেও রক্ষা করে।
পরিশেষে, হস্তমৈথুন নিরাপদ,প্রাকৃতিক এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস। এটি স্বাভাবিকভাবেই একটা উত্তম পন্থা যা আপনার নিজের চাওয়ার এবং প্রয়োজনের একটা অংশ। কেন হস্তমৈথুন করবেন এবং কোন উপায়ে করবেন এটা সম্পূর্ণ আপনার ব্যাক্তিগত সিদ্ধান্ত। এটার কোনো খারাপ বা ভালো পন্থা নেই। যদিনা আপনি আপনার হস্তমৈথুনের সিদ্ধান্তকে লজ্জা বা অপরাধ হিসেবে নেন।
তাই,এটা মনে রাখা জরুরি,হস্তমৈথুন ক্ষতিকর প্রভাব ঘটায় না।যদি আপনার অভিজ্ঞতার দিক থেকে এই ব্যাপারে এমন কিছু অস্বাভাবিক লক্ষণ বা অনুভুতি পেয়ে থাকেন যে আপনি অধিক মাত্রায় হস্তমৈথুন করছেন,তাহলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া জরুরী।
ভাবানুবাদে-আসাদুজ্জামান চৌধুরী; জৈবচিকিৎসা প্রকৌশল বিষয়ে অধ্যয়নরত।

Leave a Reply

%d bloggers like this: