প্রযুক্তিস্বাস্থ্য

ভ্যাকসিন বা টিকা কী ও কীভাবে কাজ করে? জানা-অজানা বিস্তারিত

টিকা বা ভ্যাকসিন কী ও কীভাবে কাজ করে?টিকা বা ভ্যাকসিন কী ও কীভাবে কাজ করে?

ভ্যাকসিন (Vaccine) বা টিকা

আধুনিক বিশ্বে চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক বিষ্ময়কর আবিষ্কার । টিকা বা ভ্যাকসিন আমাদের শরীরের প্রাকৃতিক রোগ-প্রতিরোধ (immune system) ব্যবস্থার সাথে একযোগে কাজ করে অনেক ভয়ঙ্কর ও প্রাণঘাতী রোগ-সংক্রমণের বিরুদ্ধে কার্যকরী প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে আমাদেরকে সয়হাতা করে চলেছে।

ভ্যাকসিন বা টিকা কী?

টিকা বা প্রতিষেধক বা ভ্যাকসিন (Vaccine) হল এক ধরনের রাসায়নিক যৌগ বা মিশ্রণ, যা দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি করার মাধ্যমে দেহে কোন একটি রোগের জন্য প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি (Immunity) বাড়াতে সাহায্য করে। কোনো প্রাণীর দেহে রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাস (Virus), ব্যাক্টেরিয়া (Bacteria) ইত্যাদির জীবিত (যার রোগ সৃষ্টিকারী ক্ষমতা কার্যত শূন্য) বা মৃতদেহ বা কোনো অংশবিশেষ হতে প্রস্তুতকৃত ঔষধ যা ঐ প্রাণীর দেহে ঐ ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি সৃষ্টি করে।

কোনো রোগের টিকা হল কেবলমাত্র সেই নির্দিষ্ট রোগটিরই বিরুদ্ধে প্রতিরোধক্ষমতা বর্ধনকারী ক্রিয়া সম্পন্ন জৈব উপাচার যা ত্বকে সূচ ফুটিয়ে দেওয়া হতে পারে বা অন্য উপায়ে যেমন: খাবার ড্রপ (যেমন মুখে সেব্য পোলিও টিকা বা ওরাল পোলিও ভ্যাকসিন) হিসেবে দেওয়া হতে পারে। এতে সাধারণত মৃতপ্রায় বা মৃত জীবাণু অথবা তার বিষ থেকে তৈরি হওয়া রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু-সদৃশ উপাদান থাকে। এটি উক্ত উপাদানটিকে বহিরাগত হিসেবে শনাক্ত করতে, সেটিকে ধবংস করতে এবং স্মৃতিতে রাখতে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে বা ইমিউন সিস্টেমকে (Immune System) উদ্দীপিত করে, যাতে পরবর্তীতে ইমিউন সিস্টেম ঐ সমস্ত জীবাণুকে খুব সহজে পরবর্তী অনুপ্রবেশে শনাক্ত ও ধ্বংস করতে পারে।

পৃথিবীজুড়ে গুটি বসন্ত (small pox) রোগ সম্পূর্ণ নির্মূল এবং পোলিও (Poleomyelitis), হাম (Measles) বা ধনুষ্টংকার (Tetanus)-এর মত রোগের প্রায় নির্মূলকরণ সম্ভব হয়েছে ভ্যাকসিনেশন (Vaccination) বা টিকা প্রদানের মাধ্যমে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে ২৫ টি রোগ আছে যাদেরকে ভ্যাকসিনের মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব।

ভ্যাকসিন আবিষ্কারের ইতিহাস

খ্রিস্টপূর্ব ৪২৯ সালে গ্রিক ইতিহাসবিদ থুসিডিডেস (Thucydides) লক্ষ্য করেন যে, এথেন্স শহরে যেসব রোগী স্মলপক্স এ আক্রান্ত হবার পর বেঁচে যাচ্ছে তাদের পুনরায় আর এই রোগটি হচ্ছে না। পরবর্তীতে চীনারা সর্বপ্রথম ১০ম শতাব্দীর শুরুতে ভ্যাকসিনেশন এর আদিরূপ ভ্যারিওলেশন (Variolation) আবিষ্কার করে। এই প্রক্রিয়ায় স্মলপক্স রোগে আক্রান্তদের দেহের পাঁচড়া (Scrab) হতে টিস্যু নিয়ে সুস্থ মানুষদেরকে এর সংস্পর্শে আনা হত। ধীরে ধীরে তুরস্ক এবং ইংল্যান্ডেও ভ্যারিওলেশন বিস্তার লাভ করে।

১৭৯৬ সালে বৃটিশ চিকিৎসক ডাঃ এডওয়ার্ড জেনার (Edward Jener) আধুনিক ভ্যাকসিনেশন আবিষ্কার করেন, এজন্যে তাঁকে “ফাদার অব ইমিউনোলোজি” বলা হয়। শিক্ষানবীশকালে জেনার লক্ষ্য করেন যে, গ্রাম্য এলাকায় গোয়ালাদের গুটি বসন্ত (small pox) হয় না কারণ ইতোমধ্যেই তারা কাউপক্স (cow pox) এ আক্রান্ত হয়ে আছে। ১৭৯৬ সালে তিনি এক গোয়ালিনীর হাত হতে পুঁজ নিয়ে জেমস ফিলিপ নামে ৮ বছরের একটি সুস্থ বালকের বাহুতে আঁচড়ে দেন এবং ৬ সপ্তাহ পর তার শরীরে স্মলপক্স এর জীবাণু প্রবেশ করান। সৌভাগ্যবশত বাচ্চাটির স্মলপক্স হলনা। একটু মৃদু বসন্ত উপসর্গের পর সে আবার সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে এবং সে গুটি বসন্তের আক্রমণ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়। জেনার আরো গবেষণা করতে থাকেন এবং ১৭৯৮ সালে তিনি ঘোষণা করেন যে স্মলপক্স ভ্যাকসিন বাচ্চা-ছেলে-বুড়ো সবার জন্য নিরাপদ। বিশ্ব এই প্রথম ভ্যাকসিন শব্দটার সাথে পরিচিত হলো। ‘ভ্যাকসিন’ শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ ‘ভ্যাক্সা’ (Cow) থেকে যার অর্থ গরু।

পরবর্তীতে ১৮৮০ সালে লুই পাস্তুর জলাতঙ্কের (Rabies) ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেন এবং ভ্যাকসিন জগতে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসেন। সময়ের সাথে সাথে বিজ্ঞানীরা যখন বিভিন্ন রোগের কার্যকারণ আবিষ্কার করতে থাকেন তখন ভ্যাকসিন তৈরির পথও সুগম হয়ে যায়। জার্মান বিজ্ঞানী এমিল ভন বেহরিং (Emil Von Behring) ডিপথেরিয়া (Diphtheria) চিকিৎসায় ব্যবহৃত সিরাম থেরাপি (Serum therapy) আবিষ্কারের জন্য ১৯০১ সালে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানে তিনিই প্রথম নোবেল পুরস্কার পান। জাপানী চিকিৎসক শিবাসাবুরো কিতাসাতো (Kitasato Shibasaburo) ডিপথেরিয়া এবং ধনুষ্টংকারের টিকা আবিষ্কার করেন।

১৯২০ সালের শেষদিকে ডিপথেরিয়া, ধনুষ্টংকার এবং যক্ষ্মার ভ্যাকসিন সহজলভ্য হয়ে যায়। পুরো পৃথিবীজুড়ে ভ্যাকসিনেশন বা টিকাদান কর্মসূচী ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৫৫ সালে ইংল্যান্ডে প্রথম পোলিও ভ্যাকসিনেশন কর্মসূচি জাদুকরী ফল দেয়। ১৯৫৬ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা (World Health Organization) স্মলপক্স নির্মূলের জন্য বিশ্বব্যপী ভ্যাকসিনেশন কর্মসূচির উদ্যোগ নেয়। অস্ট্রেলিয়ান বিজ্ঞানী ফ্রাঙ্ক ফেনার (Frank Fenner) এই প্রকল্পের প্রধান ছিলেন। ১৯৮০ সালে সমগ্র পৃথিবীকে স্মলপক্স মুক্ত হিসেবে ঘোষণা করা হয়, যেটা চিকিৎসাবিজ্ঞানে এযাবৎকালের সেরা অর্জন বলে বিবেচিত। প্রফেসর হ্যারল্ড জার হাউজেন (Harald zur Hausen) প্রমাণ করেন যে, একটিমাত্র ভাইরাস জরায়ুর ক্যান্সারের জন্য দায়ী এবং এর বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন প্রস্তুত করা সম্ভব। পরবর্তীতে ইয়ান ফ্রেজার (Ian Frazer)ও জিয়ান ঝোঊ (Jian Zhou) এই ভ্যাকসিন তৈরি করেন (HPV Vaccine) যা এখনো পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ নারীর জীবন বাঁচাতে সাহায্য করে যাচ্ছে।

অ্যান্টিবায়োটিক ও ভ্যাকসিনের মধ্যে পার্থক্য:

• অ্যান্টিবায়োটিক সাধারণত শরীর জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হবার পর সেগুলোকে মেরে ফেলতে ব্যবহৃত হয়, অন্যদিকে ভ্যাকসিন জীবাণুর ভবিষ্যৎ আক্রমণের বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে।
• অ্যান্টিবায়োটিক সাধারণত ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করে অপরদিকে ভ্যাকসিন সাধারণত বিভিন্ন ধরনের ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করে।
অ্যান্টিবায়োটিক প্রচণ্ড সংক্রমণ প্রতিকারে কাজ করে আর ভ্যাকসিন সংক্রমণ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে ।
• ভ্যাকসিন বা টিকা সাধারণত একবারই নেয়া হয় যার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদী হয় আর অ্যান্টিবায়োটিক রোগাক্রান্ত হবার পর তা মেরে ফেলার সময় কার্যকর থাকে।

আমাদের শরীরের প্রাকৃতিক রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থা কীভাবে কাজ করে?

টিকার কার্যপদ্ধতি বোঝার জন্য আমাদেরকে আগে জানতে হবে কীভাবে আমাদের শরীর বিভিন্ন অসুখের বিরুদ্ধে লড়াই করে। যখন কোনো জীবাণু যেমন ব্যাকটেরিয়া অথবা ভাইরাস আমাদের শরীরে প্রবেশ করে, তখন সেই জীবাণু আমাদের দেহের স্বাভাবিক কার্যক্রমের উপর আক্রমণ চালায় এবং একই সাথে নিজেদের সংখ্যাবৃদ্ধি করে যেতে থাকে। এই ধরনের বহিরাক্রমণের ঘটনাকে বলা হয় সংক্রমণ (infection) এবং এই সংক্রমণ আমাদের দেহে বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতার জন্য অনেকাংশেই দায়ী। এই ধরনের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য আমাদের দেহে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থা।

যেমন: আমাদের রক্তের শ্বেত রক্তকণিকা (leukocyte) আমাদের দেহের রক্ষক হিসেবে কাজ করে এবং বিভিন্ন ধরনের রোগ-সংক্রমণ দমনের জন্য তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। শ্বেত কণিকা রয়েছে মূলত তিন ধরনের- বি লিম্ফোসাইট (B-lymphocytes), টি লিম্ফোসাইট (T-lymphocytes) ও ম্যাক্রোফেজ (macrophages). এদের কাজ সম্পর্কে নিচে কিছু সংক্ষিপ্ত তথ্য দেয়া হল—

১. ম্যাক্রোফেজ: ম্যাক্রোফেজ আমাদের দেহের মৃত বা মৃতপ্রায় কোষ গুলো ভক্ষণের পাশাপাশি রক্তে অনুপ্রবেশকারী বিভিন্ন জীবাণুদেরকেও ধ্বংস করে এবং রক্তে অ্যান্টিজেন (antigen) নামক সেইসব বহিরাগত জীবাণুর কিছু অংশ রেখে যায়। আমাদের শরীর তখন সেইসব অ্যান্টিজেন গুলোকে ক্ষতিকর ও বিপজ্জনক বস্তু হিসেবে শনাক্ত করে এবং এর প্রতিরোধে আক্রমণের জন্য উদ্দীপনা যোগায়।

২. বি লিম্ফোসাইট: বি লিম্ফোসাইট থেকে উৎপন্ন হয় অ্যান্টিবডি (antibody) এবং এই অ্যান্টিবডি ম্যাক্রোফেজের ফেলে রেখে যাওয়া অ্যান্টিজেনের উপর আক্রমণ চালায়।

৩. টি লিম্ফোসাইট: টি লিম্ফোসাইট দেহের সংক্রমিত কোষ গুলোর উপর আক্রমণ চালায় সেগুলোকে ধ্বংস করে।
শরীর যখন প্রথমবারের মত কোনো নতুন জীবাণুর সম্মুখীন হয় তখন সেই সংক্রমণের বিরুদ্ধে স্বাভাবিক কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে কয়েকদিন থেকে সপ্তাহ পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। অতঃপর সংক্রমণের পর সেই জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ প্রক্রিয়া আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থা বা ইমিউন সিস্টেম সংরক্ষণ করে। পরবর্তীতে সেই জীবাণুটি যদি আবারও শরীরে অনুপ্রবেশ করে তবে টি লিম্ফোসাইট সাথে সাথে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং রক্তে আবারও একই ধরনের অ্যান্টিজেন উপস্থিত হলে বি লিম্ফোসাইট তার প্রতিরোধে কার্যকরী অ্যান্টিবডি তৈরি ও অবমুক্ত করে।

ভ্যাকসিন কীভাবে কাজ করে?

জীবাণু থেকেই তার দ্বারা সৃষ্ট রোগের ভ্যাকসিন প্রস্তুত করা হয়। যেকোন জীবাণুর আছে দুইটি বৈশিষ্ট্য- একটি হল রোগ সৃষ্টি করা (Pathogenecity)। অন্যটি দেহের অভ্যন্তরে ঐ একই রোগের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য কিছু পদার্থ (Antibody) তৈরি করা। টিকা তৈরির সময় রোগ সৃষ্টির ক্ষমতাটিকে নষ্ট করে দেয়া হয়। কিন্তু অন্য বৈশিষ্ট্যটি ঠিক রাখা হয়। সোজা কথায় রোগ সৃষ্টির ক্ষমতাহীন জীবাণুকেই ভ্যাকসিন হিসেবে দেহে প্রবেশ করানো হয়। ফলশ্রুতিতে এই জীবাণু দেহে রোগের কারণ হয় না, উল্টো রোগটি যেন না হয় তার জন্য বিশেষ পদার্থ (Antibody) তৈরি করতে থাকে। আরেকটি সুবিধা হল এই জীবাণুগুলো মেমরি সেল গঠন করে ফলে পরবর্তীতে একই জীবাণু পুনরায় প্রবেশ করলে তা সহজে শনাক্ত করতে পারে। এভাবে ভ্যাকসিন শরীরের ইমিউনিটি-কে বাড়িয়ে দেয়। ইঞ্জেকশন বা মুখে খাওয়ার মাধ্যমে ভ্যাকসিন দেয়া যায়।

আমাদের দেহে সৃষ্ট এই রোগ-প্রতিরোধী গুণটি কিন্তু দু’ভাবে অর্জিত হয়। যার একটি হলোঃ- প্রত্যক্ষ বা সক্রিয়। যেমনঃ একবার যদি ভ্যাকসিনের মাধ্যমে দেহের রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে অণুজীবটিকে চিনিয়ে দেয়া হয় তবে, পরবর্তীতে এ অণুজীব দেহে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই সংবেদনশীল বি-লিম্ফোসাইট (B-lymphocytes) যা অ্যান্টিবডি উৎপন্ন করে, তাকে চিনতে পারে এবং আক্রমণ করে।

আরেকটি হলোঃ- পরোক্ষ বা নিষ্ক্রিয়। এখানে, কোন আক্রান্ত ব্যাক্তি বা প্রাণীর সুস্থ হবার পর তার দেহ থেকে উৎপন্ন অ্যান্টিবডি কিংবা শ্বেত-রক্তকণিকা (লিম্ফোসাইট) সংগ্রহ করা হয় এবং পরে অন্য আক্রান্ত ব্যক্তিতে সঞ্চারিত করা হয় (ইঞ্জেকশন কিংবা খাবারের মাধ্যমে)। তবে, দ্বিতীয় প্রক্রিয়াটির মাধ্যমে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জিত হলেও এটি কিন্তু ভ্যাকসিনেশন নয়। কেননা, এটি আক্রান্ত হবার পরে দেহে সঞ্চারিত করা হয়৷ দ্বিতীয় এ পদ্ধতি, সর্বপ্রথম আবিষ্কার করেছিলেন এমিল ভন বেরিং এবং সিবাসাবুরা কিতাসাতো ১৮৯০ সালের দিকে ধনুষ্টংকার রোগের বিরুদ্ধে।

অনেক সময় একটি ভ্যাকসিনের ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এর সাথে আরেকটি ভ্যাকসিন যোগ করা হয়। একে অ্যাডজুভেন্ট (Adjuvant) বলে। যেমন অ্যানথ্রাক্স ভ্যাকসিনের সাথে পারটুসিস টিকা যোগ করলে অ্যানথ্রাক্সের কাজ করার গতি বৃদ্ধি পায়। আবার ভ্যাকসিন যাতে দূষিত না হয় এজন্য অনেক সময় এর সাথে প্রিজারভেটিভ (Preservative) মেশানো হয়।

টিকার প্রয়োগ দেহে এক ধরনের নকল সংক্রমণের সৃষ্টি করে এবং এ প্রক্রিয়ায় আমাদের শরীরের রোগ-প্রতিরোধক ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হয়। এ ধরনের সংক্রমণ দেহে কোনো ধরনের অসুস্থতার সৃষ্টি না করলেও এটি দেহে টি লিম্ফোসাইট ও অ্যান্টিবডি তৈরিতে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তথাপি টিকা প্রয়োগের পর শরীরে কিছু ছোটখাটো রোগের উপসর্গ দেখা যায় যেমন: হালকা জ্বর বা শরীরে ব্যাথা অনুভব হতে পারে। কিন্তু এগুলো অস্বাভাবিক কিছু নয় বরং টিকা প্রয়োগের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া।

নকল সংক্রমণের তীব্রতা কমে গেলে শরীরে থেকে যায় টি লিম্ফোসাইট (T-lymphocytes) ও বি-লিম্ফোসাইট (B-lymphocytes) মনে রাখে যে, ওই জীবাণুর বিরুদ্ধে পরবর্তীতে কীভাবে লড়াই করতে হবে। টিকা দেবার পর শরীরে পর্যাপ্ত টি লিম্ফোসাইট ও বি লিম্ফোসাইট তৈরি হতে কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। এর পরই শরীর সেই জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরির জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হয়।

টিকা দেওয়া হলে দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থা সাধারণ জীবাণু সংক্রমণের মতোই কাজ করে অর্থাৎ —
• টিকার জীবাণুকে বিদেশি বস্তু বা অ্যান্টিজেন হিসেবে চিহ্নিত করে।
• সত্যিকারের জীবাণু প্রবেশ করলে যেমন অ্যান্টিবডি তৈরি করে টিকার ক্ষেত্রেও সেই একই ভাবে অ্যান্টিবডি তৈরি করে।
• জীবাণুগুলিকে কীভাবে ধ্বংস করতে হয় তা মনে রাখে। ফলে ভবিষ্যতে যখন সত্যি সত্যি সংক্রমণ ঘটে তখন দেহের রোগ

প্রতিরোধ ব্যবস্থা খুব দ্রুত অ্যান্টিবডি তৈরি করে জীবাণুগুলিকে ধ্বংস করে ফেলে ও শরীর সুস্থ থাকে। এই ভাবেই টিকার মাধ্যমে দেহের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি পায়।

ভ্যাকসিনের মাধ্যমে কী কী রোগ প্রতিরোধ সম্ভব?

বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা ২৫ টি রোগের তালিকা করেছে যেগুলোকে ভ্যাকসিনের মাধ্যমে প্রতিরোধ সম্ভবঃ

১. অ্যানথ্রাক্স (Anthrax)
২.হাম (Measles)
৩. রুবেলা (Rubella)
৪.কলেরা (Cholera)
৫. মেনিংগোকক্কাল ডিজিজ (Meningococcal disease)
৬. ইনফ্লুয়েঞ্জা (Influenza)
৭. ডিপথেরিয়া (Diphtheria)
৮. মাম্পস (Mumps)
৯. ধনুষ্টংকার (Tetanus)
১০. হেপাটাইটিস এ (Hepatitis A)
১১. পারটুসিস (Pertussis)
১২. যক্ষ্মা (Tuberculosis)
১৩. হেপাটাইটিস বি (Hepatitis B)
১৪. নিউমোকক্কাল ডিজিজ (Pneumococcal disease)
১৫. টাইফয়েড (Typhoid fever)
১৬. হেপাটাইটিস ই (Hepatitis E)
১৭. পোলিও (Poleomyelitis)
১৮. টিক-বর্ণ এনকেফালাইটিস (Tick-born encephalitis)
১৯. হিমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা টাইপ বি (Haemophilus encephalitis type-B)
২০. জলাতঙ্ক (Rabies)
২১. ভেরিসেলা এবং হার্পিস (Varicella & herpes zoster)
২২. হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (Human papilloma virus)
২৩. রোটাভাইরাস (Rotavirus gastroenteritis)
২৪. ইয়েলো ফিভার (Yellow fever)
২৫. জাপানীজ এনকেফালাইটিস (Japanese encephalitis)

টিকার প্রকারভেদ:

বিজ্ঞানীরা কোনো জীবাণুর সংক্রমণের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন তৈরির জন্য নানা ধরনের পন্থা অবলম্বন করেন। এই পন্থাগুলা নির্ধারিত হয় সেই জীবাণুর ধরনের উপর নির্ভর করে, যেমন সেই জীবাণুটি কীভাবে দেহের কোষকে আক্রমণ করে কিংবা দেহের রোগ-প্রতিরোধক ব্যবস্থা সেই জীবাণুর দ্বারা কি রকমভাবে প্রভাবিত হয়। এছাড়া টিকার আঞ্চলিক ব্যবহারও এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কারণ জীবাণুর প্রকরণ (strain), পরিবেশ (যেমন তাপমাত্রা, আবহাওয়া), টিকার সরবরাহ অথবা ঝুঁকি ইত্যাদি এক এক অঞ্চলের ক্ষেত্রে এক এক রকম হয়।

এসকল বিষয়ের উপর ভিত্তি করে ৪ ধরনের টিকা রয়েছে —

১. জীবিত কিন্তু দূর্বল ভ্যাকসিন (Live but attenuated vaccines):

এ ধরনের টিকা ভাইরাসের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়। এই টিকাতে কিছুটা দূর্বলকৃত কিন্তু জীবন্ত ভাইরাস ব্যবহার করা হয়। ব্যবহৃত ভাইরাস দূর্বল হবার কারণে তা সরাসরি মানুষের দেহে কোনো অসুস্থতার সৃষ্টি করে না কিন্তু ভাইরাসগুলো জীবিত থাকবার কারণে দেহ এক ধরনের বাস্তব সংক্রমণের শিকার হয়। ফলে আমাদের রোগ-প্রতিরোধক ব্যবস্থা সেই দূর্বল সংক্রমণকে নিরীক্ষা করে এবং প্রয়োজনীয় প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। হাম (measles), মাম্পস (mumps), রুবেলা (rubella), চিকেনপক্স (chickenpox) ইত্যাদির প্রতিরোধে এই ধরনের টিকা ব্যবহৃত হয়। এই ধরনের ভ্যাকসিন ব্যবস্থা খুবই কার্যকরী হলেও সবাই এটি গ্রহণ করতে পারে না, বিশেষ করে বাচ্চারা, যাদের রোগ-প্রতিরোধক ব্যবস্থা দূর্বল (যেমন যারা কেমোথেরাপি নিচ্ছে) তাদের জন্য এটি মোটেই উপযোগী নয়।

২. নিষ্ক্রিয় ভ্যাকসিন (Inactivated vaccines):

এই ধরনের টিকাও ভাইরাস দ্বারা সংগঠিত সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই টিকা তৈরির সময় ভাইরাসকে একেবারে নিষ্ক্রিয় অথবা মেরে ফেলা হয়। পোলিও টিকা হলো এই ধরনের টিকার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ, যেখানে পোলিও ভাইরাস কে একেবারে নিষ্ক্রিয় করে টিকা প্রস্তুত করা হয়। এই টিকার ক্ষেত্রে রোগ-প্রতিরোধক ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখবার জন্য অনেক সময় একাধিক ডোজ এর প্রয়োজন হতে পারে।

৩. সাবইউনিট টিকা (Subunit vaccines):

এই টিকার প্রস্তুতিতে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার অংশবিশেষ ব্যবহৃত হয়। কারণ এই ভ্যাকসিন গুলো সম্পূর্ণ জীবাণুর পরিবর্তে কেবল প্রয়োজনীয় অ্যান্টিজেন গুলোই বহন করে। তাই এতে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও তুলনামূলক ভাবে কম দেখা যায়। হুপিং কাশির (pertussis) টিকা প্রস্তুতিতে এই পন্থা অবলম্বন করা হয়। এটি বিভিন্ন ধরনের হয়-

         ক) অনুবন্ধী টিকা (Conjugate vaccines):

বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে এই টিকার ব্যবহার রয়েছে। বিশেষ করে যেসব ব্যাকটেরিয়ার অ্যান্টিজেন এর চারপাশে পলিস্যাকারাইড এর আবরণ রয়েছে। এই ধরনের আবরণ থাকবার জন্য শরীরের রোগ-প্রতিরোধক ব্যবস্থা সহজে সেই অ্যান্টিজেনটিকে শনাক্ত করতে পারে না। তাই এর প্রতিউত্তর স্বরূপ অ্যান্টিবডি তৈরিও কঠিন হয়ে দাড়ায়। এই টিকাগুলো পলিস্যাকারাইড ও অ্যান্টিজেন এর মাঝে এক ধরনের অনুবন্ধী সম্পর্ক স্থাপন করে, যার ফলে শরীরের রোগ-প্রতিরোধক ব্যবস্থা খুব সহজেই এটিকে শনাক্ত করতে পারে এবং প্রয়োজনীয় প্রতিরক্ষা মূলক ব্যবস্থা নেয়। Haemophilus influenzae type B ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংঘটিত রোগ প্রতিরোধের জন্য হিব (Hib) টিকা প্রস্তুতিতে এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।

        খ) রিকম্বিনেন্ট ভ্যাকসিন (Recombinent Vaccines):

এ ধরনের ভ্যাকসিন তৈরি করতে ব্যাকটেরিয়া কিংবা ঈস্টের কোষকে ব্যবহার করা হয় জৈবপ্রযুক্তির মাধ্যমে। যে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া থেকে ভ্যাকসিন তৈরি করতে হবে তার DNA কে আলাদা করা হয়। এরপর, এটিকে অন্য একটি কোষের (ব্যাকটেরিয়া কিংবা ঈস্টের) ভিতর অনুপ্রবেশ করানো হয় বড় পরিসরে উৎপাদন করার জন্য যা থেকে ভ্যাকসিন উৎপন্ন করা হয়। যেমন: হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরি করতে, ভাইরাসটি থেকে DNA অংশটুকু নিয়ে ঈস্ট কোষে প্রবেশ করানো হয়। এই ঈস্ট কোষটি এটি থেকে হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসের বহিঃ আবরণের প্রোটিন তৈরি করতে পারে। যা সংগ্রহ ও বিশুদ্ধ করে ভ্যাকসিনরূপে ব্যবহার করা হয়।

জৈব প্রযুক্তি ব্যবহার করে এধরনের ভ্যাকসিনের উদাহরণ হলো: মানুষের ক্যানসার তৈরিকারী প্যাপিলোমা ভাইরাসের (HPV) ভ্যাকসিন। এটির জন্য দুটি ভ্যাকসিন বিদ্যমান। যার মধ্যে একটি- ভাইরাসটির ২টি স্ট্রেইনের (প্রকরণের) বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষার কাজ করে৷ অন্যটি- বাকি চারটি স্ট্রেইনের জন্য একই ভাবে তৈরি করা হয়।

৪. টক্সয়েড টিকা (Toxoid vaccines):

ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংগঠিত রোগ প্রতিরোধের জন্য ব্যবহার হয় এই ধরনের টিকা। এই টিকা প্রস্তুতিতে বিষকে (toxin) দূর্বল করে ফেলা হয় যাতে তা কোনো অসুস্থতার সৃষ্টি করতে না পারে। এই দূর্বলকৃত বিষকে বলা হয় টক্সয়েড। শরীর যখন এই ধরনের টিকা গ্রহণ করে তখন শরীর বুঝতে পারে কীভাবে সেই বিষটিকে প্রশমন করতে হবে। এই টিকার একটি উদাহরণ হলো DTaP ভ্যাকসিন যাতে ডিপথেরিয়া ও টিটেনাস এর টক্সয়েড রয়েছে।

ভ্যাকসিন কেন দ্রুত তৈরি করা যায় না?

ভ্যাকসিন তৈরি হলে সামনে আসে এর কার্যকারিতার ব্যাপারটি। সেটি মানুষের দেহে কাজ করবে কি করবেনা সেটা পরীক্ষার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাড়ায়। একই সাথে এটি ক্ষতিকর নয় ও সহজলভ্য হয় কিংবা কমমূল্যে উৎপাদন করা যাবে ইত্যাদি বিষয়ও সামনে চলে আসে। মানুষে অনুপ্রবেশ করানোর আগে ল্যাবে বিভিন্ন ট্রায়ালের/পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা পড়ে ৷সাধারণত বানর, শিম্পাঞ্জি বা ইঁদুরের দেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হয়। সেটির কার্যকারিতা প্রকাশ পেলে চূড়ান্ত ধাপে মানুষের মধ্যে পরীক্ষা করা হয়। এটিকে আবার ছোট পরিসর, বড় পরিসরে বিভিন্ন বয়সী বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের মাঝে ট্রায়াল/পরীক্ষার ধাপ অতিক্রম করতে হয়। এভাবে, সবগুলি ধাপ অতিক্রম করলে তা Food and Drug Administrations (FDA) -এর মত প্রতিষ্ঠানের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। তারপর, টিকা সর্বসাধারণের জন্য ব্যবহারযোগ্য হয়। আর, পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে দীর্ঘসময়ের প্রয়োজন হয়।

টিকা ব্যবহারে কিছু মানুষের অনর্থক নির্বুদ্ধিতা:

গত ১০০ বছরে রোগ প্রতিষেধক টিকার কারণে কোটি কোটি মানুষের জীবনরক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু অনেক দেশেই ভ্যাকসিন নেয়ার ক্ষেত্রে অনীহা তৈরি হয়েছে, আর এই প্রবণতা এখন বাড়ছে। টিকা আবিষ্কারের সময় থেকেই চিকিৎসার নতুন এই পথ নিয়ে সন্দেহ ছিল। আগে মানুষ ধর্মীয় কারণে টিকার ব্যাপারে সন্দিহান ছিলেন। তারা মনে করতেন টিকার মাধ্যমে দেহ অপবিত্র হয়। এটা মানুষের সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার খর্ব করে বলেও কিছু মানুষ মনে করতেন। সপ্তদশ শতাব্দীতে ব্রিটেনের বিভিন্ন জায়গা জুড়ে টিকা-বিরোধী লীগ গড়ে ওঠে। তারা বিকল্প ব্যবস্থার পরামর্শ দিতেন, যেমন রোগীকে আলাদা করে চিকিৎসা দেয়া।

ব্রিটিশ টিকা-বিরোধী ব্যক্তিত্ব উইলিয়াম টেব যুক্তরাষ্ট্র সফর করার পর সেখানেও এই ধরনের সংগঠন গড়ে ওঠে। সম্প্রতি টিকা -বিরোধী ব্যক্তিত্বদের একজন হলেন অ্যান্ড্রু ওয়েকফিল্ড। তিনি ১৯৯৮ সালে এক রিপোর্ট প্রকাশ করেন যেটিতে তিনি এক ভুল তথ্য উপস্থাপন করেন। তিনি দাবি করেন এমএমআর ভ্যাকসিনের সাথে অটিজম এবং পেটের অসুখের যোগাযোগ রয়েছে। এমএমআর হচ্ছে একের ভেতর তিন টিকা। এটা শিশুদের ওপর ব্যবহার করা হয় হাম, মাম্পস, এবং রুবেলা (যাকে জার্মান মিসলস বলা হয়) প্রতিরোধের জন্য। পরে তার ঐ গবেষণা ভুয়া বলে প্রতিপন্ন হয় এবং তার মেডিকেল ডিগ্রী কেড়ে নেয়া হয়।

কিন্তু তার ঐ দাবির পর ভ্যাকসিন নেয়া শিশুর সংখ্যা কমে আসে। শুধুমাত্র ব্রিটেনেই ২০০৪ সালে এক লক্ষ শিশু কম টিকা নেয়। এর ফলে সে দেশে হামের প্রকোপ বেড়ে যায়। টিকাদানের ইস্যুটিকে ঘিরে রাজনীতিও বাড়ছে। ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যাত্তেও সালভিনি বলেছেন তিনি টিকা-বিরোধীদের দলে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কোন সাক্ষ্য-প্রমাণ ছাড়াই বলার চেষ্টা করেছিলেন যে টিকার সাথে অটিজমের সম্পর্ক রয়েছে। তবে সম্প্রতি ভোল পাল্টে তিনি সব শিশুকে টিকা দেয়ার তাগিদ দিয়েছেন।

ভ্যাকসিন প্রয়োগে পোলিও থেকে চিরস্থায়ী মুক্তি
ভ্যাকসিন প্রয়োগে পোলিও থেকে চিরস্থায়ী মুক্তি

কয়েক দশক আগেও লক্ষ লক্ষ মানুষ পোলিওতে আক্রান্ত হয়ে পঙ্গুত্ব কিংবা মৃত্যু বরণ করতেন। এখন পোলিও প্রায় নির্মূল হয়েছে।

ভ্যাকসিন প্রয়োগে বিশ্বব্যাপী প্রভাব:

বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার তথ্যমতে প্রতিবছর ভ্যাকসিনেশনের ফলে লক্ষ লক্ষ মৃত্যু প্রতিরোধ হয়। ভ্যাকসিনেশনের পরিপূর্ণ প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতি সাতটির মধ্যে একটি শিশুমৃত্যু প্রতিরোধ সম্ভব। এটা বলা যায় যে, শিশুকালে যেসব রোগের ভ্যাকসিন দেয়া হয় তা মোটামুটি ৯০-১০০% ইমিউনিটি তৈরি করতে পারে। আরেকটি মজার ব্যপার হল একটি কমিউনিটির বেশিরভাগ (মোটামুটি ৮০-৮৫%) মানুষকে ভ্যাকসিনেশন করা গেলে ঐ কমিউনিটির প্রায় সব সদস্য একই রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা (Herd immunity/Community immunity) লাভ করে । এই প্রক্রিয়ায় ইনফ্লুয়েঞ্জা, হাম ইত্যাদি রোগের প্রতিরোধ করা যায়। সারা বিশ্বে ৮৫% শিশুকে টিকা দেয়ার হার গত কয়েক বছর ধরে অপরিবর্তিতই রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, টিকার কারণে প্রতি বছর বিশ্বে ২০ থেকে ৩০ লক্ষ শিশুর প্রাণরক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে।

 

 

আরও পড়তে পারেন: অ্যান্টিবায়োটিক কী? এটি সেবনে সতর্কতা

 

তথ্যসূত্র: NHS, Wikipedia, Science & Healthblog, jounal

Leave a Reply

%d bloggers like this: