বিউটি টিপস

চুল পড়ার সমস্যা সমাধানে কি করবেন

চুল পড়ার সমস্যা সমাধানে কি করবেন-chul pora rodhe ki korbenচুল পড়ার সমস্যা সমাধানে কি করবেন-chul pora rodhe ki korben

চুল পড়ার সমস্যা সমাধানে কি করবেন

চুল পড়ার সমস্যা ছেলে মেয়েদের এখন একটি খুবই যন্ত্রণার বিষয়। সাধারণভাবেই প্রতিদিন কিছু না কিছু চুল ঝরে পড়ে। যখন আমদের চুল পড়তে শুরু করে তখন কষ্টের আর শেষ থাকে না। প্রতিদিন ১০০টা চুল পড়া স্বাভাবিক বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তবে চুল পড়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকার কিছু নেই। মাথার চুল ঝরে যাওয়া আজকাল সবার ই একটি কমন সমস্যা। সকলেই প্রত্যাশা করে মাথা ভরা ঝাকড়া চুলের। মেয়েরা তো চুলের জন্য পারলে সব কিছুই করে। কিন্তু চুল পড়ার সমস্যা বন্ধ হয় না। মাথায় আংগুল দিয়ে হাত বুলালে কিংবা চিরুনি দিয়ে আঁচড়ালে চুল উঠে আসে। কারো কারো মাথা টাক কিংবা টাক হওয়ার পথে। কয়েকটি পদক্ষেপ নিলে আশা করি সমস্যাটা কমে যাবে।

চুল পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মাথায় প্রতিনিয়তই নতুন চুল গজায়। তবে চুল যদি বেশি পরিমাণে পড়তে থাকে, অর্থাৎ চুল পড়ার হার যদি স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হয় তাহলে তা চিন্তার কথা। তাই চুল বেশি পড়লে অবশ্যই আমাদের গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখতে হবে। নানা কারণেই আমাদের মাথার চুল পড়তে পারে। চুলের গোড়ায় রক্ত সঞ্চালন ঠিকমতো না হলে, অ্যানিমিয়া থাকলে, মানসিক স্ট্রেস-টেনশন, চুলে খুশকি, বড় কোন অসুখে ভুগলে, বেশি মাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খেলে ইত্যাদি নানা কারণেই চুল পড়ে থকে । ফলে মাথার চুল পাতলা হয়ে যায়।

চুল পড়ার সমস্যা বন্ধে প্রথমেই আপনাকে জানতে হবে কী কারণে আপনার চুল পড়ছে। আগে  কারণটা খুঁজে বের করে আগে সেই সমস্যার সমাধান করতে হবে।

 

চুল পড়ার সমস্যা রোধের উপায়:

চুল পড়ার সমস্যা বন্ধ করতে হলে অবশ্যই এর কারণ অনুযায়ী চিকিৎসা করতে  হবে। নিজে নিজে চিকিংসা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহন করুন। নিচে চুল পড়া রোধের কিছু  উপায়  দেওয়া হলো-

১। চুলের  জন্য ধূমপান খুবই ক্ষতিকর। এর কারনে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়, রক্ত নালিকাগুলো ও ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এর কারনে চুল পড়ার সমস্যা অনেক বেড়ে যায় এবং চুল বাদামি বর্ন  ধারন করে।

২। অতিরিক্ত চা-কফি পান করা উচিত না। চা বা কফিতে ক্যাফেইন থাকে যা সকল প্রকার চুল ও স্কিনের সমস্যার জন্য অনেক  দায়ী।

৩। বেশিরভাগ  ক্ষেত্রেই লক্ষনীয় যে, শরীরে আয়রনের অভাবে চুল পড়ে থকে। আয়রনের অভাবে আমাদের শরীরে লোহিত রক্ত কণিকার সংখ্যা কমে যায়, যা আমাদের চুলের গোড়া (হেয়ার ফলিকল) মজবুত করার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। যদি তাই হয়, তাহলে প্রচুর পরিমাণে লাল শাক, কচুশাক খেতে হবে।

৪। ভিটামিন-ই চুল পড়া রোধে ও নতুন চুল গজানোর ক্ষেত্রে সাহায্য করে, তাই প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সমৃদ্ধ শাকসবজি ও ফলমূল খেতে হবে। ভিটামিন-ই চুলের ত্বকে অক্সিজেনের সরবরাহ করতে সাহাজ্য করে, যা চুল বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে এবং শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। এতে চুল পড়ার সমস্যা রোধ হয়। ভিটামিন-ই এন্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে ক্ষতিকারক ফ্রি র‌্যাডিকেল অপসারণের মাধ্যমে স্কিনকে সুরক্ষিত রাখে। নাশপাতি, বাদাম ও জলপাই তেলে প্রচুর ভিটামিন-ই থাকে। অন্যদিকে ভিটামিনের সর্বোৎকৃষ্ট প্রাকৃতিক উৎস হচ্ছে গম, শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, সবজি, ডিম প্রভৃতি।

৫। স্বাস্থ্যকর খাবার বা প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার শুধু যে চুল শক্ত করে তা নয়, চুল গজাতেও সহায়তা করে। এছাড়া অতিরিক্ত চিনি ও চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে।

৬। ওমেগা- থ্রি (৩) ফ্যাটি অ্যাসিড চুল পড়া বন্ধে খুব কার্যকর। সাধারণত বিশেষ ধরনের মাছে এই উপাদানটি থাকে। তবে আমাদের দেশে এসব স্যামন, ম্যাকারেল মাছ খুবই কম পাওয়া যায়। প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-থ্রি (৩) ফ্যাটি অ্যাসিড তিসির তেলে পাওয়া যায়। আর এই তেল পাবেন স্থানীয় বাজারেই। মনে রাখবেন, এই তিসির তেল কিন্তু মাথায় লাগানোর জন্য নয় অথবা রান্নায় ব্যবহার করার জন্যও নয়। প্রতিদিন ২ চা চামচ তিসির তেল সালাদের সঙ্গে মিশিয়ে খাবেন । তাহলেই আপনার চুল পড়ার সমস্যা অনেক কমে আসবে। এছাড়া প্রচলিত চুল সুরক্ষার তেল ব্যবহার করার মাধ্যমেও চুলের প্রতি যত্নশীল হোন।

৭। নতুন চুল গজাতে উদ্দীপনা দেবার জন্য প্রতি সপ্তাহে চুলে তেল ব্যবহার করুন।

৮। চুলে অপ্রয়োজনীয় ঘষা-মাঝা, অতিরিক্ত আঁচড়ানো পরিহার করুন। গরম পানি, ড্রায়ার বা এমন কিছু ব্যবহার করবেন না যা চুলে অতিরিক্ত চাপ তৈরি.  করে।

৯। চুল পড়ার সমস্যা বন্ধে চুলকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রখতে হবে।

১০। পর্যাপ্ত ঘুমান এবং বিশ্রাম নিন, কেননা ঘুম ও বিশ্রাম নতুন চুল গজানো ও বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সহায়তা করে।

১১। পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহন করুনঃ পুস্টিকর খাবার খান। এর সাথে সাথে মাথা এবং চুলের সুরক্ষার জন্য পুষ্টিবর্ধক সাপ্লিমেন্ট নিতে পারেন। পুস্টিকর খাবারের উপাদান সমূহ হচ্ছে-

(ক) জিংকঃ মাথার সুস্থ ত্বকের জন্য জিংক দরকারি উপাদান। চুলের গোড়ায় অবস্থিত তৈল নিঃসারক গ্রন্থিকে হরমোন উৎপাদনের মাধ্যমে চুলে প্রান দান করে। অতিরিক্ত জিংক গ্রহন করলেও সমস্যা আছে। এতে অতিরিক্ত টেস্টস্টেরন নিঃসৃত হয়ে চুল পড়া বেড়ে যায়। তাই পরিমান মত জিংক গ্রহন করতে হবে। দিনে ১১ মিলিগ্রাম।

(খ) প্রোটিনঃ পরিমানের চেয়ে কম প্রোটিন যুক্ত খাবার গ্রহন করলে চুল দূর্বল ও বিবর্ণ হয়ে যায়। শাকসবজি খেলে প্রোটিনের অভাব দূর হয়।

(গ)এছাড়া আয়রন, ভিটামিন এ এবং সি, ম্যাগনেসিয়াম, সেলেনিয়াম চুলের পুস্টির জন্য প্রয়োজনীয়।

১২। পরিমাণ মতো জল পান করুন:আপনার চুলের ২৫ শতাংশ গ্রন্থি জল দ্বারা গঠিত। আপনার দেহে জলের অভাব দেখা দিলে চুলের গ্রন্থিগুলো দুর্বল হয়ে যায় ফলে চুলের ঘনত্ব কমে যায় এবং চুল পড়া শুরু হয়। তাছাড়া দেহে জলের অভাব দেখা দিলে নতুন চুলগ্রন্থি তৈরি হয়না ফলে মাথায় চুলের পরিমাণ বাড়ে না।

১৩। গরম তেলের ব্যবহারঃ যেকোনো প্রাকৃতিক তেল যেমন নারিকেল তেল, সূর্যমুখী তেল, অলিভ ওয়েল, ইতাদি তেল মাথায় ব্যাবহার করতে পারেন। হালকা গরম করে তেল মাথায় দিয়ে রাখতে পারেন। মাথায় শাওয়ার ক্যাপ পরে নিলে ভালো হয়। পরে শ্যাম্পু করে নিবেন।

১৪। চুলে হিট না দেওয়াঃ আমাদের অনেকে বিশেষ করে মেয়েরা চুল তাড়াতাড়ি শুকানোর জন্য চুলে হিট দেয়। চুল কার্লি করার জন্য কিংবা সোজা করার জন্য হেয়ার ড্রায়ার ব্যাবহার করলে চুলের মধ্যকার প্রোটিন দূর্বল হয়ে যায়। ফলে চুল পড়ে যায় এবং ভেংগে যায়। ইলেক্ট্রনিক ড্রায়ার দিয়ে চুল না শুকিয়ে স্বাভাবিক ভাবে চুল শুকিয়ে নিন।

১৫। চুলে ঘন ঘন রঙ না করাঃ দেড় দুই মাস পরপর চুল কালার করুন প্রয়োজন হলে। সব চুল গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত কালার না করে আংশিক চুল কালার করুন যাতে অন্তত পাকা চুলগুলো ঢেকে যায়। তবে চুলে কালার না করাটাই শ্রেয়।

১৬। চুলের স্টাইল সংশোধন করাঃ মেয়েরা ক্লিপ অথবা ইলাস্টিক দিয়ে বেশ শক্ত করে চুল বেঁধে রাখে। এতে করে চুল উঠে যায়। একটু ছেড়ে ছেড়ে চুল বাধুন। ওয়াইন্ডিং রোলার ব্যাবহার করতে পারেন।

১৭। নিয়মিত চুল ধোয়াঃ নিয়মিত চুল ধুলে স্কাল্প পরস্কার হয়, খুশকি দূর হয়, কোনোরকম ইনফেকশন হয় না। চুল ধোয়ার জন্য কোমল শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। বাজারের রংগচংগা শ্যাম্পুর চেয়ে ক্লিনিকাল শ্যাম্পু ব্যাবহার করা উত্তম।

১৮। ভেজা চুল আঁচড়াবেন নাঃ ভেজা চুল আঁচড়ালে চিরুনির সাথে চুল উঠে আসে। যদি ভেজা চুল আঁচড়াতেই হয় তাহলে ফাঁকা দাতওয়ালা চিরুনি ব্যবহার করুন। চুল জঁট বাধা অবস্থায় থাকলে ব্রাশ কিংবা চিরুনি দিয়ে চুল না আঁচড়িয়ে আংগুল দিয়ে চুলের জঁট খুলুন তারপর আঁচড়ান।

১৯। কার্যকরী তেলের ব্যবহারঃ এসেন্সিয়াল তেল যেমন তিলের তেল, বাদামের তেল, ল্যাভেন্ডারের তেল কয়েক ফোটা মাথায় দিয়ে মেসেজ করলে মাথার ত্বকে রক্তসঞ্চালন বাড়ে। ফলে চুলের গোড়া শক্ত হয়।

সূত্রঃ
med-health.net

চুল পড়ার সমস্যায় কি করবেন
চুল পড়ার সমস্যায় কি করবেন

চুল পড়ার সমস্যা সমাধানের সাধারণ কিছু টিপস

**চুল পড়ার সমস্যা বন্ধ করতে ভিটামিন ই ক্যাপসুল খান অথবা ই ক্যাপ নারকেল তেলের সাথে মিশিয়ে হালকা গরম করে চুলে লাগান। ক্যাস্টর অয়েল তেলের সাথে মিশিয়ে লাগাতে  পারেন।চুল পড়ার সমস্যা কমে যাবে।

**যেসব চুলের গোড়া চটচটে ও উপরিভাগ রুক্ষ সেসব চুল সাধারনত মিশ্র প্রকৃতির চুল।এরকম চুলে সপ্তাহে অন্তত 3 দিন শ্যাম্পু করুন ও কন্ডিশনার ব্যাবহার করুন।শ্যাম্পুর আগে কুসুম গরম তেলের সাথে লেবুর রস মিশিয়ে হালকা মাসাজ করলে চুল ভাল থাকবে।

ছেলে মেয়ে উভয়ই চুল পড়া সমস্যায় ভুক্তভোগী। নতুন চুল গজানোর জন্য কত রকমের হেয়ার প্যাক, কত প্রোডাক্ট ব্যবহার করে থাকি আমরা। এইসব রাসায়নিক পণ্য ব্যবহারে নতুন চুল গজানোর চাইতে চুলের ক্ষতি করে থাকে বেশি।

অথচ আমাদের হাতের কাছে থাকা প্রাকৃতিক উপাদান দিয়েই নতুন চুল গজানো সম্ভব। বাজারের ক্রেমিক্যালযুক্ত পণ্য ব্যবহার না করে ঘরে থাকা উপাদান ব্যবহার করে নতুন চুল গজিয়ে ফেলুন। এর জন্য প্রয়োজন হবে শুধু মাত্র দুটি উপাদানের!

যা যা লাগবেঃ

নারকেল তেল

লেবুর রস

যেভাবে ব্যবহার করবেনঃ

১। ৫-৬ টেবিল চামচ নারকেল তেল।
২। ২-৩ ফোঁটা লেবুর রস।
৩। নারকেল তেল এবং লেবুর রস খুব ভাল করে মিশিয়ে নিন।
৪। আঙুল দিয়ে মাথার তালুতে আস্তে আস্তে ম্যাসাজ করুন।
৫। এভাবে ১০ থেকে ২০ মিনিট ম্যাসাজ করুন।
৬। এটি চুলে ২ ঘন্টা রাখুন, তারপর শ্যাম্পু করে ফেলুন।
৭। এটি সবসময় শ্যাম্পু করার আগে ব্যবহার করুন। সর্বোচ্চ ২ ঘন্টা এটি মাথায় রাখবেন এর বেশি নয়।

যেভাবে কাজ করেঃ
নারকেল তেল মাথার তালুতে পুষ্টি যুগিয়ে হাইড্রেডেট করে থাকে। নিয়মিত ব্যবহারে যা নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে থাকে। এর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান চুল এবং মাথার তালুর জন্য অনেক উপকারী।

লেবু সাইট্রাস জাতীয় ফল। এতে ভিটামিন সি আছে যা চুল থেকে খুশকি, অতিরিক্ত তেল দূর করে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।

অন্যভাবে ব্যবহারঃ
১। নারকেল তেল এবং বাদাম তেল মিশিয়ে হালকা গরম করে ১০-১৫ মিনিট মাথার তালুতে ম্যাসাজ করুন। ১ ঘন্টার পর শ্যাম্পু করে ফেলুন।

২। ১ টেবিল চামচ শুকনো আমলকির গুঁড়ো এবং ২ টেবিল চামচ নারকেল তেল চুলায় জ্বাল দিয়ে নিন। ঠান্ডা হয়ে গেলে মাথায় ম্যাসাজ করুন। সারা রাত এভাবে রাখুন। সকালে শ্যাম্পু করে ফেলুন। ভাল ফল পেতে সপ্তাহে ২ বার ব্যবহার করুন। এটিও নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে।

৩। লেবুর রস এবং টক দই মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করতে পারেন। এটি চুলের খুশকি দূর করে মাথার তালু পরিষ্কার করে থাকে। যা নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে থাকে।

আরও পড়তে পারেন ঠোঁটে কালো ছাপ পড়লে কি করবেন তার টিপস

Leave a Reply

%d bloggers like this: