করোনাস্বাস্থ্য

যেসব করোনা লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে যাবেন

যেসব করোনা লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে যাবেনযেসব করোনা লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে যাবেন

করোনা লক্ষণ : কখন দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে?

করোনার কোন লক্ষণ দেখা দিলে আপনি বাসায় থাকবেন আর কোন লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে যাবেন সেগুলোই খুব সহজ ভাষায় এই লেখার বিষয়বস্তু। করোনা আক্রান্ত বেশির ভাগ মানুষই সুস্থ হয়ে উঠে বিশেষ কোন চিকিৎসার প্রয়োজন ছাড়া। হাসপাতালে ভর্তি লাগে না। তবে কিছু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হতেই হয়। তাই আপনার জানতে হবে কোন করোনা লক্ষণ থাকলে বাসায় থেকে নিজে পরিচর্যা করবেন আরা কখন দ্রুত হাসপাতালে যাবেন।

যেসব লক্ষণ দেখা দিলে আপনি বাসায় থাকবেন সেগুলো আগে বলছি তাতে বুঝতে সুবিধা হবে।

১। জ্বর: বাসায় থার্মোমিটার থাকলে সেটা দিয়ে মাপবেন। না থাকলে বুকে পিছে হাত দিয়ে দেখলে মনে হয় স্বাভাবিকের চেয়ে গরম তাহলে ধরে নিবেন জ্বর এসেছে।

২। কাশি: বেশিভাগ ক্ষেত্রেই শুকনো কাশি হয়। অর্থাৎ, কাশির সাথে কফ বের হয় না। ফুসফুস বা হার্টের রোগের কারণে যাদের এমনিতেই কাশি থাকে তাদের কাশি স্বাভাবিকের চেয়ে খারাপ হয়ে যায়।

৩। ঘ্রাণশক্তি আর মুখের স্বাদ চলে যাওয়া: অনেক কোভিড রোগী কোন কিছুর গন্ধ শুকতে পারে না। খাবারের স্বাদ বুঝতে পারে না। অথবা ঘ্রাণ ও স্বাদ আগের চেয়ে ভিন্ন হয়ে যায়।

৪। ক্লান্তি: শরীর খুব দুর্বল হয়ে যায়।

আরও কিছু করোনা লক্ষণ আছে যেগুলো একটু কম দেখা যায়। যেমন- স্বর্দি বা নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, মাথাব্যথা, গলাব্যথা, বমিভাব, বমি, ডায়রিয়া, শরীরে আর মাংসপেশিতে ব্যথা।

কনজাংক্টিভিটিস (Conjunctivitis) বা চোখের ইনফেকশন: এটা একটু ব্যাখ্যা করা যাক। কনজাংক্টিভিটিস হলে চোখ দুটো লাল হয়ে যায়, পুঁজ বের হয়ে চোখের পাতা একটা আরেকটার সাথে লেগে যায়। যেটাকে আমরা চোখ ওঠা বলি। এটা সাধারণত কয়েক সপ্তাহে নিজে নিজে সেরে যায়।

গায়ে র‌্যাশ ওঠা: হাতে পায়ের আঙ্গুলের রং বদলে যেতে পারে। এই লক্ষণ দেখা দিলে একজন চিকিৎসক দেখিয়ে নেওয়া শ্রেয়। তিনি বলতে পারবেন এটা করোনা না কি অন্য কারণে হচ্ছে।

এবার একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলা যাক। যে লক্ষণগুলো জানলেন তার কোন একটা দেখা দিলেই করোনা হয়েছে তা নিশ্চিত নয়। করোনা আসার আগেও মানুষের জ্বর, স্বর্দি হতো। তবে এখন লক্ষণ দেখা দিলে করোনার কথা চিন্তা করতে হবে। আর সব ধরনের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। যদি পরীক্ষা করার সুযোগ থাকে তাহলে তো নিশ্চিত হতে পারবেন। হাসপাতালে না যেয়ে বাসায় থাকার এই পরামর্শ কেউ দিলে আপনার খটকা লাগতে পারে। আমরা সাধারণত অসুস্থ বোধ করলে ডাক্তারের কাছে যেতে বলি। কিন্তু করোনার ক্ষেত্রে বলছি উলটো। আসলে হালকা উপসর্গের জন্য আলাদা কোন চিকিৎসা নেই। তাই হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না বরং হাসপাতালে গেলে অন্যান্য ইনফেকশনে আক্রান্ত হতে পারেন।

তবে কিছু করোনা লক্ষণ দেখা দিলে আপনাকে দেরি না করে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে। এসব  লক্ষণ দেখা দিলেই ঘাবড়ে যাবেন না বরং ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করুন কিভাবে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়া যায়।

১। শ্বাসকষ্ট: দম আকটে যাচ্ছে, কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে, হাঁটতে গেলে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে।

২। ঠোঁট, চেহারা নীল হয়ে যাওয়া: এটার মানে আপনার শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ মারাত্মক ভাবে কমে গেছে। রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ আগের ধরে ফেলার জন্য বাসায় পালস অক্সিমিটার ব্যবহার করতে পারেন। অনেক কোভিড রোগী শ্বাস কষ্ট হয় না কিন্তু দেখা যায় অক্সিজেন লেভেল অনেক কম।

৩। প্রসাব বন্ধ হয়ে যাওয়া বা খুব কমে যাওয়া: এটা কিডনি আক্রান্ত হবার লক্ষণ।

৪। বুকে ব্যথা কিংবা চাপ চাপ লাগা: এটা হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ, তীব্র শ্বাসকষ্টেও হতে পারে। বুকে ব্যথা কোনভাবেই অবহেলা করবেন না।

৫। হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, খুব ঘামছেন, মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। এটাও হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ । হার্ট অ্যাটাকে যে সবসময় বুকে ব্যথা থাকবে এটা সঠিক না।

৬। এমন র‌্যাশ উঠেছে যেটার উপর গ্লাস দিয়ে চাপ দিলে মিলিয়ে যায় না। এটা ব্রেনে ইনফেকশনের লক্ষণ হতে পারে।

৭। মুখে কথা আটকে যাচ্ছে বা হাত পা অবশ হয়ে যাচ্ছে, নাড়াতে পারছেন না। অনেকেই  জানেন এটা স্ট্রোকের লক্ষণ।

৮। কাশির সাথে রক্ত যাচ্ছে।

শেষ যে তিনটি করোনা লক্ষণ এর কথা বলবো সেগুলো রোগী হয়তো বুঝতে পারবেন না। রোগীকে যারা সেবা দিবেন তাদের খেয়াল রাখতে হবে।

৯। ঝিমাতে থাকা। রোগী একেবারেই জেগে থাকতে পারছে না। যে সময় স্বাভাবিক ভাবে জেগে থাকতে পারে সে সময় ডেকেও জাগিয়ে তোলা যাচ্ছে না, বারবার ঝিমিয়ে পড়ছে।

১০। কনফিউশন, ভুলে যাচ্ছে, কিছু মনে রাখতে পারছে না। যেটা রোগীর জন্য স্বাভাবিক না।

১১। অজ্ঞান হয়ে পড়া।

এসব লক্ষণ ছাড়াও অন্য কারণে যদি মনে হয় রোগী দ্রুত খারাপ হয়ে যাচ্ছে অথবা যাদের অন্যান্য রোগ আছে, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি এবং বাসায় সেগুলো কন্ট্রোলে রাখা যাচ্ছে না।

শুরুতে জেনেছেন যেসব লক্ষণ দেখা দিলে বাসায় থাকা যাবে। সেগুলোর কোনটা যদি গুরুতর হয়ে যায়। যেমন, ধরেন বমি কিছুতেই থামছে না তখন হাসপাতালে যেতে হবে।

 

উৎসঃ ডা. তাসনিম জারা, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুনঃ পালস্‌ অক্সিমিটার দিয়ে রক্তের অক্সিজেন কীভাবে পরিমাপ করবেন?

 

 

Leave a Reply

%d bloggers like this: