করোনা আক্রান্ত হলে করণীয়:
বাসায় কেউ করোনা আক্রান্ত হলে তার জন্য যদি আলাদা রুম এবং বাথরুমের ব্যবস্থা করা না যায় তাহলে কী কী পদক্ষেপ নিবেন এই বিষয়গুলো আজকে আলোচনা করবো। আর শেষে থাকবে বাসায় কেউ করোনা আক্রান্ত হলে অন্যদের মধ্যে করোনা বিস্তার রোধে কী কী করতে পারেন সেই পরামর্শ। প্রথমে আসি অসুস্থ ব্যক্তির সাথে একই রুমে থাকার বিষয়ে। তারপর বলবো বাথরুম শেয়ার করার উপায়। আর সবশেষে থাকবে বাসায় করোনা বিস্তার রোধে সাবধানতার কথা।
শুরু করা যাক, রুম শেয়ার করার ব্যাপারে ৪টি পরামর্শ নিয়ে।
১। রোগীর সাথে এক রুমে থাকা অবস্থায় দুজনেই সার্জিক্যাল মাস্ক পড়ে থাকবেন আর চেষ্টা করবেন রোগীর রুমে যত কম সময় কাটানো যায়।
২। রোগীর সাথে এক বিছানায় ঘুমাবেন না। রোগী যেখানে আছে তার থেকে অন্তত ৬ফিট দূরে আপনার ঘুমানোর জায়গা ঠিক করবেন। সম্ভব হলে রুমে আর একটা খাট রাখতে পারেন। অথবা মেঝেতে বিছানা পেতে নিবেন। রোগীর খাটের মাথা যেদিকে আপনার খাটের পা সেদিকে থাকবে।
৩। রোগী যে বিছানায় আছে তার চারপাশে একটা পর্দা বা আবরণ তৈরি করবেন। সেটা চাদর দিয়ে হতে পারে, কাঁথা দিয়ে হতে পারে, প্লাস্টিকের বোর্ড দিয়ে হতে পারে। এখানে আপনাকে একটু সৃজনশীল চিন্তা করতে হবে। কী করে রুমের যেখানটাতে অসুস্থ্য ব্যক্তি আছেন, তার থেকে রুমের বাকি জায়গাগুলো আলাদা করা যায়।
৪। রুমে বাতাস ঢুকেতে ও বের হতে পারে এমন ব্যবস্থা করবেন। জানালা খুলে এটা করা সম্ভব।
এখন আসছি বাথরুম নিয়ে আলোচনায়। বাসায় যদি দুইটা বাথরুম থাকে। তাহলে একটা বাথরুম অসুস্থ ব্যক্তি ব্যবহার করবেন। আর অন্য বাথরুম বাকি সবার জন্য।
কিন্তু বাসায় যদি বাথরুম একটাই থাকে তখনতো সবাইকে একই বাথরুম ভাগাভাগি করে ব্যবহার করতে হবে। এই ক্ষেত্রে দুইটা সাবধানতার কথা মাথায় রাখবেন।
১। অসুস্থ ব্যক্তি বাথরুম ব্যবহার করবেন অন্যরা ব্যবহার করার পরে। ধরুন সকালে ঘুম থেকে উঠে তো সবাই একবার বাথরুমে যাবে। তখন অসুস্থ ব্যক্তি বাথরুমে যাবেন সবার শেষে। রোগীর জিনিস পত্র যেমন দাঁত মাজার ব্রাশ থেকে করোনা ছড়াতে পারে। সেগুলো বেসিনে না রেখে একটা ব্যাগে ভরে রাখবেন।
২। প্রতি বার বাথরুম ব্যবহার করার পরে অসুস্থ ব্যক্তি যে জায়গাগুলো ধরেছেন সেগুলো পরিষ্কার করতে হবে। আর জীবাণু মুক্ত করতে হবে।
বাসায় করোনা ছড়ানো প্রতিরোধ করতে করণীয়ঃ
১। যতদূর সম্ভব রোগীকে বাকিদের থেকে আলাদা রাখতে হবে। বিশেষ করে করোনা আক্রান্ত হলে যাদের ঝুঁকি বেশি, যেমন- বয়স ৭০ এর উপরে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম বা অন্যান্য রোগে আক্রান্ত যেমন-ডায়াবেটিস, হার্টের রোগ ইত্যাদি। তাদের থেকে রোগী অন্ততপক্ষে ৬ ফিট দূরত্ব বজায় রাখবেন। রোগীর কাছে যাওয়ার দায়িত্ব বাসার যে কোন একজনকে দিবেন। বয়সে তরুণ অন্যান্য কোন রোগ নেই এমন কেউ হলে ভালো হয়। আর এই পরিচর্যাকারী ব্যক্তি বাসায় অন্যদের সংস্পর্শে আসা কমাবে যতটুকু সম্ভব হয়। রোগীর কাছে সার্জিক্যাল মাস্ক পরে যাবে।
২। রোগীর জন্য, গ্লাস, প্লেট, তোয়ালে, চাদর ইত্যাদি নিত্য ব্যবহার্য জিনিস সব আদালা করে ফেলুন। একই জিনিস ভাগাভাগি করে ব্যবহার করবেন না।
৩। যিনি অসুস্থ তিনি যেন রান্না বান্নায় সাহায্য না করেন। তার খাবারটা রুমের বাইরে দরজায় কেউ দিয়ে যাবে। সে চলে গেলে রোগী রুমের ভিতরে খবার নিয়ে এসে খাবেন।
৪। কোন প্রয়োজনে রোগীর রুম থেকে বের হয়ে বাসার অন্য কোথায় যেতে হয়-যেমন বাথরুমে যাওয়া লাগলো। তখন অন্য কারো সংস্পর্শে আসার একটা সম্ভাবনা থাকে। তাই একটা সার্জিক্যাল মাস্ক পড়েই রুম থেকে বের হওয়া শ্রেয়। আর একটা কাজ করতে পারেন বাসার সবাইকে নিয়ে ফেসবুক বা হোয়াটস অ্যাপ এর একটা গ্রুপ খুলে ফেলতে পারেন। রুম থেকে বেরোনোর আগেই সেখানে একটা ম্যাসেজ করে দিলেন, আবার রুমে ফিরে সবাইকে জানিয়ে দিলেন। তাহলে বাসার অন্যরা সেই সময়টাতে সতর্ক থাকতে পারবেন।
৫। রোগী নিজের রুম আর বাথরুম নিজে পরিষ্কার করবেন। যেসব জায়গা বেশি বেশি স্পর্শ করেছেন যেমন-টেবিল, দরজার হাতল ইত্যাদি পরিষ্কার করতে হবে আর জীবাণুমুক্ত করতে হবে। আর নিয়মিত হাত তো ধুতেই হবে। আর এই সময়ে বাসায় যাতে মেহমান না আসে। আমাদের বাঙালি সংস্কৃতিতে এই চল কেউ অসুস্থ্য হলে আঙ্গুর, বেদানা, কমলা নিয়ে দেখতে যায়। কিন্তু করোনার সময় এটা করলে হিতের বিপরীত হতে পারে বরং ফোন করে রোগীর খোঁজ নিন, ভিডিও কল করেন, স্যোশাল মিডিয়া ব্যবহার করেন। খোঁজ নিলে রোগীর ভালো লাগবে আর যারা মেহমান হয়ে আসবে তারাও নিরাপদে থাকবেন।
উৎসঃ ডা. তাসনিম জারা, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়
আরও পড়ুনঃ লকডাউন সময়ে সুস্থ থাকতে করণীয়