করোনা টিকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
কেউ বছেন টিকা নেয়ার পর দ্বিতীয় দিন শরীরে জ্বর জ্বর ভাব ছিল। আবার কেউ বলেছেন ইনজেকশন দেয়ার সময় পিঁপড়ের কামড়ের মতো সামান্য ঐ ব্যথা ছাড়া তার কিছুই হয়নি। তাহলে টিকা নেয়ার পর কেন কিছু মানুষের শরীরে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়? যাদের দেখা দেয়, তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ব্যবস্থা কি বেশি শক্তিশালী? করোনা টিকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলো নিয়ে স্বচ্ছ ধারণা থাকলে টিকা নেওয়া আপনার জন্য প্রযোজ্য কি না সেটা বুঝতে সহজ হবে।
টিকা দেয়ার উদ্দেশ্য হলো আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাতে করোনা ভাইরাসকে শত্রু হিসেবে চিনে রাখে। অর্থাৎ, টিকা দেয়ার পর আমরা চাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা টিকাকে সাড়া দিক। সাড়া দেয়ার প্রতিক্রিয়াতে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলো দেখা দেয়। ব্যাপারটি কিছুটা এমন যে, টিকা আমাদের রোধ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কিছুটা ট্রিক করছে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা মনে করছে যে, শরীরে একটা শত্রু ঢুকেছে এটা এখন মোকাবিলা করতে হবে। মোকাবিলা করার পাশাপাশি সে শত্রুকে চিনে রাখে যাতে পরবর্তীতে এমন কিছু শরীরে ঢুকলে যেন সে সেটাকে ফাইট করতে পারে।
আমরা যে জায়গাটাতে টিকা দিচ্ছি সেইখানে প্রতিরোধ ব্যবস্থা এসে মোকাবিলা শুরু করে, যুদ্ধ শুরু করে। ফলে টিকার স্থানে ব্যথা হয়, লাল হয়ে যায়, ফুলে যায়, সাথে সাথে সারা শরীরে কিছু কেমিক্যাল বিস্ফোরণ ঘটে। কিছুটা ফায়ার এলার্মের মত, যে শরীরের এক জায়গায় কিছু শত্রু ঢুকেছে তোমরা প্রস্তুত হও, মোকাবিলা করতে হবে, যুদ্ধে নামতে হবে, এদিকে অ্যান্টিবডি প্রস্তুত হচ্ছে। সেই প্রক্রিয়াতে একটু জ্বর জ্বর লাগে, মাথা ব্যথা হয়, শরীর খুব ক্লান্ত লাগতে পারে, মাংসপেশিতে ব্যথা হতে পারে; তখন এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলো দেখা দেয়। কিন্তু এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রস্তুত হচ্ছে। যাতে আসল করোনা ভাইরাস পরবর্তীতে আমাদের শরীরে ঢোকে তাহলে তাকে কীভাবে মোকাবিলা করবে।
কিন্তু দেখা যায় করোনা ভাইরাসের টিকা দেয়ার পর কারো কারো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয়, আবার কারো হয় না, কারো জ্বর জ্বর লাগে । আবার এমনও আছে যে, কেউ কেউ বলছেন যে, তার কিছুই মনে হয়নি। শুধু মাত্র একটা সুঁচ যখন ইনজেকশনটা দিয়েছে সেটা ছাড়া।
করোনা টিকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া একেক জনের দেহে একেক রকম হয় কেন?
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একেক জনের একেক রকম থাকে। আমাদের একেক জনের শরীর একেক রকম। এটা আপনি চিন্তা করতে পারেন যে, সর্দি-কাশি হলে অনেকেই একদম বিছানায় পড়ে যায়, কাজে যেতে পারছে না বা স্কুলে যেতে পারছে না। আবার কারো সর্দি-কাশি হলে তিনি দিব্যি সব কিছু করে বেড়াচ্ছেন হয়তো থার্মোমিটার দেওয়ার আগে তিনি জানেনই না যে তার জ্বর আসছে।
আমাদের একেক জনের শরীর একেক রকম থাকে। আমাদের জেনেটিক ডাইভারসিটি থাকে। বিভিন্ন কারণে একেক জন একেক ভাবে রেসপন্ড করে। তার ভিতরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিন্তু কাজ করছে। কারো বাইরে থেকে বুঝা যাচ্ছে অনেক বেশি, কারো বাইরে থেকে বুঝা যাচ্ছে না। বয়স যতো বাড়তে থাকে ততো কম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, কম মানুষের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
আবার দেখা গেছে যে, যাদের আগে করোনা হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া একটু বেশি করে দেখা যাচ্ছে। এখন যার হচ্ছে তার অর্থ কি এই যে, যার হচ্ছে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যার হচ্ছে না তার তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী? গবেষণায় দেখা গেছে, কারো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া যেমনই হোক, বেশি হোক বা কমই হোক, আমরা করোনার বিরুদ্ধে যেরকম সুরক্ষা চাই সেটা সবার ক্ষেত্রে মোটাদাগে একই রকম। অর্থাৎ, যার ক্ষেত্রে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হচ্ছে না, টিকা নেয়ার পরে হয়তো তিনি কিছুই বুঝতে পারছেনা না, একটু সুঁচের মতো ব্যথা লেগেছিল কিন্তু তারপর একদম ভালো আছে। তার মানে যে, তার সুরক্ষা কম হচ্ছে ব্যাপারটা মোটেই সেরকম না। তিনি একই রকম সুরক্ষা পাচ্ছেন। আবার অন্যদিকে যাদের হয়তো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া খুব বেশি হচ্ছে, তার মানে যে, সে বেশি সুরক্ষা পাচ্ছে সেরকমও না। তার ক্ষেত্রেও সুরক্ষা সবার মতই একই রকম থাকবে। ভেতরে অ্যান্টিবডি একই করম উৎপন্ন হয়।
টিকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নিয়ে কি খুব বেশি দুঃশ্চিন্তা করার কোন কারণ আছে?
দুঃশ্চিন্তা করার কোন কারণ একদমই নেই। পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলো খুব সাময়িক থাকে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যখন টিকাকে সাড়া দিচ্ছে বা কাজ করছে তখন আমরা এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলো দেখি। সাধারণত কিছু দিনের মধ্যেই সেগুলো সেরে যায় এবং করোনা হলে যেমন ভোগান্তি হয়, শরীরে কষ্ট হয়, তার তুলনায় এগুলো খুবই নগণ্য। এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার সাময়িক অসুবিধার চেয়ে উপকার অনেক অনেক বেশি।
উৎসঃ ডা. তাসনিম জারা, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়
আরও পড়ুনঃ করোনায় নাকের ঘ্রাণ হারালে কী করবেন?