পালস্ অক্সিমিটার : রক্তের অক্সিজেন পরিমাপক যন্ত্র
করোনা রোগীর অক্সিজেন কমে গেলে সে দ্রুত খারাপের দিকে যায়। অক্সিজেনের পরিমাণ কত আছে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। জ্বর হলে শরীরের তাপমাত্রা মাপার জন্য আমরা যেমন থার্মোমিটার ব্যবহার করি তেমনি রক্তে অক্সিজেন মাপার যন্ত্রের নাম পালস্ অক্সিমিটার । এটা আমরা সচারচর ব্যবহার করি না। তাই মাপতে গেলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
যেসব কারণে পালস্ অক্সিমিটার এর অক্সিজেন রিডিং ভুল আসতে পারেঃ
আর সেই ভুলগুলো কীভাবে এড়ানো সম্ভব। শেষে উল্লেখ থাকবে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কত কমে গেলে দ্রুত হাসপাতালে যাবেন।
১। নেলপলিশ আর মেহেদীঃ নখের আলাদা রং, যেমন- নেলপলিশ বা মেহেদী থাকলে অক্সিমিটারের ভেতরের লাইট আটকে যায়। তখন রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ সঠিক ভাবে মাপা সম্ভাব নাও হতে পারে। তাহলে কী করা যাবে? ব্যবহারের আগে নেলপলিশ তুলে ফেলবেন। দুই হাতে মেহেদী থাকলে হাতের আঙ্গুল বাদ দিয়ে পায়ের যে আঙ্গুলে পালস্ অক্সিমিটার ভালোভাবে বসে সেটাতে চেক করতে হবে।
২। হাত-পা খুব ঠাণ্ডা হয়ে থাকাঃ হাত-পা ঠাণ্ডা থাকলে সেখানে রক্ত চলাচল স্বাভাবিকের চেয়ে কম হয়। আর অক্সিমিটার রক্তে অক্সিজেন মাপে। তাই হাত-পা ঠাণ্ডা থাকলে রেজাল্ট ভুল আসতে পারে।
৩। লো-ব্লাড প্রেশারঃ যদি ব্লাড প্রেশার কম থাকে তখন রক্ত চলাচল স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যায়। তাই রেজাল্ট সঠিক নাও আসতে পারে।
৪। কিছু রোগের কারণে ভুল রিডিং আসতে পারেঃ হার্টের ভিতরে যদি সমস্যা থাকে, রক্ত চলাচলে যদি সমস্যা থাকে। যেমন, অনেক ডায়বেটিস রোগীর রক্ত চলাচল স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকে।
আবার, অক্সিমিটার রক্তে অক্সিজেন মাপে তাই যে আঙ্গুলে অক্সিমিটার পড়েছেন সেটাতে রক্ত চলাচল যদি ভালো না হয় কোন রোগের কারণে তাহলে বুঝতেই পারছেন রেজাল্ট সঠিক হবে না। সেক্ষেত্রে অন্যান্য হাতে-পায়ের আঙ্গুলে চেষ্টা করে দেখতে হবে। যদি কোন ভাবেই সম্ভাব না হয়, তখন আর পালস্ অক্সিমিটারের উপর নির্ভর করা যাবে না। চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে হবে। প্রয়োজনে তিনি রক্ত পরীক্ষা করে আপনার রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ নিরুপণ করবেন।
৫। উজ্জ্বল আলোঃ আপনার রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে বাইরের আলো যাতে ব্যঘাত না ঘটায় সে জন্য অক্সিমিটারের নিজস্ব কিছু প্রযুক্তি আছে। তারপরও খুব উজ্জ্বল আলোতে মাপলে ভুল হতে পারে। তাই বলে, অক্সিমিটার কাপড় দিয়ে ঢেকে ব্যবহার করা নিষ্প্রয়োজন। তবে, একদম সরাসরি উজ্জ্বল আলোতে না মাপাই ভালো।
৬। অনেকের বাসায় ব্লাড প্রেশার মাপার যন্ত্র আছে। যেই হাতে প্রেশার মাপছেন সেই হাতের আঙ্গুলে আক্সিমিটার দিলে রেজাল্ট নির্ভুল নাও আসতে পারে। কারণ, ব্লাড প্রেশারের কাপ আপনার হাতের উপর টাইট হয়ে বসে থাকে। সেটা আপনার হাতের আঙ্গুলে রক্ত চলাচলে বাধা দিতে পারে।
৭। অক্সিজেন লেভেল যদি ৭০ এর নিচে নেমে আসে: অক্সিজেন লেভেল ৭০ এর নিচে নেমে গেলে অক্সিমিটার আর সঠিক রেজাল্ট দিতে পারে না।
৮। অক্সিমিটারের ভুল ব্যবহারঃ ঠিক করে পরা হয়নি, পালস্ অক্সিমিটার বেঁকে আছে বা আঙুল কাঁপছে, সিগনাল ভালো না ইত্যাদির কারণে সঠিক রেজাল্ট পাওয়া যায় না। ঠিক করে পরতে হবে সিগনালের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
যারা পালস্ অক্সিমিটার ব্যবহারে ডাক্তারের কাছ থেকে ব্যক্তিগত পরামর্শ পেয়েছেন তারা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শকে প্রাধান্য দিবেন। যারা পালস্ অক্সিমিটারের ব্যবহার এখনও ভালোভাবে বুঝতে পারেননি তারাও একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
রক্তে অক্সিজেনের সংখ্যা কতোতে নামলে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন:
আপনার অক্সিজেনের সংখ্যাটা ৯৫ এর নিচে নামলেই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। তবে অনেক করোনা রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যায় বসে থাকা অবস্থায় অক্সিজেন স্বাভাবিক আছে কিন্তু হাঁটার পরে দেখা যায় অক্সিজেন কমে গেছে। এটা কীভাবে বুঝতে পারবেন? ৪০ কদম হেঁটে দেখবেন অক্সিজেনের পরিমাণ কত থাকে। যদি ৩ পয়েন্ট পর্যন্ত নেমে যায়, ধরেন ৯৬ থেকে ৯৩ হয়ে যায়, তাহলে আপনাকে হাসপাতালে যেতে হবে। এই পরীক্ষাটা করবেন কেবল আপনার অক্সিজেন যদি ৯৬ বা তার বেশি থাকে।
যাদের ফুসফুসের বা হার্টের রোগ আছে তাদের মধ্যে অনেকের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক অক্সিজেনের মাত্রা ভিন্ন। তাদের জন্য যেটা স্বাভাবিক অক্সিজেন তার চেয়ে কমে গেলে হাসপাতালে যেতে হবে।
তাহলে কখন হাসপাতালে যাবেন? অক্সিজেন যদি ৯৫ এর চেয়ে কমে যায়, ৪০ কদম হাঁটার পরে যদি ৩ পয়েন্ট কমে যায়, আর যাদের ফুসফুস বা হার্টের রোগ আছে তাদের জন্য অক্সিজেন যদি স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যায়।
উৎসঃ ডা.তাসনিম জারা, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়
আরও পড়ুনঃ করোনায় শ্বাসকষ্ট হলে যে কৌশল জীবন বাঁচাতে সহায়ক হতে পারে