কৃষ্ণগহ্বর
বা কৃষ্ণবিবর (ব্ল্যাক হোল নামেও পরিচিত) মহাবিশ্বের অস্তিত্ব ও প্রকৃতি বিষয়ক একটি বহুল প্রচলিত ধারণা। কৃষ্ণগহ্বর শব্দের অর্থ কালো গর্ত। একে এই নামকরণ করার পেছনে কারণ হল এটি এর নিজের দিকে আসা সকল আলোক রশ্মিকে শুষে নেয়।
সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব অনুসারে ( তত্ত্বটি হল: স্থান এবং কালের বক্রতার মাধ্যমে মহাকর্ষীয় ত্বরণকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব; স্থান-কালের মধ্যস্থিত পদার্থের ভর-শক্তি এবং ভরবেগের কারণেই এই বক্রতার উৎপত্তি ঘটে।) কৃষ্ণগহ্বর মহাবিশ্বের এমন একটি বস্তু যা এত ঘন সন্নিবিষ্ট বা অতি ক্ষুদ্র আয়তনে এর ভর বিশিষ্ট যে এর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি কোন কিছুকেই তার ভিতর থেকে বের হতে দেয় না, এমনকি তড়িৎচুম্বকীয় বিকিরণকেও (যেমন: আলো) নয়। প্রকৃতপক্ষে এই স্থানে সাধারণ মহাকর্ষীয় বলের মান এত বেশি হয়ে যায় যে এটি মহাবিশ্বের অন্য সকল বলকে অতিক্রম করে। ফলে এ থেকে কোন কিছুই পালাতে পারে না।
কৃষ্ণগহ্বর বা কৃষ্ণবিবর গবেষণার ইতিহাস
বিপুল পরিমাণ ভর বিশিষ্ট কোন বস্তু, যার মহাকর্ষের প্রভাবে আলোক তরঙ্গ পর্যন্ত পালাতে পারে না- এ ধারণা সর্বপ্রথম প্রদান করেন ভূতত্ত্ববিদ জন মিচেল (John Michell)। তার লেখা একটি চিঠিতে ১৭৮৩ সালে তিনি রয়েল সোসাইটির সদস্য এবং বিজ্ঞানী হেনরি ক্যাভেন্ডিসকে (Henry Cavendish) এ সম্পর্কে জানান।
১৭৯৬ সালে গণিতবিদ পিয়েরে সিমন ল্যাপলেস একই মতবাদ প্রদান করেন তার Exposition du système du Monde বইয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় সংস্করণে। কিন্তু পরবর্তী সংস্করণগুলোতে এ সম্পর্কিত ধারণা রাখা হয় নি। কৃষ্ণগহ্বর সম্পর্কিত এ ধরনের মতামত ঊনবিংশ শতাব্দিতে প্রকটভাবে উপেক্ষিত হয়। কারণ আলোর মতো ভরহীন তরঙ্গ কিভাবে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে সেটা বোধগম্য ছিল না।
মহাকাশবিদগণ ১৬ বছর ধরে আশে-পাশের তারামণ্ডলীর গতি-বিধি পর্যবেক্ষণ করে গত ২০০৮ সালে প্রমাণ পেয়েছেন অতিমাত্রার ভর বিশিষ্ট একটি কৃষ্ণগহ্বরের, যার ভর আমাদের সূর্য থেকে ৪ মিলিয়ন গুন বেশি এবং এটি আমাদের আকাশগঙ্গার মাঝখানে অবস্থিত।
১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সালে লাইগো (LIGO) সংগঠন মহাকর্ষীয় তরঙ্গের প্রথম প্রত্যক্ষ সনাক্তকরণের ঘোষণা দেয়, যা ছিল দুটি কৃষ্ণগহ্বরের একত্রীভবনের প্রথম পর্যবেক্ষণ। ডিসেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত ১১ টি মহাকর্ষীয় তারঙ্গিক ঘটনা পর্যবেক্ষিত হয়েছে যার মাঝে ১০ টি ঘটনা কৃষ্ণগহ্বরের একত্রীভবনের ফলে এবং ১ টি ঘটনা দ্বৈত নিউট্রন তারা একত্রীভবনের ফলে সৃষ্ট। ২০১৭ সালে ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ দ্বারা মেসিয়ে ৮৭ ছায়াপথের কেন্দ্রে অবস্থিত অতিভারী কৃষ্ণগহ্বরের পর্যবেক্ষণের পর, দীর্ঘ বিশ্লেষণ শেষে ১০ এপ্রিল ২০১৯ সালে প্রথমবারের মত একটি কৃষ্ণবিবর ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের প্রত্যক্ষ চিত্র প্রকাশিত হয়।
১০ এপ্রিল, ২০১৯ সালে ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ দ্বারা প্রকাশিত কৃষ্ণগহ্বর এর প্রথম ছবি
কৃষ্ণগহ্বরের গঠন
স্বাভাবিকভাবে কোনো একটি নক্ষত্র চুপসে গেলে কৃষ্ণগহ্বরে পরিণত হয়। বিজ্ঞানীদের মতে সব চেয়ে ছোট ব্ল্যাকহোলটির জন্ম ঠিক এই মহাবিশ্বের জন্মের সময়। একটি নক্ষত্রের নির্দিষ্ট জ্বালানি নিঃশেষ হয়ে গেলে এর মৃত্যু ঘটে। যতক্ষণ পর্যন্ত এর অভ্যন্তরীণ হাইড্রোজেন গ্যাস অবশিষ্ট থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত এর ভিতরে নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া চলতে থাকে। হাইড্রোজেন শেষ হয়ে গেলে এর কেন্দ্রীয় মূলবস্তু সংকুচিত হতে থাকে। তবে নক্ষত্রগুলোর ভর হয় অনেক।
আমাদের সবচেয়ে কাছের নক্ষত্র সূর্যের বিস্তৃতি প্রায় 1.3×10^9 km এবং এর ভর প্রায় 2×10^30 kg এর কাছাকাছি। নক্ষত্রগুলোর অস্বাভাবিক ভরের জন্য এদের মাধ্যাকর্ষণও অনেক। কেননা আমরা জানি মাধ্যাকর্ষণের সাথে ভরের একটি অনন্য সম্পর্ক রয়েছে। কারণঃ
F=Gm1m2/r^2 ………… (2)
এটি নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ সূত্র। এখানে G এর মান ধ্রুএর মান বক। G= 6.673×10^-11 যা খুব ছোট। যাই হোক, যখন তুমি m1m2 তে সূর্য এবং পৃথিবীর ভর রাখবে এবং r তাদের মধ্যবর্তী দূরত্ব হলে এদের মধ্যে আকর্ষণ মান হবেঃ 3.76×10^22N ।
যখন নক্ষত্রের বাইরের তাপমাত্রার চাপে ভেতরের মাধ্যাকর্ষণ বাড়তে থাকে তখন, তখন সেই বলের কারণে নক্ষত্র চুপসে যেতে শুরু করে। সব ভর একটি বিন্দুতে পতিত হতে শুরু করে। এটি ধীরে ধীরে ছোট এবং অধিক ঘনত্বে আসতে শুরু করে এবং এক সময় সমস্ত ভর একটি ছোট্ট বিন্দুতে ভিড় করে যার নাম সিঙ্গুলারিটি।
পাতলা প্রশস্ত ডিস্ক দ্বারা প্রসারিত শোয়ার্জস্কিল্ড ব্ল্যাকহোলের দিগন্তের বাইরে থেকে নাসা সিমুলেটেড ভিউ।
সব চুপসে পড়া নক্ষত্রই কিন্তু কৃষ্ণগহ্বরে পরিণত হয়না। কৃষ্ণগহ্বর হবে কিনা তা নির্ভর করে তার ভরের উপর। যাই হোক, কৃষ্ণগহ্বর হতে হলে নক্ষত্রকে বা বস্তুকে একটি নির্দিষ্ট ব্যাসার্ধে আসতে হবে। নিচে সমীকরণটি দেওয়া হলো যার সাহায্যে আমরা নির্ণয় করতে পারি কৃষ্ণগহ্বর হতে হলে কোনো বস্তু বা নক্ষত্রের ব্যাসার্ধে আসা দরকারঃ
Rs=2GM/c^2 ……………………………… (3)
যেখানে M বস্তু বা নক্ষত্রটির ভর। G মহাকর্ষিয় ধ্রুবক। C আলোর বেগ। এই ব্যাসার্ধ পরিমাপের সূত্রটির মান শোয়ার্জস্কিল্ড ব্যাসার্ধ (Schwarzschild radius) পদার্থবিজ্ঞানী Karl Schwarzschild এই সূত্র আবিষ্কার করেছিলেন ১৯১৬ সালে। তার নাম অনুসারে এর নাম রাখা হয়।
আকার তথা ভরের প্রকারভেদ অনুযায়ী কৃষ্ণগহ্বর ৩ প্রকার। সবচেয়ে ছোট আকারের কৃষ্ণগহ্বরকে Primordial Black Holes বলে। এই ধরনের কৃষ্ণগহ্বর গুলি মহাবিস্ফোরণের (Big Bang) কিছু সময় পর তৈরি হয়েছে। এই কৃষ্ণগহ্বরগুলির আকার মাত্র ১ টি পরমাণুর ন্যায় কিন্তু এদের ভর কোন পর্বতের ভরের সমান হয়।
এর পর আসে কিছু মাঝারি আকারের কৃষ্ণগহ্বর যাদের Stellar Mass Black Hole বলে। এই প্রকৃতির কৃষ্ণগহ্বরগুলিকেই আমরা বেশি পরিমাণে চিহ্নিত করতে পেরেছি,যাদের ভর সূর্যের থেকে প্রায় ২০-৩০ গুণ বেশি। কিন্তু এই বিপুল পরিমাণ ভর সঙ্কুচিত হয়ে একটি ছোট বৃত্তের মধ্যে অবস্থান করে যার ব্যাস প্রায় ১৭ কি.মি. হয়।
কিছু কৃষ্ণগহ্বর আকারে বিশাল হয় যাদেরকে Supermassive Black Hole বলা হয়ে থাকে। এই প্রকৃতির কৃষ্ণগহ্বরের ভর প্রায় কয়েক লাখ সূর্যের ভরের সমান। বৈজ্ঞানিক তথ্য প্রমাণ থেকে আমরা জানা যায় যে, প্রতিটি ছায়াপথের কেন্দ্রস্থলে এই প্রকৃতির কৃষ্ণগহ্বর থাকে। আমাদের আকাশগঙ্গার (Milkyway) কেন্দ্রস্থলেও একটি সুপার ম্যাসিভ কৃষ্ণগহ্বর বর্তমান যার নাম Sagittarius A।
কৃষ্ণগহ্বরের কাছে ডিস্ক আকারে কিছু উজ্জ্বল বস্তু দেখতে পাওয়া যায়। প্রশ্ন আসতেই পারে যে যদি কৃষ্ণগহ্বর থেকে কোন আলো বের হতে না পারলে এই আলো দেখা যাচ্ছে কি করে?
একে আমরা Quasar (quasi-stellar object)বলে থাকি। কৃষ্ণগহ্বরের সামনে যা কিছু আসে সেই বস্তুটি সরাসরি কৃষ্ণগহ্বরে চলে যায়, কিন্তু তারমানে এই না যে বস্তুটি সরাসরি ঢুকে যায়। কেন্দ্রে ঢোকার আগে সেই বস্তুটি একটি চাকতির ন্যায় কৃষ্ণগহ্বরকে আগে প্রদক্ষিণ করে তারপর সেটি কৃষ্ণগহ্বরে প্রবেশ করে। এই চাকতিকে বলা হয়ে থাকে Acceretion Disk।
অনেক বস্তু একসাথে এই চাকতি বরাবর প্রদক্ষিণ করতে থাকে তখন অভিকর্ষীয় বলের দরুণ ওদের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে তাপ সৃষ্টি হয়। আর আমরা জানি যে যেকোনো গরম বস্তু আলো বিকিরণ করে। এই ক্ষেত্রেও ঠিক এটাই হয়। যে কৃষ্ণগহ্বরের কাছে নিজের দিকে টানার জন্য যত বেশি বস্তু থাকবে সেই কৃষ্ণগহ্বরের চাকতি তত বেশি উজ্জ্বল হবে।
তার মানে এই নয় যে সব সুপার ম্যাসিভ কৃষ্ণগহ্বরের এই উজ্জ্বল আলো থাকবে। যদি তার কাছে নিজের কেন্দ্রের দিকে টানার জন্য কোন বস্তু না থাকে তাহলে আমরা এই উজ্জ্বল আলো দেখতে পাবো না। সাধারণত সেইসব ছায়াপথের কেন্দ্রেই quasar দেখা যায় যেসব ছায়াপথ নতুন তৈরি হয়েছে তাছাড়া যখন দুটি ছায়াপথের মধ্যে সংঘর্ষ হয় তখনও quasar তৈরি হয় কারণ তখন ছায়াপথের মাঝে থাকা কৃষ্ণগহ্বর নিজের দিকে টানার জন্য অনেক বস্তু পেয়ে যায়। যেহেতু সুপার ম্যাসিভ কৃষ্ণগহ্বর প্রায় প্রতিবছর সূর্যের সমান ভর কে সাবাড় করে তাই এই কৃষ্ণগহ্বর উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরুর দিকে প্রচুর পরিমাণে শক্তি নির্গমন করে থাকে যাকে Cosmic jet বলা হয়।
অনেকের আবার ভুল ধারনা আছে যে কৃষ্ণগহ্বরের অভিকর্ষ বল এত বেশি যে দূর থেকে কোন বস্তুকে নিজের দিকে টেনে নেয়। কিন্তু সত্য এই যে যখন কোন বস্তু কৃষ্ণগহ্বরে খুব কাছে চলে আসে তখন ই কৃষ্ণগহ্বর তাকে নিজের কেন্দ্রের দিকে টেনে নেয়। এই কারণের জন্যই আমরা কিন্তু দেখে থাকি যে অনেক গ্রহ বা নক্ষত্র কোন কৃষ্ণগহ্বর কে প্রদক্ষিণ করছে। ঠিক একই ভাবে যদি আমাদের সূর্য কোনদিন কৃষ্ণগহ্বরে পরিণত হয় তাহলে সৌরজগতের গ্রহগুলো একইভাবে সেই কৃষ্ণগহ্বরকে প্রদক্ষিণ করবে। কিন্তু সূর্যের উদাহরণটা কেবল পাঠকের বোঝার সুবিধারর জন্য বলা, বাস্তবে কিন্তু আমাদের সূর্য কোনদিনই কৃষ্ণগহ্বরে পরিণত হবে না কারণ সূর্যের ভর এতটা বেশি নয় যে সূর্য একটি কৃষ্ণগহ্বরে পরিণত হবে।
কৃষ্ণগহ্বরের প্রধান রহস্য হল আজ পর্যন্ত আমরা এটা জানতে পারি নি যে এর ভেতরে কি হয়। কার্যকরভাবে এর ভেতরে কি হয় সেটা জানা এক কথায় প্রায় অসম্ভব কারণ যদি আমরা তার ভেতরে কোন মহাকাশযানকে পাঠিয়েও দেই তাহলে সেটি কোনদিনই কৃষ্ণগহ্বরের প্রচণ্ড অভিকর্ষের প্রভাব থেকে বের হতে পারবে না এমনকি কৃষ্ণগহ্বরের ভেতরে থেকে কোন সংকেতও পাঠাতে পারবে না ঐ মহাকাশযান।
কৃষ্ণগহ্বর কি পৃথিবীতে বিপর্যয় বা ধ্বংস সৃষ্টি করতে পারে?
ব্ল্যাকহোল মোটেও স্পেস বা মহাশুন্যের এতটা কাছে ভ্রমণ করে না যে, তা কোন তারকা, চাঁদ বা গ্রহ কে তার শিকার বানাতে পারে। আর পৃথিবীও কোন দিন ব্ল্যাকহোলে গিয়ে পতিত হবে না। কারণ, কোন ব্ল্যাকহোলই কিন্তু পৃথিবীর সৌরজগতের এতটা কাছাকাছি নয়। যদি একটি সূর্যের সমান ভরের একটি ব্ল্যাকহোল সূর্যের জায়গায় প্রতিস্থাপিত হয়, তবুও নয়।
কোন কোন ব্ল্যাকহোলের ভর সূর্যের সমতুল্য হতে পারে। কিন্তু তখনও পৃথিবী এবং অন্যান্য গ্রহগুলো ঐ ব্ল্যাকহোলকে কেন্দ্র করে ঘূর্ণায়মান থাকবে। যেমনটা আগে ছিল! সুতরাং, দেখা যাচ্ছে যে- ব্ল্যাকহোল আমাদের জন্য এখনো কোনো হুমকির সংবাদ বয়ে আনেনি এবং অদূর ভবিষ্যতেও আনবে না বলে আশা করা হচ্ছে!
বিখ্যাত নারী জ্যোতির্বিদ Hlavacek- Larrondo বলেন, “মনে হয় আমরা যেই ধরনের আশা করেছিলাম তার চেয়ে বড় ও শক্তিশালী ব্ল্যাকহোল পাচ্ছি এবং তা যথেষ্ট কৌতূহলোদ্দীপক।”
ব্ল্যাকহোলকে মহাকাশের দানব বলে আখ্যায়িত করা হয়। ব্ল্যাকহোল এই মহাবিশ্বের অতি রহস্যময় ব্যাপার! আর বিজ্ঞানীরা নিরন্তর লেগেই আছেন এই রহস্যের পেছনে এবং আশা করা যায়, ধীরে ধীরে রহস্যের জাল থেকে একদিন বেড়িয়ে আসবে এই রহস্যময় ব্ল্যাকহোল। তখন অনেক কিছুই হয়তো ব্যাখ্যা করা যাবে যা এখন আমরা খুঁজে বেড়াচ্ছি!
আরও পড়তে পারেন বজ্রপাত কী, কেন হয় ও বাঁচার উপায়
তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া, সায়েন্স পোর্টাল