করোনা

Coronavirus disease (COVID-19) is an infectious disease caused by a newly discovered coronavirus.
Most people who fall sick with COVID-19 will experience mild to moderate symptoms and recover without special treatment.

করোনাস্বাস্থ্য

যেসব করোনা লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে যাবেন

যেসব করোনা লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে যাবেনযেসব করোনা লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে যাবেন

করোনা লক্ষণ : কখন দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে?

করোনার কোন লক্ষণ দেখা দিলে আপনি বাসায় থাকবেন আর কোন লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে যাবেন সেগুলোই খুব সহজ ভাষায় এই লেখার বিষয়বস্তু। করোনা আক্রান্ত বেশির ভাগ মানুষই সুস্থ হয়ে উঠে বিশেষ কোন চিকিৎসার প্রয়োজন ছাড়া। হাসপাতালে ভর্তি লাগে না। তবে কিছু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হতেই হয়। তাই আপনার জানতে হবে কোন করোনা লক্ষণ থাকলে বাসায় থেকে নিজে পরিচর্যা করবেন আরা কখন দ্রুত হাসপাতালে যাবেন।

যেসব লক্ষণ দেখা দিলে আপনি বাসায় থাকবেন সেগুলো আগে বলছি তাতে বুঝতে সুবিধা হবে।

১। জ্বর: বাসায় থার্মোমিটার থাকলে সেটা দিয়ে মাপবেন। না থাকলে বুকে পিছে হাত দিয়ে দেখলে মনে হয় স্বাভাবিকের চেয়ে গরম তাহলে ধরে নিবেন জ্বর এসেছে।

২। কাশি: বেশিভাগ ক্ষেত্রেই শুকনো কাশি হয়। অর্থাৎ, কাশির সাথে কফ বের হয় না। ফুসফুস বা হার্টের রোগের কারণে যাদের এমনিতেই কাশি থাকে তাদের কাশি স্বাভাবিকের চেয়ে খারাপ হয়ে যায়।

৩। ঘ্রাণশক্তি আর মুখের স্বাদ চলে যাওয়া: অনেক কোভিড রোগী কোন কিছুর গন্ধ শুকতে পারে না। খাবারের স্বাদ বুঝতে পারে না। অথবা ঘ্রাণ ও স্বাদ আগের চেয়ে ভিন্ন হয়ে যায়।

৪। ক্লান্তি: শরীর খুব দুর্বল হয়ে যায়।

আরও কিছু করোনা লক্ষণ আছে যেগুলো একটু কম দেখা যায়। যেমন- স্বর্দি বা নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, মাথাব্যথা, গলাব্যথা, বমিভাব, বমি, ডায়রিয়া, শরীরে আর মাংসপেশিতে ব্যথা।

কনজাংক্টিভিটিস (Conjunctivitis) বা চোখের ইনফেকশন: এটা একটু ব্যাখ্যা করা যাক। কনজাংক্টিভিটিস হলে চোখ দুটো লাল হয়ে যায়, পুঁজ বের হয়ে চোখের পাতা একটা আরেকটার সাথে লেগে যায়। যেটাকে আমরা চোখ ওঠা বলি। এটা সাধারণত কয়েক সপ্তাহে নিজে নিজে সেরে যায়।

গায়ে র‌্যাশ ওঠা: হাতে পায়ের আঙ্গুলের রং বদলে যেতে পারে। এই লক্ষণ দেখা দিলে একজন চিকিৎসক দেখিয়ে নেওয়া শ্রেয়। তিনি বলতে পারবেন এটা করোনা না কি অন্য কারণে হচ্ছে।

এবার একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলা যাক। যে লক্ষণগুলো জানলেন তার কোন একটা দেখা দিলেই করোনা হয়েছে তা নিশ্চিত নয়। করোনা আসার আগেও মানুষের জ্বর, স্বর্দি হতো। তবে এখন লক্ষণ দেখা দিলে করোনার কথা চিন্তা করতে হবে। আর সব ধরনের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। যদি পরীক্ষা করার সুযোগ থাকে তাহলে তো নিশ্চিত হতে পারবেন। হাসপাতালে না যেয়ে বাসায় থাকার এই পরামর্শ কেউ দিলে আপনার খটকা লাগতে পারে। আমরা সাধারণত অসুস্থ বোধ করলে ডাক্তারের কাছে যেতে বলি। কিন্তু করোনার ক্ষেত্রে বলছি উলটো। আসলে হালকা উপসর্গের জন্য আলাদা কোন চিকিৎসা নেই। তাই হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না বরং হাসপাতালে গেলে অন্যান্য ইনফেকশনে আক্রান্ত হতে পারেন।

তবে কিছু করোনা লক্ষণ দেখা দিলে আপনাকে দেরি না করে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে। এসব  লক্ষণ দেখা দিলেই ঘাবড়ে যাবেন না বরং ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করুন কিভাবে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়া যায়।

১। শ্বাসকষ্ট: দম আকটে যাচ্ছে, কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে, হাঁটতে গেলে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে।

২। ঠোঁট, চেহারা নীল হয়ে যাওয়া: এটার মানে আপনার শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ মারাত্মক ভাবে কমে গেছে। রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ আগের ধরে ফেলার জন্য বাসায় পালস অক্সিমিটার ব্যবহার করতে পারেন। অনেক কোভিড রোগী শ্বাস কষ্ট হয় না কিন্তু দেখা যায় অক্সিজেন লেভেল অনেক কম।

৩। প্রসাব বন্ধ হয়ে যাওয়া বা খুব কমে যাওয়া: এটা কিডনি আক্রান্ত হবার লক্ষণ।

৪। বুকে ব্যথা কিংবা চাপ চাপ লাগা: এটা হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ, তীব্র শ্বাসকষ্টেও হতে পারে। বুকে ব্যথা কোনভাবেই অবহেলা করবেন না।

৫। হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, খুব ঘামছেন, মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। এটাও হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ । হার্ট অ্যাটাকে যে সবসময় বুকে ব্যথা থাকবে এটা সঠিক না।

৬। এমন র‌্যাশ উঠেছে যেটার উপর গ্লাস দিয়ে চাপ দিলে মিলিয়ে যায় না। এটা ব্রেনে ইনফেকশনের লক্ষণ হতে পারে।

৭। মুখে কথা আটকে যাচ্ছে বা হাত পা অবশ হয়ে যাচ্ছে, নাড়াতে পারছেন না। অনেকেই  জানেন এটা স্ট্রোকের লক্ষণ।

৮। কাশির সাথে রক্ত যাচ্ছে।

শেষ যে তিনটি করোনা লক্ষণ এর কথা বলবো সেগুলো রোগী হয়তো বুঝতে পারবেন না। রোগীকে যারা সেবা দিবেন তাদের খেয়াল রাখতে হবে।

৯। ঝিমাতে থাকা। রোগী একেবারেই জেগে থাকতে পারছে না। যে সময় স্বাভাবিক ভাবে জেগে থাকতে পারে সে সময় ডেকেও জাগিয়ে তোলা যাচ্ছে না, বারবার ঝিমিয়ে পড়ছে।

১০। কনফিউশন, ভুলে যাচ্ছে, কিছু মনে রাখতে পারছে না। যেটা রোগীর জন্য স্বাভাবিক না।

১১। অজ্ঞান হয়ে পড়া।

এসব লক্ষণ ছাড়াও অন্য কারণে যদি মনে হয় রোগী দ্রুত খারাপ হয়ে যাচ্ছে অথবা যাদের অন্যান্য রোগ আছে, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি এবং বাসায় সেগুলো কন্ট্রোলে রাখা যাচ্ছে না।

শুরুতে জেনেছেন যেসব লক্ষণ দেখা দিলে বাসায় থাকা যাবে। সেগুলোর কোনটা যদি গুরুতর হয়ে যায়। যেমন, ধরেন বমি কিছুতেই থামছে না তখন হাসপাতালে যেতে হবে।

 

উৎসঃ ডা. তাসনিম জারা, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুনঃ পালস্‌ অক্সিমিটার দিয়ে রক্তের অক্সিজেন কীভাবে পরিমাপ করবেন?

 

 

করোনাস্বাস্থ্য

পালস্‌ অক্সিমিটার দিয়ে রক্তের অক্সিজেন কীভাবে পরিমাপ করবেন?

পালস্‌ অক্সিমিটার দিয়ে রক্তের অক্সিজেন কীভাবে পরিমাপ করবেন?পালস্‌ অক্সিমিটার দিয়ে রক্তের অক্সিজেন কীভাবে পরিমাপ করবেন?

পালস্‌ অক্সিমিটার : রক্তের অক্সিজেন পরিমাপক যন্ত্র

করোনা রোগীর অক্সিজেন কমে গেলে সে দ্রুত খারাপের দিকে যায়। অক্সিজেনের পরিমাণ কত আছে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। জ্বর হলে শরীরের তাপমাত্রা মাপার জন্য আমরা যেমন থার্মোমিটার ব্যবহার করি তেমনি রক্তে অক্সিজেন মাপার যন্ত্রের নাম পালস্‌ অক্সিমিটার । এটা আমরা সচারচর ব্যবহার করি না। তাই মাপতে গেলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

যেসব কারণে পালস্‌ অক্সিমিটার এর অক্সিজেন রিডিং ভুল আসতে পারেঃ

আর সেই ভুলগুলো কীভাবে এড়ানো সম্ভব। শেষে উল্লেখ থাকবে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কত কমে গেলে দ্রুত হাসপাতালে যাবেন।

১। নেলপলিশ আর মেহেদীঃ নখের আলাদা রং, যেমন- নেলপলিশ বা মেহেদী থাকলে অক্সিমিটারের ভেতরের লাইট আটকে যায়। তখন রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ সঠিক ভাবে মাপা সম্ভাব নাও হতে পারে। তাহলে কী করা যাবে? ব্যবহারের আগে নেলপলিশ তুলে ফেলবেন। দুই হাতে মেহেদী থাকলে হাতের আঙ্গুল বাদ দিয়ে পায়ের যে আঙ্গুলে পালস্‌ অক্সিমিটার ভালোভাবে বসে সেটাতে চেক করতে হবে।

২। হাত-পা খুব ঠাণ্ডা হয়ে থাকাঃ হাত-পা ঠাণ্ডা থাকলে সেখানে রক্ত চলাচল স্বাভাবিকের চেয়ে কম হয়। আর অক্সিমিটার রক্তে অক্সিজেন মাপে। তাই হাত-পা ঠাণ্ডা থাকলে রেজাল্ট ভুল আসতে পারে।

৩। লো-ব্লাড প্রেশারঃ যদি ব্লাড প্রেশার কম থাকে তখন রক্ত চলাচল স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যায়। তাই রেজাল্ট সঠিক নাও আসতে পারে।

৪। কিছু রোগের কারণে ভুল রিডিং আসতে পারেঃ হার্টের ভিতরে যদি সমস্যা থাকে, রক্ত চলাচলে যদি সমস্যা থাকে। যেমন, অনেক ডায়বেটিস রোগীর রক্ত চলাচল স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকে।

আবার, অক্সিমিটার রক্তে অক্সিজেন মাপে তাই যে আঙ্গুলে অক্সিমিটার পড়েছেন সেটাতে রক্ত চলাচল যদি ভালো না হয় কোন রোগের কারণে তাহলে বুঝতেই পারছেন রেজাল্ট সঠিক হবে না। সেক্ষেত্রে অন্যান্য হাতে-পায়ের আঙ্গুলে চেষ্টা করে দেখতে হবে। যদি কোন ভাবেই সম্ভাব না হয়, তখন আর পালস্‌ অক্সিমিটারের উপর নির্ভর করা যাবে না। চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে হবে। প্রয়োজনে তিনি রক্ত পরীক্ষা করে আপনার রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ নিরুপণ করবেন।

৫। উজ্জ্বল আলোঃ আপনার রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে বাইরের আলো যাতে ব্যঘাত না ঘটায় সে জন্য অক্সিমিটারের নিজস্ব কিছু প্রযুক্তি আছে। তারপরও খুব উজ্জ্বল আলোতে মাপলে ভুল হতে পারে। তাই বলে, অক্সিমিটার কাপড় দিয়ে ঢেকে ব্যবহার করা নিষ্প্রয়োজন। তবে, একদম সরাসরি উজ্জ্বল আলোতে না মাপাই ভালো।

৬। অনেকের বাসায় ব্লাড প্রেশার মাপার যন্ত্র আছে। যেই হাতে প্রেশার মাপছেন সেই হাতের আঙ্গুলে আক্সিমিটার দিলে রেজাল্ট নির্ভুল নাও আসতে পারে। কারণ, ব্লাড প্রেশারের কাপ আপনার হাতের উপর টাইট হয়ে বসে থাকে। সেটা আপনার হাতের আঙ্গুলে রক্ত চলাচলে বাধা দিতে পারে।

৭। অক্সিজেন লেভেল যদি ৭০ এর নিচে নেমে আসে: অক্সিজেন লেভেল ৭০ এর নিচে নেমে গেলে অক্সিমিটার আর সঠিক রেজাল্ট দিতে পারে না।

৮। অক্সিমিটারের ভুল ব্যবহারঃ ঠিক করে পরা হয়নি, পালস্‌ অক্সিমিটার বেঁকে আছে বা আঙুল কাঁপছে, সিগনাল ভালো না ইত্যাদির কারণে সঠিক রেজাল্ট পাওয়া যায় না। ঠিক করে পরতে হবে সিগনালের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

যারা পালস্‌ অক্সিমিটার ব্যবহারে ডাক্তারের কাছ থেকে ব্যক্তিগত পরামর্শ পেয়েছেন তারা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শকে প্রাধান্য দিবেন। যারা পালস্‌ অক্সিমিটারের ব্যবহার এখনও ভালোভাবে বুঝতে পারেননি তারাও একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

রক্তে অক্সিজেনের সংখ্যা কতোতে নামলে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন:

আপনার অক্সিজেনের সংখ্যাটা ৯৫ এর নিচে নামলেই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। তবে অনেক করোনা রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যায় বসে থাকা অবস্থায় অক্সিজেন স্বাভাবিক আছে কিন্তু হাঁটার পরে দেখা যায় অক্সিজেন কমে গেছে। এটা কীভাবে বুঝতে পারবেন? ৪০ কদম হেঁটে দেখবেন অক্সিজেনের পরিমাণ কত থাকে। যদি ৩ পয়েন্ট পর্যন্ত নেমে যায়, ধরেন ৯৬ থেকে ৯৩ হয়ে যায়, তাহলে আপনাকে হাসপাতালে যেতে হবে। এই পরীক্ষাটা করবেন কেবল আপনার অক্সিজেন যদি ৯৬ বা তার বেশি থাকে।

যাদের ফুসফুসের বা হার্টের রোগ আছে তাদের মধ্যে অনেকের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক অক্সিজেনের মাত্রা ভিন্ন। তাদের জন্য যেটা স্বাভাবিক অক্সিজেন তার চেয়ে কমে গেলে হাসপাতালে যেতে হবে।

তাহলে কখন হাসপাতালে যাবেন? অক্সিজেন যদি ৯৫ এর চেয়ে কমে যায়, ৪০ কদম হাঁটার পরে যদি ৩ পয়েন্ট কমে যায়, আর যাদের ফুসফুস বা হার্টের রোগ আছে তাদের জন্য অক্সিজেন যদি স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যায়।

 

উৎসঃ ডা.তাসনিম জারা, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুনঃ করোনায় শ্বাসকষ্ট হলে যে কৌশল জীবন বাঁচাতে সহায়ক হতে পারে

 

 

করোনাস্বাস্থ্য

করোনায় শ্বাসকষ্ট হলে যে কৌশল জীবন বাঁচাতে সহায়ক হতে পারে

করোনায় শ্বাসকষ্ট হলে যে কৌশল জীবন বাঁচাতে সহায়ক হতে পারেকরোনায় শ্বাসকষ্ট হলে যে কৌশল জীবন বাঁচাতে সহায়ক হতে পারে

করোনায় শ্বাসকষ্ট হলেঃ

আজকের লেখার বিষয়বস্তু হচ্ছে করোনায় শ্বাসকষ্ট হওয়ার সাথে সাথে প্রোনিংসহ যে ৩টি পদক্ষেপ আপনি নিতে পারেন। সহজ করে প্রতিটা পদক্ষেপ আলোচনা করবো, বুঝে নেয়ার চেষ্টা করবেন যাতে করে বিপদের সময় ঘাবড়ে না গিয়ে ঠান্ডা মাথায় সঠিক কাজগুলো করতে পারেন।

প্রথম পদক্ষেপ: যাচাই করে দেখা আপনার শ্বাসকষ্টটা ক্ষণস্থায়ী শ্বাসকষ্ট কি না? ক্ষণস্থায়ী শ্বাসকষ্ট অনেক কারণেই হতে পারে। যেমনঃ প্যানিক অ্যাটাক । যেটা তেমন উদ্বেগের কারণ নয়। শ্বাসকষ্ট ক্ষণস্থায়ী কি না সেটা যাচাই করার জন্য আপনাকে তিনটা ছোট ছোট কাজ করতে হবে। প্রথমে একটা ঠান্ডা জায়গায় যাবেন। বাসায় থাকলে রুমের জানালাগুলো খুলে দিবেন। তারপর ধীরে ধীরে নাক দিয়ে শ্বাস নিয়ে মুখ দিয়ে ছাড়বেন। এমন ভাবে ছাড়বেন যেন আপনি একটা মোমবাতি নেভাচ্ছেন। এটা করতে করতে এটা চেয়ারে সোজা হয়ে বসবেন মেরুদন্ডটা টান টান করে। কুঁজো হয়ে বসবেন না। কাঁধ দুটো আরাম করে ছেড়ে দিবেন। হাঁটুর উপর ভর দিয়ে একটু সামনের দিকে ঝুঁকে আসবেন।

এই পদক্ষেপ গুলো নিয়ে দেখেন যে, আস্তে আস্তে আপনার শ্বাসকষ্ট স্বাভাবিক হয়ে আসছে কি না? যদি স্বাভাবিক হয়ে যায় তাহলে সচারচর বিশেষ কোন চিন্তার কারণ থাকে না তবে ব্যতিক্রমও হতে পারে দ্বিতীয় ধাপে বলছি।

দ্বিতীয় পদক্ষেপ: দ্বিতীয় পদক্ষেপে আপনি সিদ্ধান্ত নিবেন হাসপাতালে যাওয়া প্রয়োজন কি না? দ্বিতীয় পদক্ষেপর মধ্যে ৩টা ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতির কথা বলবো। প্রথম দুইটা পরিস্থিতি যাদের বাসায় পালস্ অক্সিমিটার আছে তাদের জন্য। তৃতীয়টা যাদের বাসায় পালস অক্সিমিটার নেই তাদের জন্য।

১। যদি বাসায় পালস্ অক্সিমিটার থাকে তবে সেটা দিয়ে আপনার অক্সিজেন মেপে দেখবেন। অক্সিজেনের পরিমাণ যদি ৯৪ এর কম থাকে তাহলে আপনাকে হাসপাতালে যেতে হবে। তখন আপনার শ্বাসকষ্ট থাকুক বা না থাকুক। তবে যদি আপনার স্বাভাবিক ভাবেই অক্সিজেন কম থাকে ফুসফুসের রোগের কারণে বা অন্য কোন কারণে তবে ৯৪ আপনার জন্য প্রযোজ্য নয়।

২। অক্সিজেন দিয়ে মেপে দেখলেন ৯৪ এর উপরে আছে কিন্তু রোগীর শ্বাসকষ্ট কমছে না। তাহলেও হাসপাতালে যেতে হবে। করোনা আসারও আগেও শ্বাস নিতে কষ্ট হলে রোগীকে হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হতো। সেটা এখনও একই।

৩। বাসায় যদি পালস্ অক্সিমিটার না থাকে তবে রোগীর শ্বাসকষ্ট না কমলে হাসপাতালে যেতে হবে।

তৃতীয় পদক্ষেপ: প্রোনিং (Proning)। যদি দেখেন আপনার অক্সিজেন লেভেল ৯৪ এর চেয়ে কম অথবা আপনার শ্বাসকষ্ট থামছে না বা কমছে না, তাহলে তো আপনাকে হাসপাতালে যেতে হবে। যদি দেখেন যে, করোনায় শ্বাসকষ্ট হলে রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হতে বেগ পেতে হচ্ছে, সীট পাওয়া যাচ্ছে না তাহলে যতক্ষণ না পর্যন্ত আপনার জন্য হাসপাতালে ব্যবস্থা করা হচ্ছে ততক্ষণে আপনি আর একটা কাজ করতে পারেন আপনার ফুসফুসের উপকারের জন্য যেটাকে মেডিক্যালের ভাষায় বলে প্রোনিং। সহজ ভাষায় বললে উপুর হয়ে শুয়ে থাকা। ইংল্যান্ডে হাসপাতালে ভর্তি করোনা রোগীদের এটা প্রয়োগ করা হয়েছে। আমাদের দেশেও করোনা ইউনিটগুলোতে এটা চালু করা আছে। হাসপাতালে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত আপনি এটা বাসায় করতে পারেন। নিয়মটা বলে হচ্ছে মোট ৪ টা পজিশন। প্রথমটা হলো উপুর হয়ে শুয়ে থাকা। তারপর হলো ডান কাত হয়ে শোয়া । তিন নম্বরটা হলো বালিশে হেলান দিয়ে বসা।  একদম উঠে বসে পড়া না আবার একদম চিৎ হয়ে শুয়ে পড়া না। বিছানার সাথে ৩০ থেকে ৬০ ডিগ্রি কোণ করে থাকবেন। আর শেষ টা হচ্ছে বাম কাত হয়ে শোয়া। তাহলে কী হলো? উপুর, ডান, হেলান, বাম। এক একটাতে অন্তত আধা ঘন্টা থাকতে হবে। পারলে ২ ঘন্টা পর্যন্ত চালাবেন। তারপর আবার জায়গা বদলাবেন।

শ্বাসকষ্ট কমাতে প্রোনিং পদ্ধতি
 

ছবিঃ শ্বাসকষ্ট কমাতে প্রোনিং পদ্ধতি

 

কখন এই প্রোনিং করা যাবে না?

আসলে প্রোনিং একজন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে করা হয়। যিনি দেখেন রোগীর জন্য এটা উপযোগী কি না। আগেই বলেছি যেহেতু দেশে সময় লাগছে হাসপাতাল খুঁজে পেতে। সেজন্যই এগুলো আপনাদেরকে বলা। যদি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যেতে পারেন সাথে সাথে তখনতো ডাক্তারের পরামর্শেই চিকিৎসা চলবে। তাহলে এখন যে অবস্থার কথা গুলো বলবো। সেই সময় প্রোনিং করা থেকে বিরত থাকবেন।

১। যদি প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হয়। এটা আসলে বোঝানো একটু কঠিন। তাও চেষ্টা করছি। রোগী মিনিটে শ্বাস নিচ্ছে ৩৫ বারের বেশি বা শ্বাস নিতে অন্যান্য মাংসপেশি ব্যবহার করছে, দুই পাঁজড়ের মধ্যে চামড়া ভিতরের দিকে ঢুকে যাচ্ছে, গলার মাংস পেশি ফুলে উঠেছে ইত্যাদি।

২। রোগী খুব উত্তেজিত অবস্থায় আছে, কনফিউজড অবস্থায় আছে।

৩। ব্লাড প্রেশার ৯০ এর নিচে নেমে গেছে।

৪। রোগীর হার্টের রিদমে সমস্যা আছে।

৫। রোগীর মেরুদন্ড স্টেবল না অথবা বুকে ইনজুরি আছে অথবা কিছুদিন আগে পেটে অপারেশন হয়েছে।  এসব ক্ষেত্রে প্রোনিং করা যাবে না।

আর কিছু ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।  রোগী যদি ৩ মাসের বেশি গর্ভবতী হয়, শরীরের ওজন অনেক বেশি হলে, শরীরে ঘা হয়ে থাকলে, মুখমন্ডলে ইনজুরি থাকলে, খিঁচুনি রোগ বা স্নায়ুতন্ত্রের অন্যান্য রোগ থাকলে।

 

উৎসঃ ডা. তাসনিম জারা, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুনঃ করোনা টিকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নিয়ে যা জানা প্রয়োজন

করোনাস্বাস্থ্য

করোনা টিকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নিয়ে যা জানা প্রয়োজন

করোনা টিকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নিয়ে যা জানা প্রয়োজনকরোনা টিকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নিয়ে যা জানা প্রয়োজন

করোনা টিকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া 

কেউ বছেন টিকা নেয়ার পর দ্বিতীয় দিন শরীরে জ্বর জ্বর ভাব ছিল। আবার কেউ বলেছেন ইনজেকশন দেয়ার সময় পিঁপড়ের কামড়ের মতো সামান্য ঐ ব্যথা ছাড়া তার কিছুই হয়নি। তাহলে টিকা নেয়ার পর কেন কিছু মানুষের শরীরে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়? যাদের দেখা দেয়, তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ব্যবস্থা কি বেশি শক্তিশালী? করোনা টিকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলো নিয়ে স্বচ্ছ ধারণা থাকলে  টিকা নেওয়া আপনার জন্য প্রযোজ্য কি না সেটা বুঝতে সহজ হবে।

টিকা দেয়ার উদ্দেশ্য হলো আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাতে করোনা ভাইরাসকে শত্রু হিসেবে চিনে রাখে। অর্থাৎ, টিকা দেয়ার পর আমরা চাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা টিকাকে সাড়া দিক। সাড়া দেয়ার প্রতিক্রিয়াতে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলো দেখা দেয়। ব্যাপারটি কিছুটা এমন যে, টিকা আমাদের রোধ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কিছুটা ট্রিক করছে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা মনে করছে যে, শরীরে একটা শত্রু ঢুকেছে এটা এখন মোকাবিলা করতে হবে। মোকাবিলা করার পাশাপাশি সে শত্রুকে চিনে রাখে যাতে পরবর্তীতে এমন কিছু শরীরে ঢুকলে যেন সে সেটাকে ফাইট করতে পারে।

আমরা যে জায়গাটাতে টিকা দিচ্ছি সেইখানে প্রতিরোধ ব্যবস্থা এসে মোকাবিলা শুরু করে, যুদ্ধ শুরু করে। ফলে টিকার স্থানে ব্যথা হয়, লাল হয়ে যায়, ফুলে যায়, সাথে সাথে সারা শরীরে কিছু কেমিক্যাল বিস্ফোরণ ঘটে। কিছুটা ফায়ার এলার্মের মত, যে শরীরের এক জায়গায় কিছু শত্রু ঢুকেছে তোমরা প্রস্তুত হও, মোকাবিলা করতে হবে, যুদ্ধে নামতে হবে, এদিকে অ্যান্টিবডি প্রস্তুত হচ্ছে। সেই প্রক্রিয়াতে একটু জ্বর জ্বর লাগে, মাথা ব্যথা হয়, শরীর খুব ক্লান্ত লাগতে পারে, মাংসপেশিতে ব্যথা হতে পারে; তখন এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলো দেখা দেয়। কিন্তু এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রস্তুত হচ্ছে। যাতে আসল করোনা ভাইরাস পরবর্তীতে আমাদের শরীরে ঢোকে তাহলে তাকে কীভাবে মোকাবিলা করবে।

কিন্তু দেখা যায় করোনা ভাইরাসের টিকা দেয়ার পর কারো কারো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয়, আবার কারো হয় না, কারো জ্বর জ্বর লাগে । আবার এমনও আছে যে, কেউ কেউ বলছেন যে, তার কিছুই মনে হয়নি। শুধু মাত্র একটা সুঁচ যখন ইনজেকশনটা দিয়েছে সেটা ছাড়া।

করোনা টিকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া একেক জনের দেহে একেক রকম হয় কেন?

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একেক জনের একেক রকম থাকে। আমাদের একেক জনের শরীর একেক রকম। এটা আপনি চিন্তা করতে পারেন যে, সর্দি-কাশি হলে অনেকেই একদম বিছানায় পড়ে যায়, কাজে যেতে পারছে না বা স্কুলে যেতে পারছে না। আবার কারো সর্দি-কাশি হলে তিনি দিব্যি সব কিছু করে বেড়াচ্ছেন হয়তো থার্মোমিটার দেওয়ার আগে তিনি জানেনই না যে তার জ্বর আসছে।

আমাদের একেক জনের শরীর একেক রকম থাকে। আমাদের জেনেটিক ডাইভারসিটি থাকে। বিভিন্ন কারণে একেক জন একেক ভাবে রেসপন্ড করে। তার ভিতরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিন্তু কাজ করছে। কারো বাইরে থেকে বুঝা যাচ্ছে অনেক বেশি, কারো বাইরে থেকে বুঝা যাচ্ছে না। বয়স যতো বাড়তে থাকে ততো কম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, কম মানুষের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

আবার দেখা গেছে যে, যাদের আগে করোনা হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া একটু বেশি করে দেখা যাচ্ছে। এখন যার হচ্ছে তার অর্থ কি এই যে, যার হচ্ছে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যার হচ্ছে না তার তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী? গবেষণায় দেখা গেছে, কারো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া যেমনই হোক, বেশি হোক বা কমই হোক, আমরা করোনার বিরুদ্ধে যেরকম সুরক্ষা চাই সেটা সবার ক্ষেত্রে মোটাদাগে একই রকম। অর্থাৎ, যার ক্ষেত্রে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হচ্ছে না, টিকা নেয়ার পরে হয়তো তিনি কিছুই বুঝতে পারছেনা না, একটু সুঁচের মতো ব্যথা লেগেছিল কিন্তু তারপর একদম ভালো আছে। তার মানে যে, তার সুরক্ষা কম হচ্ছে ব্যাপারটা মোটেই সেরকম না। তিনি একই রকম সুরক্ষা পাচ্ছেন। আবার অন্যদিকে যাদের হয়তো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া খুব বেশি হচ্ছে, তার মানে যে, সে বেশি সুরক্ষা পাচ্ছে সেরকমও না। তার ক্ষেত্রেও সুরক্ষা সবার মতই একই রকম থাকবে। ভেতরে অ্যান্টিবডি একই করম উৎপন্ন হয়।

টিকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নিয়ে কি খুব বেশি দুঃশ্চিন্তা করার কোন কারণ আছে?

দুঃশ্চিন্তা করার কোন কারণ একদমই নেই। পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলো খুব সাময়িক থাকে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যখন টিকাকে সাড়া দিচ্ছে বা কাজ করছে তখন আমরা এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলো দেখি। সাধারণত কিছু দিনের মধ্যেই সেগুলো সেরে যায় এবং করোনা হলে যেমন ভোগান্তি হয়, শরীরে কষ্ট হয়, তার তুলনায় এগুলো খুবই নগণ্য। এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার সাময়িক অসুবিধার চেয়ে উপকার অনেক অনেক বেশি।

 

উৎসঃ ডা. তাসনিম জারা, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুনঃ করোনায় নাকের ঘ্রাণ হারালে কী করবেন?

 

করোনাস্বাস্থ্য

করোনায় নাকের ঘ্রাণ হারালে কী করবেন

 করোনায় নাকের ঘ্রাণ হারালে কী করবেন

হঠাৎ করে ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলেছি, নাকে কোন গন্ধ পাচ্ছি না, এখন কী করবো? ঘ্রাণশক্তি চলে যাওয়ার একটা প্রধান কারণ হচ্ছে, ভাইরাস দ্বারা ইনফেকশন। করোনায় নাকের ঘ্রাণ হারালে ঘ্রাণ ফিরে পেতে ঘরে বসে কিছু উপায় অবলম্বন করতে পারেন।

আপনারা জানেন, করোনা একটা ভাইরাস। দেশে এখন যে আকারে করোনার প্রাদুর্ভাব রয়েছে তাতে ধরে নিতে হবে আপনার করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু ঘ্রাণশক্তি হারালে হাসপাতালে যাওয়া জরুরী নয়। এই লেখায় জানবেন বাসায় থেকে কী চিকিৎসা নিতে পারেন? আর কি কি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে?

করোনা রোগের কারণে যারা ঘ্রাণশক্তি হারিয়েছেন, তাদের জন্য কোন চিকিৎসা কার্যকর সেই ব্যাপারে নিশ্চিত গবেষণা নেই। তবে করোনা আসার আগেও বেশ কিছু ভাইরাল ইনফেকশনের কারণে মানুষ ঘ্রাণশক্তি হারিয়েছেন। সেই রোগীতের ঘ্রাণশক্তির উন্নতি করাতে এখন যে চিকিৎসার কথা বলবো সেটা কাজ করেছে। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন করোনায় নাকের ঘ্রাণ হারালে রোগীদের ঘ্রাণশক্তি বাড়াতে এই চিকিৎসা দেয়া যেতে পারে। চিকিৎসাটা কী? নিয়ম করে অন্তত ‍দিনে দুই বার চার প্রকার জিনিসের ঘ্রাণ শুকবেন। অর্থাৎ, ঘ্রাণ নিয়ে নিয়ে নিজেকে ট্রেইন করবেন। লেবু, লবঙ্গ, গোলাপ আর ইউক্যালিপটাস।

লেবু আর লবঙ্গ রান্না ঘরেই পাবেন।  গোলাপ আর ইউক্যালিপটাস  হয়তো রান্না ঘরে পাবেন না। গোলাপের বদলে গোলাপজল ব্যবহার করতে পারেন। ঐটা রান্না ঘরেই হয়তো থাকবে। দেশে ইউক্যালিপটাস পাওয়া একটু মুশকিল। তবে ইউক্যালিপটাস তেল পাওয়া যায় বিভিন্ন দোকানে, সেটা ব্যবহার করতে পারেন। সাথে লবঙ্গের তেলও নিয়ে নিতে পারেন। যে চারটা জিনিস বললাম, প্রতিটার ঘ্রাণ নিতে হবে ২০ সেকেন্ড করে। দিনে অনন্ত ২ বার করে করবেন।

কমপক্ষে ৩ মাস ধরে চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। একবারে বললে ৪ প্রকার ঘ্রাণ শুকতে হবে। এক একটা ২০ সেকেন্ড করে দিনে কম পক্ষে ২ বার, অনন্ত ৩ মাস।

এই কাজটা আপনারা এখনই বাসায় শুরু করতে পারেন। তারপর পরিস্থিতি যখন নিরাপদ হবে। তখন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখিয়ে নিবেন। এখানে জেনে রাখা ভাল, সাধারণত রোগীদেরকে এসব ঘ্রাণ যুক্ত শিশি দিয়ে দেওয়া হয়। তারা সকাল বিকাল এগুলো থেকে ঘ্রাণ নেয়। আপনি বাসায় যাতে এ কাজটি শুরু করতে পারেন তাই এমন উপায়ের কথা বলা হয়েছে। তবে আপনি যদি চিকিৎসকের পরামর্শ পেয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই সে কথা শুনবেন। সেই পন্থা মতো চিকিৎসা চালাবেন।

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, ২ সপ্তাহের মধ্যে অনেক করোনার রোগী নাকের ঘ্রাণ শক্তি ফিরে পাচ্ছেন কোন ধরনের চিকিৎসা ছাড়া। তবে ৩ সপ্তাহের মধ্যে যদি ফিরে না আসে। কেবল, তখনই উপরিউক্ত উপায়গুলো শুরু করবেন।

যারা নাকে ঘ্রাণ পাচ্ছেন না তাদের জন্য সাবধানতাঃ

আপনারা ভুল করে পচা খাবার খেয়ে ফেলতে পারেন। খাবার নষ্ট হয়ে গেছে এটা আমরা সাধারণত বুঝি পচা গন্ধ দিয়ে। যাদের নাকের ঘ্রাণ শক্তি নাই তারা এটা বুঝবে পঁচা খাবার খেয়ে ফেলার পরে। ততক্ষণে কিন্তু জিবাণু জায়গা মতো পৌঁছে গেছে। আমরা যে সময়টা পার করছি এটা অসুস্থ হওয়ার জন্য বড় দুঃসময়। তাই এ ব্যাপারে খুব সাবধান। খাবাবের এক্সপাইরি ডেট থাকলে সেটা দেখে নিবেন। আর বাসি খাবার পারতো পক্ষে না খাওয়াই ভালো যদি নিশ্চিত না হতে পারেন খাবারটা ভালো আছে।

আর একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে -ঘ্রাণ শক্তি না থাকলে কোন ভাবে বিল্ডিং এ আগুন লাগলে বা কিছু পুড়তে থাকলে আপনি ধোঁয়ার গন্ধ নাও পেতে পারেন। তাই এই ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে।  বাসায় পারলে স্মোক ডিটেক্টর লাগিয়ে নিবেন। আপনি যদি সুস্থ থাকেন, শুধু মাত্র ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন, সেটা খুব দুঃশ্চিন্তার কারণ নয়। তাই, ঘাবড়ে  যাবেন না। ভয় পাবেন না।

 

উৎসঃ ডা. তাসনিম জারা, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুনঃ করোনা টিকা নেওয়ার আগে যা জানা প্রয়োজন

 

 

করোনাস্বাস্থ্য

করোনা টিকা নেওয়ার আগে যা জানা প্রয়োজন

করোনা  টিকা নেওয়ার আগে যা জানা প্রয়োজনকরোনা টিকা নেওয়ার আগে যা জানা প্রয়োজন

কারা করোনা টিকা নেবেন?

কারা করোনা টিকা নিবেন। কারা নিবেন না। টিকা নিলে কী কী সাইড ইফেক্ট দেখা দেয়। সাইড ইফেক্ট দেখা দিলে কী করবেন? এই লেখাটিতে সবকিছু একেবারে পরিষ্কার হয়ে যাবে।

প্রথমে জানা যাক কারা টিকা বা ভ্যাকসিন নিবেন। প্রায় সবাই করোনা টিকা নিতে পারবেন। ডায়বেটিস এর রোগী, হাই প্রেশারের রোগী, হার্টের রোগী, অ্যাজমার রোগী, কিডনির রোগী সহ বিভিন্ন রোগে যারা ভুগছেন, ওষুধ খাচ্ছেন তারা প্রায় সবাই টিকা নিতে পারবেন। কিছু ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নিতে হবে। এই বিষয়গুলো নিয়ে সব প্রশ্নের উত্তর পাবেন। প্রথমে জানা কে কে টিকা নিতে পারবেন না।

কারা করোনা টিকা নিতে পারবেন না:

 শুধু মাত্র দুই দলের মানুষ এটি টিকা নেওয়া থেকে বিরত থাকবেন। প্রথম দলটি হলো অ্যালার্জি সংক্রান্ত। তবে যে কোন অ্যালার্জি নয়। খুব নির্দিষ্ট ধরনের অ্যালার্জি। টিকায় কয়েকটা নির্দিষ্ট ধরনের জিনিস ব্যবহার করা হয়েছে। সেই উপাদানগুলোতে যদি আপনার গুরুতর অ্যালার্জি থাকে তবেই সমস্যা। তাছাড়া অ্যালার্জিতে তো কোন সমস্যা নেই।

অক্সফোর্ড- অ্যাাস্ট্রাজেনেকার (Oxford- Astrazeneca / Covishield) টিকাতে যা যা আছে সেই নামগুলো হয়তো কঠিন শোনাবে। তাই আপনার জন্য সহজ একটা উপায় হলো অতীতে কোন টিকায় যদি অ্যালার্জি দেখা দিয়ে থাকে তাহলে একজন চিকিৎসকের সাথে কথা বলে নিবেন। তিনি আপনাকে বলে দিবেন আপনার জন্য টিকা নেয়া নিরাপদ হবে কি না।

এরপরেও খুব অল্প কিছু মানুষের টিকা দেয়ার পরে গুরুতর অ্যালার্জি অ্যাকশান দেখা দিতে পারে। এটা হলে সাধারণত টিকা নেয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই দেখা দেয়। এর কার্যকরি চিকিৎসা আছে। তাই টিকা নেয়ার পরে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণে থাকার কথা বলা হচ্ছে। যাতে রিঅ্যাকশন হলে সাথে সাথে চিকিৎসা করে সাজিয়ে ফেলা যায়। তাই দয়া করে টিকা নেয়ার সাথে সাথে টিকাকেন্দ্র থেকে বের হবেন না। নির্ধারিত সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। এর পাশাপাশি আর যারা টিকা নিতে পারবেন না তারা হলো শিশু-কিশোর। যাদের বয়স ১৮ এর নিচে। কারণ টিকা ১৮ বছরের কম বয়সীদের দিলে কি হয়, সে ফলাফল আমরা এখনো পাই নি। এই দুটো দলের বাইরে যারা আছেন তাদের মধ্যে প্রায় সবাই টিকা নিতে পারবেন।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কাদের ক্ষেত্রে সতর্কতা প্রয়োজন সেটা এখন বলছি। এ ক্ষেত্রে ৪টা দল আছে।

করোনা টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে যেসব সতর্কতা অবলম্বন করবেনঃ

১। বর্তমানে যদি আপনি অসুস্থ থাকেন: গায়ে প্রচন্ড জ্বর থাকে, তাপমাত্রা ১০০.৪ ফারেনহাইট এর বেশি হয় বা শরীরে কোন ইনফেকশন থাকে তাহলে সেরে উঠার পরেই টিকা গ্রহণ করবেন। তবে যদি হালকা ঠান্ডা বা সর্দি থাকে তার জন্য টিকা নেবার দেরি করার দরকার নেই।

২। আপনি যদি রক্ত পাতলা করার কোন ওষুধ সেবন করেন: যেমন- ওয়্যারফারিন (Warfarin), অ্যাপিক্সাব্যান (Apixaban) ইত্যাদি। তাহলে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করবেন। কারণ কী? এই ওষুধ খেলে কি টিকা ক্ষতিকর হয়ে যায়? না টিকা আপনার জন্য ক্ষতিকর না। কিন্তু করোনা টিকা দেয়া হয় মাংপেশিতে ইনজেকশনের মাধ্যমে। আর রক্ত পাতলা থাকলে ইনজেকশনে সমস্যা হতে পারে। ব্লিডিং বা রক্তক্ষরণের একটা সম্ভাবনা থাকে। একই ভাবে যদি কারো এমন অসুখ থাকে যাতে রক্ত জমাট বাঁধতে সমস্যা হয় বা রক্ত ক্ষরণের সমস্যা হয় যেমন- হিমোফেলিয়া, তাহলে মাংসপেশিতে ইনজেকশন দিলে রক্তক্ষরণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

৩। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল: সেটা অসুখের কারণেই হোক বা ওষুধের কারণে হোক। অসুখের উদাহরণ হলো এইচআইভি ইনফেকশন। ওষুধের উদাহরণ হলো ক্যান্সারের ওষুধ, উচ্চ মাত্রায় স্টেরয়েড ইত্যাদি। এমন যাদের অবস্থা তারা টিকা নিতে অবহেলা করবেন না। কারণ করোনায় আক্রান্ত হলে আপনার গুরুতর অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। করোনার টিকা আপনাদের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ। এ নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই। তবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যেহেতু দুর্বল তাই টিকার কার্যকারিতা তুলনামূলক ভাবে কম হতে পারে।

কেন ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন? ডাক্তার আপনারকে সাহায্য করবে এমন একটা সময় খুঁজে বের করতে যখন আপনার জন্য টিকা নেয়া সবচেয়ে ভালো হবে। এখানে সূক্ষ্ম কিছু বিষয় বিবেচনা করার আছে। যেমন- রক্তের নিউট্রোফিল কাউন্ট, প্লেটলেট কাউন্ট, ওষুধের কত আগে বা কত পরে টিকা নিলে ভালো হবে। তাই এই সিদ্ধান্ত নিজে নিজে না নিয়ে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে করুন।

৪। ক) যারা গর্ভবতী: তারা টিকা নেয়ার ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। প্রাথমিক গবেষণায় কোন ঝুঁকি বা প্রেগনেন্সিতে কোন সম্ভাবনা দেখা যায়নি। এই টিকার কারণে মায়ের বা গর্ভের বাচ্চার কোন ইনফেকশন হবে না। তবে তথ্য যেহেতু সীমিত তাই আরো বেশি গবেষণার প্রয়োজন তাই টিকা নেয়ার ক্ষেত্রে উপকার আর ঝুঁকিগুলো তুলনা করতে হবে। ‍যুক্তরাজ্যে গর্ভবতী নারীদের টিকা দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে এখনও দেয়া হচ্ছে না। তার কারণ এই না যে টিকা গর্ভবতী নারীদের জন্য অনিরাপদ বা অকার্যকর। প্রাথমিক ভাবে এ দলকে বাদ দেয়া হয়েছে। তবে এই নিয়ম পরিবর্তন হতে পারে। তাই চোখ কান খোলা রাখবেন। যখন আপনাদের জন্য টিকা অফার করা হবে, তখন ঝুঁকির চেয়ে উপকারের সম্ভাবনা বেশি থাকলে করোনা টিকা গ্রহণ করতে পারেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা WHO (World Health Organization) একই পরামর্শ দিয়েছে।

খ) যারা বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন: আপনারাও টিকা নিতে পারবেন। এক্ষেত্রেও তথ্যের অপ্রতুলতা রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত জানা মতে কোন ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। যুক্তরাজ্যে ব্রেস্টফীডিং মায়েদের টিকা দেয়া হচ্ছে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও একই পরামর্শ দিয়েছে। বাংলাদেশে আপাতত এই দলকেও বাদ দেয়া হয়েছে। তবে এই নিয়ম পরিবর্তন হতে পারে। তাই আপনারও চোখ কান খোলা রাখবেন।

এছাড়া আর কারো জন্য বিশেষ সতর্কতা নেই। টিকা নিয়ে আরো কয়েকটা প্রশ্ন অনেক বার আসে। সংক্ষেপে সেগুলোর উত্তর জেনে নিন।

যাদের একবার করোনা হয়েছে তারা টিকা নিবেন কি না?

উত্তর: হ্যাঁ, টিকা নিবেন। কারণ একবার হওয়া মানে আর কখনও হবেনা এমন নিশ্চয়তা নাই। তাই করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার পরও আপনি টিকা নিবেন। করোনার লক্ষণ শুরু হওয়ার অন্তত ২৮ দিন পর টিকা নিবেন। আর যদি কোন লক্ষণ ছাড়া করোনা টেস্ট পজেটিভ আসে। তাহলে যেদিন টেস্ট করিয়েছেন, সেদিন থেকে অন্তত ২৮ দিন পর টিকা নিবেন।

এই গ্যাপ রাখার কারণ হলো- টিকা নেয়ার পর অসুস্থ হলে সেটা কি টিকার কারণে হচ্ছে না কি করোনার ইনফেকশনের কারণে হচ্ছে, এ নিয়ে যাতে কনফিউশন তৈরি না হয় এবং সঠিক চিকিৎসা দেয়া যায়। যদি ২৮ দিন পরেও খুব অসুস্থ থাকেন বা হাসপাতালে ভর্তি থাকেন, তাহলে সুস্থ হওয়ার পরেই টিকা নিবেন।

আর করোনা চিকিৎসার জন্য যদি প্লাজমা থেরাপি নিয়ে থাকেন, তাহলে ডব্লিউএইচও বলছে অন্তত ৯০ দিনের ব্যবধান রাখতে।

যারা অন্য টিকা দিচ্ছেন, যেমন-হেটাটাইটিস-বি টিকা তারা করোনার টিকা নিতে পারবেন কি না?

উত্তরঃ হ্যাঁ, পারবেন। করোনার টিকার নেওয়ার মাঝে অন্য টিকার অন্তত ১৪ দিন ব্যবধান রাখার পরামর্শ দিচ্ছে ডব্লিউএইচও।

টিকা নেয়ার কারণে কি করোনা পজিটিভ আসবে কি না?

উত্তর: না। ভ্যাকসিনে সার্স-কোভিডের ভাইরাস নেই এবং এই ভ্যাকসিনের মাধ্যমে আপনার দেহে করোনা সংক্রমিত হবে না।

করোনা টিকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া:

এখন আসি এই টিকায় পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কথায়। পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কেন হয় সেটা আগে জানা যাক। টিকা নেয়ার উদ্দেশ্য হলো আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রস্তুত করা। যাতে পরবর্তীতে শরীরে করোনা ভাইরাস ঢুকলে সেটাকে প্রতিহত করতে পারে। আমরা চাই আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা টিকাতে সাড়া দিক। যখন সেটা সাড়া দিচ্ছে তখন স্বাভাবিক ভাবেই আমাদের শরীরে কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

যেমন: জ্বর জ্বর লাগা, বমি বমি ভাব ইত্যাদি। এগুলোকে আমরা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে চিনি। এগুলো দুঃশ্চিন্তার কোন কারণ নয়। এগুলো কিছু দিনেই সেরে যাবে। তাহলে  কী কী লক্ষণ দেখা দিতে পারে? খুব কমন কিছু সাইড ইফেক্ট আছে। সেগুলো হলো-যে জায়গাতে টিকা দিয়া হবে সেখানে ব্যথা হওয়া, লাল হয়ে যাওয়া, ফুলে যাওয়া, কালচে হয়ে যাওয়া, হালকা গরম থাকা, কিছুটা চুলকানি, শরীরে ক্লান্তি লাগা, শরীর ভালো না লাগা, মাংসপেশিতে ব্যথা, গিরায় ব্যথা, জ্বর ভাব, কাঁপুনি, মাথা ব্যথা, বমি ভাব ইত্যাদি। সাধারণত এসব সমস্যা বেশি দেখা দেয়।

আর একটু কম দেখা যায়, এমন কিছু সাইড ইফেক্ট আছে। ১০ জনে ১ জনের মধ্যে দেখা দিতে পারে। যে জায়গায় ইনজেকশন দেয়া হয়েছে সেই জায়গায় একটা চাকার মতো বোধ করা, বমি হওয়া, গায়ে জ্বর, সর্দি- কাশি, গলা ব্যথা হওয়া।

আরও কম দেখা যায়, এমন কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হলো- মাথা ঘুরানো, রুচি কমে যাওয়া বা পেটে ব্যাথা, শিরাগ্রন্থি  ফুলে যাওয়া, অতিরিক্ত ঘাম, গায়ে র‌্যাশ বা চুলকানি। এগুলো প্রতি ১০০ জনে ১ জনের দেখা দিতে পারে।

করোনা টীকা নেওয়ার পর সাইড ইফেক্ট দেখা দিলে কী করবেন?

প্রথম কথা হলো ঘাবড়ে যাবেন না। আগেই জেনেছেন, এগুলো স্বাভাবিক। কয়েকদিনের মধ্যেই সেরে  যাবে। ব্যথা আর জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল খেতে পারেন। ১০০০ মিলিগ্রাম খাবেন অর্থাৎ, ৫০০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট হলে ২টা ট্যাবলেট খাবেন। প্যারিসিটামল খেলে টিকার কার্যকারিতায় কোন প্রভাব ফেলবে না। তাই নিজেকে কষ্ট না দিয়ে প্রয়োজনে প্যারাসিটামল খেতে পারেন। আর জ্বর সাধারণত ৪৮ ঘণ্টায় সেরে যায়। যে লক্ষণগুলোর কথা আলোচনা করা হলো, সেগুলোর কোনটা যদি আপনার জন্য গুরুতর হয় বা আপনি যদি খুব অসুস্থ বোধ করেন, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

করোনা টিকা নেওয়ার পর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া না হলে:

পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া না হলেও ঘাবড়ানোর কোন কারণ নেই। তার মানে এই নয় যে, টিকা আপনার শরীরে কাজ করছে না।

আর মনে রাখবেন কোন টিকাই শতভাগ কার্যকর নয়। তাই টিকা নিলেও আমাদেরকে স্বাস্থ্য সচেতনতা মেনে চলতে হবে। দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে। নিয়মিত হাত ধুতে হবে। আর মাস্ক পরতে হবে।

 

উৎসঃ ডা. তাসনিম জারা, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়।

আরও জানুনঃ করোনা আক্রান্ত হলে বাসায় যেসব নিয়ম মেনে চলবেন।

 

করোনাস্বাস্থ্য

করোনা আক্রান্ত হলে বাসায় যেসব নিয়ম মেনে  চলা প্রয়োজন

বাসায় কেউ করোনা আক্রান্ত হলে যেসব নিয়ম মেনে  চলা প্রয়োজনবাসায় কেউ করোনা আক্রান্ত হলে যেসব নিয়ম মেনে  চলা প্রয়োজন

করোনা আক্রান্ত হলে করণীয়:

বাসায় কেউ করোনা আক্রান্ত হলে তার জন্য যদি আলাদা রুম এবং বাথরুমের ব্যবস্থা করা না যায় তাহলে কী কী পদক্ষেপ নিবেন এই বিষয়গুলো আজকে আলোচনা করবো। আর শেষে থাকবে বাসায় কেউ করোনা আক্রান্ত হলে অন্যদের মধ্যে করোনা বিস্তার রোধে কী কী করতে পারেন সেই পরামর্শ। প্রথমে আসি অসুস্থ ব্যক্তির সাথে একই রুমে থাকার বিষয়ে। তারপর বলবো বাথরুম শেয়ার করার উপায়। আর সবশেষে থাকবে বাসায় করোনা বিস্তার রোধে সাবধানতার কথা।

শুরু করা যাক, রুম শেয়ার করার ব্যাপারে ৪টি পরামর্শ নিয়ে।

১। রোগীর সাথে এক রুমে থাকা অবস্থায় দুজনেই সার্জিক্যাল মাস্ক পড়ে থাকবেন আর চেষ্টা করবেন রোগীর রুমে যত কম সময় কাটানো যায়।

২। রোগীর সাথে এক বিছানায় ঘুমাবেন না। রোগী যেখানে আছে তার থেকে অন্তত ৬ফিট দূরে আপনার ঘুমানোর জায়গা ঠিক করবেন। সম্ভব হলে রুমে আর একটা খাট রাখতে পারেন। অথবা মেঝেতে বিছানা পেতে নিবেন। রোগীর খাটের মাথা যেদিকে আপনার খাটের পা সেদিকে থাকবে।

৩। রোগী যে বিছানায় আছে তার চারপাশে একটা পর্দা বা আবরণ তৈরি করবেন। সেটা চাদর দিয়ে হতে পারে, কাঁথা দিয়ে হতে পারে, প্লাস্টিকের বোর্ড দিয়ে হতে পারে। এখানে আপনাকে একটু সৃজনশীল চিন্তা করতে হবে। কী করে রুমের যেখানটাতে অসুস্থ্য ব্যক্তি আছেন, তার থেকে রুমের বাকি জায়গাগুলো আলাদা করা যায়।

৪। রুমে বাতাস ঢুকেতে ও বের হতে পারে এমন ব্যবস্থা করবেন। জানালা খুলে এটা করা সম্ভব।

এখন আসছি বাথরুম নিয়ে আলোচনায়। বাসায় যদি দুইটা বাথরুম থাকে। তাহলে একটা বাথরুম অসুস্থ ব্যক্তি ব্যবহার করবেন। আর অন্য বাথরুম বাকি সবার জন্য।

কিন্তু বাসায় যদি বাথরুম একটাই থাকে তখনতো সবাইকে একই বাথরুম ভাগাভাগি করে ব্যবহার করতে হবে। এই ক্ষেত্রে দুইটা সাবধানতার কথা মাথায় রাখবেন।

১। অসুস্থ ব্যক্তি বাথরুম ব্যবহার করবেন অন্যরা ব্যবহার করার পরে। ধরুন সকালে ঘুম থেকে উঠে তো সবাই একবার বাথরুমে যাবে। তখন অসুস্থ ব্যক্তি বাথরুমে যাবেন সবার শেষে। রোগীর জিনিস পত্র যেমন দাঁত মাজার ব্রাশ থেকে করোনা ছড়াতে পারে। সেগুলো বেসিনে না রেখে একটা ব্যাগে ভরে রাখবেন।

২। প্রতি বার বাথরুম ব্যবহার করার পরে অসুস্থ ব্যক্তি যে জায়গাগুলো ধরেছেন সেগুলো পরিষ্কার করতে হবে। আর জীবাণু মুক্ত করতে হবে।

বাসায় করোনা ছড়ানো প্রতিরোধ করতে করণীয়ঃ

১। যতদূর সম্ভব রোগীকে বাকিদের থেকে আলাদা রাখতে হবে। বিশেষ করে করোনা আক্রান্ত হলে যাদের ঝুঁকি বেশি, যেমন- বয়স ৭০ এর উপরে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম বা অন্যান্য রোগে আক্রান্ত যেমন-ডায়াবেটিস, হার্টের রোগ ইত্যাদি। তাদের থেকে রোগী অন্ততপক্ষে ৬ ফিট দূরত্ব বজায় রাখবেন। রোগীর কাছে যাওয়ার দায়িত্ব বাসার যে কোন একজনকে দিবেন। বয়সে তরুণ অন্যান্য কোন রোগ নেই এমন কেউ হলে ভালো হয়। আর এই পরিচর্যাকারী ব্যক্তি বাসায় অন্যদের সংস্পর্শে আসা কমাবে যতটুকু সম্ভব হয়। রোগীর কাছে সার্জিক্যাল মাস্ক পরে যাবে।

২। রোগীর জন্য, গ্লাস, প্লেট, তোয়ালে, চাদর ইত্যাদি নিত্য ব্যবহার্য জিনিস সব আদালা করে ফেলুন। একই জিনিস ভাগাভাগি করে ব্যবহার করবেন না।

৩। যিনি অসুস্থ তিনি যেন রান্না বান্নায় সাহায্য না করেন। তার খাবারটা রুমের বাইরে দরজায় কেউ দিয়ে যাবে। সে চলে গেলে রোগী রুমের ভিতরে খবার নিয়ে এসে খাবেন।

৪। কোন প্রয়োজনে রোগীর রুম থেকে বের হয়ে বাসার অন্য কোথায় যেতে হয়-যেমন বাথরুমে যাওয়া লাগলো। তখন অন্য কারো সংস্পর্শে আসার একটা সম্ভাবনা থাকে। তাই একটা সার্জিক্যাল মাস্ক পড়েই রুম থেকে বের হওয়া শ্রেয়। আর একটা কাজ করতে পারেন বাসার সবাইকে নিয়ে ফেসবুক বা হোয়াটস অ্যাপ এর একটা গ্রুপ খুলে ফেলতে পারেন। রুম থেকে বেরোনোর আগেই সেখানে একটা ম্যাসেজ করে দিলেন, আবার রুমে ফিরে সবাইকে জানিয়ে দিলেন। তাহলে বাসার অন্যরা সেই সময়টাতে সতর্ক থাকতে পারবেন।

৫। রোগী নিজের রুম আর বাথরুম নিজে পরিষ্কার করবেন। যেসব জায়গা বেশি বেশি স্পর্শ করেছেন যেমন-টেবিল, দরজার হাতল ইত্যাদি পরিষ্কার করতে হবে আর জীবাণুমুক্ত করতে হবে। আর নিয়মিত হাত তো ধুতেই হবে। আর এই সময়ে বাসায় যাতে মেহমান না আসে। আমাদের বাঙালি সংস্কৃতিতে এই চল কেউ অসুস্থ্য হলে আঙ্গুর, বেদানা, কমলা নিয়ে দেখতে যায়। কিন্তু করোনার সময় এটা করলে হিতের বিপরীত হতে পারে বরং ফোন করে রোগীর খোঁজ নিন, ভিডিও কল করেন, স্যোশাল মিডিয়া ব্যবহার করেন। খোঁজ নিলে রোগীর ভালো লাগবে আর যারা মেহমান হয়ে আসবে তারাও নিরাপদে থাকবেন।

 

উৎসঃ ডা. তাসনিম জারা, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুনঃ লকডাউন সময়ে সুস্থ থাকতে করণীয়

করোনাস্বাস্থ্যহেলথ টিপস

লকডাউন সময়ে সুস্থ ও সবল থাকতে যা যা করবেন

লকডাউনলকডাউন সময়ে সুস্থ ও সবল থাকতে যা যা করবেন জেনে নিন

লকডাউন সময়ে সুস্থ ও সবল থাকতে করণীয়ঃ

কোভিড-১৯ করোনাভাইরাসের বেশকিছু টিকা আবিষ্কৃত হলেও লকডাউন সময়ে সবার শরীরের রোগ প্রতিরোধ বাড়ানোর পাশাপাশি শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখার ওপর মনোনিবেশ করা উচিত। এ জন্য যা করতে পারেন:

কাজে ব্যস্ত থাকার জন্যই আমরা সময় মতো নিজের খাবার খেতে পারি না। এর ফলে আমাদের অনেক রকমের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু এই লকডাউন থাকাকালীন সময় মতো নিজের খাবার খেয়ে নেওয়ার সুযোগ পাবেন। যে কোনও রকমের তৈলাক্ত খাবার, ঝাল, মশলাদার খাবার এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। দিনে অন্তত একবার করে ফলের শরবত, পাতিলেবুর শরবত খান যা আপনার শরীর ঠান্ডা রাখবে তার সঙ্গেই ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করবে।

১. লকডাউন সময়ে সক্রিয় থাকুন

লকডাউন সময়ে ঘরে আছেন, তাই বলে বসে থাকবেন না। ঘরের কাজকর্ম করতে করতে ৫ হাজার কদম হাঁটার টার্গেট করুন। ইয়োগা, প্ল্যাংক, স্কিপিং, স্পট জগিংসহ নানা ধরনের ঘরোয়া ব্যয়াম করতে পারেন। সিঁড়ি দিয়ে উঠানামা করুন। এতে আপনার অনেক ধরনের উপকার হবে। ঘুম ভালো হবে, ওজনও বাড়বে না। ঘরে বসে থাকতে থাকতে যে একঘেয়েমি তৈরি হয়েছে সেটাও দূর হবে।

২. খেতে পারেন শুকনো ফল

লকডাউন সময়ে যতটা সম্ভব বাইরে কম বের হওয়াই ভালো। এক্ষেত্রে তার পুষ্টি চাহিদা পূরণে ভালো উৎস হতে পারে শুকনো ফল। ডুমুর, খেঁজুর, অ্যাপ্রিকোটসহ নানা শুকনো ফল স্বাস্থ্যের জন্য বেশি উপকারী।

৩. ভালো চর্বি জাতীয় খাদ্য গ্রহণ

বাদাম বীজ, নারিকেল তেল, ঘি ভালো চর্বির উৎস। এ ধরনের খাবার আপনার মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। পাশাপাশি খসখসে ত্বককেও সুরক্ষা দেবে।

৪. সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করুন

লকডাউন সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া খুব কষ্টের তবুও অনলাইন এ  চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন সি ও ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে পারেন।

৫. শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালীর করার উপায় আমাদের রান্নাঘরেই আছে। আদা, গোলমরিচ, হলুদ, দারুচিনি এগুলো খুবই উপকারী। ভালো ঘুমে সাহায্য করে হলুদ ও দুধের মিশ্রণ। এটি শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া ওষধি হিসেবে তুলসির জুড়ি মেলা ভার।

৬. গরম পানির ভাপ

করোনার একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ শ্বাসকষ্ট। কিন্তু অন্য কারণেও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। অনেকে আবার দীর্ঘদিন ধরেই এ ধরনের সমস্যায় ভোগেন। শ্বাস প্রশ্বাস জনিত সমস্যা থাকলে সকালে উঠার পর প্রথম কাজই হতে পারে গরম পানির ভাপ নেওয়া। দিনে ১/২বার এটি করতে পারেন।

জেনে নিন করোনা ভাইরাস ও অন্যান্য মহামারির ইতিহাস

%d bloggers like this: