স্বাস্থ্যহেলথ টিপস

ভিটামিন এর উৎস, অভাবজনিত রোগ ও অতিরিক্ত গ্রহণের কুফল

ভিটামিন এর উৎস ও অভাবজনিত রোগভিটামিন এর উৎস ও অভাবজনিত রোগ

ভিটামিন

হল সুষম খাদ্যের ৬ টি উপাদানের  একটি । এটি ছাড়া শরীর কখনোই ঠিকভাবে চলতে পারে না। শরীরের অভ্যন্তরীণ সকল প্রণালী সচল রাখার জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিনের অভাবে শরীরে মারাত্মক সব রোগ বাসা বাঁধে। ভিটামিনের অভাব পূরণ করতে হলে নিয়মিত ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে হবে।

 

ভিটামিন চার্ট
ভিটামিন চার্ট

 

প্রাকৃতিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলার মাধ্যমে শরীরের দৈনিক খনিজ ও ভিটামিনে চাহিদা পূরণ করা স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞদের সার্বজনীন পরামর্শ। তবে অনেকেই মনে করেন, শুধু খাবার থেকে পুষ্টি ও খনিজের চাহিদা পূরণ হচ্ছে না, ফলে এর সাপ্লিমেন্ট হিসেবে ট্যাবলেট বা ক্যাপসুলের আশ্রয় নেন। সাপ্লিমেন্ট শরীরের জন্য ভালো, তবে সেটা গ্রহণ করতে হবে নিয়ম মাফিক এবং চিকিৎসকের পরামর্শনুযায়ী। কারণ অতিরিক্ত ভিটামিনও শরীরের জন্য বিষাক্ত হয়ে উঠতে পারে।

যেসব লক্ষণ দেখে শরীরে ভিটামিনের অভাব বুঝতে পারবেন

শরীরে যে কোনো প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের অভাব দেখা দিলে তার স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়, দেখা দিতে পারে নানান সমস্যা। চুল পড়ে যাওয়া, স্নায়ুতে ব্যথা, পেশিতে ব্যথা কিংবা দুর্বলতা, অবসাদ, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি এমনই কিছু শারীরিক সমস্যার উদাহরণ। সকল পুষ্টি উপাদানের অভাবেই শরীর বিশেষ কিছু ইঙ্গিত দেয়, তা হতে পারে শারীরিক কিংবা মানসিক।
পুষ্টিবিজ্ঞানের তথ্যানুসারে স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে এখানে সাত ধরনের ভিটামিনের অভাবের শারীরিক লক্ষণ সম্পর্কে জানানো হল।

শুষ্ক ঠোঁট: ঠোঁট শুকিয়ে যাওয়া কিংবা ফেটে যাওয়া ঘটনা শুধু শীতকালেই ঘটে। তবে শরীরের যদি ভিটামিন বি টুয়েলভ’য়ের অভাব হলে সব ঋতুতেই এই সমস্যায় ভুগতে হবে। হাঁস-মুরগি খাওয়া বাড়ালে এই বি-টুয়েলভ’য়ের অভাব কমতে পারে। অন্যথায় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সাপ্লিমেন্ট নিতে হবে।

অকালে চুল পাকা: অল্প বয়সে চুল পেকে যাওয়ার একটি কারণ হতে পারে শরীরে কপারের অভাব। এজন্য মাশরুম, তিলের বীজ, কাজুবাদাম ইত্যাদি কপারযুক্ত খাবার খেতে পারেন।

খুশকি: চুলে খুশকি হওয়ার মানে হল শরীরে ফ্যাটি অ্যাসিডের অভাব রয়েছে। ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিড যুক্ত তিসির দানা, আখরোট, চিয়া ইত্যাদি খেতে পারেন।

মলিন চুল: চুলে মলিন ভাব দেখা দিলে ধরে নিতে পারেন বিটামিন বি’র অভাব রয়েছে। চুলের উজ্জ্বলতা ফিরে পেতে খাদ্যাভ্যাসে ডিম, হাঁস-মুরগি, গরু-খাসির মাংস ইত্যাদি যোগ করে দেখতে পারেন।

মলিন ত্বক: ভিটামিন ই’র অভাবে ত্বক মলিন হয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে খামারজাত পশুর মাংস, কাঠবাদাম, পালংশাক, উদ্ভিজ্জ তেল ইত্যাদি খাওয়ার মাধ্যমে শরীরে ভিটামিন ই’র অভাব মেটাতে পারেন।

কাঁটাছেঁড়া: সহজেই ত্বক কেটে গেলে বুঝতে হবে শরীরে ভিটামিন সি’র অভাব রয়েছে। সিট্রাস বা টকজাতীয় খাবার এই ভিটামিনের  অভাব মেটাতে পারে।

অবসাদ: যথেষ্ট বিশ্রাম নেওয়ার পরও কিছু মানুষ সবসময় অবসাদগ্রস্ত থাকেন, যার কারণ হতে পারে ভিটামিন ডি’র অভাব। শীতকালে এই সমস্যা বেশি চোখে পড়ে। এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার খেতে হবে। আর এই ভিটামিনের আদর্শ উৎস হল সূর্যের আলো। তাই সকালের রোদে হাঁটার অভ্যাস গড়তে হবে।

 

অতিরিক্ত ভিটামিন গ্রহণর কুফল:

অতিমাত্রায় ভিটা. এ: পানিতে সহজেই মিশে যায় বলে শরীর বাড়তি ভিটামিন ‘এ’ সংরক্ষণ করে রাখতে পারে, বিশেষত যকৃতে। এতে এলার্জি হতে পারে, ফুলে যেতে পারে মুখ, ঠোঁট, জিহবা কিংবা গলা। পাশাপাশি ‘ইনট্রাকরানিয়াল প্রেশার’ মানে মাথায় খুলির ভেতরের অংশে চাপ বৃদ্ধি পাওয়া, মাথা ঘোরা, বমিভাব, হাড়ের জোড়ে ব্যথা, এমনকি অচেতন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে।

অতিমাত্রায় ভিটা. সি: এটিও পানিতে সহজে দ্রবণীয়। অতিরিক্ত ভিটামিন সি’র কারণে ডায়রিয়া, বমিভাব ও বমি, মাথাব্যথা, বৃক্কে পাথর, অনিদ্রা, বুক জ্বালাপোড়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অতিমাত্রায় ভিটামিন ডি: চর্বির সঙ্গে দ্রবণীয় ভিটামিন ডি। শরীরে এর অতিরিক্ত মাত্রা খাওয়ার রুচি কমিয়ে দিতে পারে। পানিশূন্যতা, বমিভাব, মাংসপেশি দুর্বল হওয়া, ডায়রিয়া ইত্যাদিও হতে পারে। এছাড়াও অতিরিক্ত ভিটামিন ডি গ্রহণের সঙ্গে হৃদরোগের সম্পর্ক রয়েছে।

অতিমাত্রায় ভিটা. ই: এই ভিটামিন অতিরিক্ত গ্রহণ করলে ক্লান্তি বাড়ে, মাথাব্যথা এবং ত্বকে ফুসকুড়ি হয়। দৃষ্টিশক্তি ঘোলাটে হওয়া এবং প্রচণ্ড পেট ব্যথাও হতে পারে। এছাড়াও আছে মাথা ঘোরা এবং শ্বাসকষ্ট হওয়ার আশঙ্কা।

অতিমাত্রায় ভিটা. কে: শরীরে অতিরিক্ত ভিটামিন কে’ থাকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল যকৃতের আকার বৃদ্ধি পাওয়া, শরীর ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া, অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, শ্বাসকষ্টের সমস্যা, পেশি শক্ত হয়ে যাওয়া, শরীরে ফুলে যাওয়া, নড়াচড়ায় সমস্যা, চোখের পাতা ফুলে যাওয়া ইত্যাদি।

অতিমাত্রায় ভিটা. বি ওয়ান: পেট খারাপ হওয়ার জন্য দায়ি। এলার্জিও দেখা দিতে পারে, তবে এমনটা খুব কম হয়। এছাড়াও ঠোঁটে নীলচে রং দেখা দিতে পারে এবং হাঁসফাঁস লাগতে পারে।
অতিমাত্রায় ভিটামিন বি টু: এই ভিটামিনের অপর নাম ‘রিবোফ্লাভিন’ যার কারণে প্রসাবের রং হলদে-কমলাটে হয়ে যেতে পারে। অতিরিক্ত গ্রহণ করলে ডায়রিয়া ও ঘন ঘন প্রসাব হতে পারে। কিছু এলার্জির সমস্যা যেমন- চেহারা, ঠোঁট ও জিহবা ফুলে যেতে পারে।

অতিমাত্রায় ভিটা. বি থ্রি: ডাক্তারি ভাষায় একে বলা হয় ‘নিয়াসিন’। শরীরে এর অতিরিক্ত মাত্রা চুলকানি, তলপেটে ব্যথা, ত্বক লালচে হয়ে যাওয়া, গেঁটেবাত, ডায়রিয়া, বুক ধড়ফড় করা ইত্যাদি সমস্যার কারণ হতে পারে।

অতিমাত্রায় ভিটা. বি সিক্স: ভিটামিন বি সিক্স বা ‘পাইরিডক্সিন’ অতিরিক্ত গ্রহণেরও রয়েছে বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। যেমন পায়ের তলায় অসাড়তা কিংবা হাত কাঁপা। স্পর্শ, তাপ ও কম্পন অনুভব করার ক্ষমতাও কমে যেতে দেখা যায়। শরীরের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে, নিজেকে টালমাতাল লাগতে পারে।

অতিমাত্রায় ভিটা. বি টুয়েলভ: বাহু, হাত ও মুখে অসাড়তা দেখা দিতে পারে এই ভিটামিনের অতিরিক্ত মাত্রায়, ‘অপটিক নার্ভ’ বা মস্তিষ্ক থেকে চোখে সংযোগকারী স্নায়ুর ক্ষতি হতে পারে। এক গবেষণায় দেখা যায়, অতিরিক্ত ভিটামিন বি টুয়েলভ প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

অতিমাত্রায় ফোলেট: ভিটামিন বি নাইন বা ফোলেট শরীরে বেশি থাকলে পাকস্থলীতে সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও আছে ত্বকের সমস্যা ও ঘুমের সমস্যার আশঙ্কা।

অতিমাত্রায় বায়োটিন: ভিটামিন বি সেভেন’য়ের অপর নাম বায়োটিন। এই ভিটামিন অতিরিক্ত গ্রহণে ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে, এছাড়াও হতে পারে অস্বাভাবিক ঘাম। হালকা বমিভাব, পেটব্যথা ও ডায়রিয়াও হতে পারে।

প্রতিটি মানুষেরই দৈনিক ভিটামিন চাহিদায় তফাৎ রয়েছে। শিশু থেকে বৃদ্ধ, প্রত্যেকের এই চাহিদা হবে একে অপরের থেকে ভিন্ন। ভিটামিনের অভাব ছাড়া আরও বিভিন্ন কারণে উপরের সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে। তাই হুট করে ফার্মেসি থেকে ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট কিনে খাওয়া উচিত হবে না। তাই যে কোনো ভিটামিনের সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

 

তথ্যসুত্র: পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও হেলথব্লগ

আরও জানতে পড়ুন: কোমর ব্যথা বা ব্যাক পেইন কি, কেন হয় ও তার প্রতিকার

Leave a Reply

%d bloggers like this: