স্বাস্থ্যহেলথ টিপস

ডেঙ্গু জ্বরের কারণ, লক্ষণ ও বাঁচার উপায়

ডেঙ্গু জ্বরের কারণ, লক্ষণ ও বাঁচার উপায়ডেঙ্গু জ্বরের কারণ, লক্ষণ ও বাঁচার উপায়

ডেঙ্গু

হচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, মশাবাহিত রোগগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক । গত পঞ্চাশ বছরে বিশ্বব্যাপী ৩০ গুণ দ্রুতগতিতে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ছে। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে শতাধিক দেশের কয়েক কোটি মানুষ। গবেষণা বলে, বিশ্বের অর্ধেকের বেশি মানুষ ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে রয়েছে এবং শতাধিক দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব রয়েছে। উষ্ণমণ্ডলীয় ও প্রায় উষ্ণমণ্ডলীয় এলাকায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশি। প্রতিবছর প্রায় ৫-১০ কোটি মানুষ নতুন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। ডেঙ্গুতে জর্জরিত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।

ডেঙ্গু রোগের ইতিহাস

প্রায় এক হাজার বছর আগে চীনা রাজবংশে শাসনামলে ডেঙ্গুর প্রকোপ প্রথম দেখা যায়। যদিও স্থানীয়রা তখন একে “জলের বিষ” নামে আখ্যায়িত করতো। চীনাদের ধারণা ছিলো, জলাশয়ের আশেপাশে থাকা উড়ন্ত পতঙ্গ থেকে রোগটি ছড়ায়। এছাড়া ১৬৩৫ সালে ফ্রেন্স ওয়েস্ট ইন্ডিজে ডেঙ্গুর আবির্ভাব ঘটে। ১৬৯৯ সালে পানামাতেও দেখা দেয় এ রোগ। তবে, মহামারী আকারে সর্বপ্রথম ১৭৭৯-১৭৮০ সালের দিকে এশিয়া, আফ্রিকা ও আমেরিকা তিনটি মহাদেশ জুড়ে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পরে। এরপর, ডেঙ্গুর প্রকোপ ১৭৮০ থেকে ১৯৪০ পর্যন্ত তেমন একটা দেখা যায়নি। কিন্তু ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় বদলে যায় ডেঙ্গুর গতিপথ। ২য় বিশ্বযুদ্ধের পরিস্থিতিতেই মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগটি ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে এবং পরবর্তীতে সারাবিশ্বব্যাপী একটা বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করে।

বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব

বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঘটে ১৯৬৪ সালে। ১৯৬৪ সাল থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত খুব অল্প সংখ্যক লোক ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল। সর্বপ্রথম সরকারি রিপোর্টে ডেঙ্গু তে আক্রান্ত হবার খবর আসে ২০০০ সালে এবং তখন থেকে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৩০০০ জন ছাড়িয়েছে ছয়বার – ২০০২ সালে ৬২৩২ জন, ২০০৪ সালে ৩৯৩৪ জন, ২০১৫ সালে ৩১৬২ জন, ২০১৬ সালে ৬০৬০ জন, ২০১৮ সালে ১০১৪৮ জন, এবং ২০১৯ সালে প্রায় ১ লক্ষ ১২ হাজার জন।

বাংলাদেশে ২০১৯ সালের ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। যা ২০১৯ সালের এপ্রিলে শুরু হয়েছিল এবং এখনো এটা চলমান রয়েছে। মাত্র একদিনে (১,আগস্ট) ১৭১২ জন আক্রান্ত হয়েছিল। গড়ে রোগী বেড়েছে ঘন্টায় ৭১ জন করে। কার্যত আগস্ট মাসেই ডেঙ্গু মহামারী আকারে প্রতিটা জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। সবচেয়ে শোচনীয় অবস্থায় ছিলো ঢাকা। তারপর এর আশেপাশের জেলাগুলো । ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মোট মারা গেছেন প্রায় ১৫০ জন। যদিও এখনও ডেঙ্গু মহামারীকে পর্যাপ্ত গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। যার কারণ হচ্ছে পর্যাপ্ত গণসচেতনতার অভাব।

ডেঙ্গু যেভাবে বিস্তার লাভ করে

ডেঙ্গু একটি মশাবাহিত ভাইরাসঘটিত রোগ। সাধারণত দিনে বিশেষ করে শেষ বিকালের দিকে স্ত্রী এডিস মশার কামড়ে ভাইরাসটি মানুষের দেহে প্রবেশ করে। এডিস প্রজাতির মশার মধ্যে – এডিস এজিপ্টি (Aedes aegypti) হচ্ছে প্রধান বাহক, এছাড়াও এডিস অ্যালবপিকটাস (Aedes albopictus), এডিস পলিনেসিনেসিস (Aedes polynesiensis) এবং এডিস স্কিউটেলারিস (Aedes scutellaris) মশা থেকে এ রোগ ছড়াতে পারে।

ডেঙ্গু সরাসরি ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি বাহিত হয় না বা ছড়িয়ে যায় না। ভাইরাসবাহিত এডিস মশা কোন ব্যক্তিকে কামড়ালে, ৪ থেকে ৬ দিনের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বর হতে পারে। আবার, আক্রান্ত ব্যক্তিকে ভাইরাসবিহীন অন্য কোনও এডিস মশা কামড়ালে, সেই মশাটিও ডেঙ্গু জীবাণুবাহীতে পরিণত হয়। প্রায় এক সপ্তাহ পরে মশাটি একজন সুস্থ ব্যক্তিকে কামড় দেওয়ার সময় আবার ভাইরাস সংক্রমণ করতে পারে। মশাটি ডিম দেওয়ার জন্য জল ভরা পাত্রে খোঁজ করতে ৪০০ মিটার অবধি উড়ে যেতে পারে তবে সাধারণত মানুষের আবাসের কাছাকাছি থাকে। এভাবে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে ডেঙ্গু

মানুষ এই সংক্রমণটি এক দেশ থেকে অন্য দেশে বা এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে নিয়ে যায় যখন ভাইরাসটি রক্তে সঞ্চালন করতে থাকে এবং পুনরুৎপাদন হতে থাকে। এডিস ইজিপ্টি মশা তার খাওয়ার সময়কালে একাধিক ব্যক্তিকে কামড় দিতে পছন্দ করে। ফলে এডিস মশা একটি অত্যন্ত দক্ষ মহামারী বাহক মশাতে পরিণত হয়েছে ।

ডেঙ্গু ভাইরাস মানবদেহে যেভাবে সংক্রমণ ঘটায়

ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী মশা যখন কোন ব্যক্তিকে কামড়ায়, ভাইরাসটি মশার লালা সহ ব্যক্তিটির ত্বকে প্রবেশ করে। ভাইরাসটি রক্তের একটি উপাদান শ্বেত রক্ত কণিকার সাথে আবদ্ধ হয়ে এর ভিতরে প্রবেশ করে এবং কোষগুলির ভিতরে পুনরুৎপাদন করে যখন শ্বেত রক্ত কণিকাগুলি সারা শরীর জুড়ে চলাচল করতে থাকে। শ্বেত রক্ত কণিকা বা কোষগুলি বেশ কয়েকটি সিগন্যালিং প্রোটিন, যেমন সাইটোকাইনস এবং ইন্টারফেরন তৈরি করে প্রতিক্রিয়া জানায় যেগুলো জ্বর, ফ্লুর মতো লক্ষণ এবং মারাত্মক ব্যথার মতো অনেক লক্ষণগুলির জন্য দায়ী।

গুরুতর সংক্রমণের ক্ষেত্রে, দেহের অভ্যন্তরে ভাইরাসের উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায় এবং আরও অনেকগুলি অঙ্গ (যেমন যকৃত এবং অস্থি মজ্জা) আক্রান্ত হতে পারে। কৈশিক ব্যাপ্তিযোগ্যতার (Capillary Permeability) কারণে রক্ত প্রবাহ থেকে ফ্লুয়িড বা তরল ছোট রক্তনালীগুলির প্রাচীরের মধ্য দিয়ে শরীরের গহ্বরগুলিতে প্রবেশ করে। ফলস্বরূপ, রক্তনালীগুলিতে কম রক্ত সঞ্চালিত হয় এবং রক্তচাপ এত কম হয়ে যায় যে এটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলিতে পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ করতে পারে না। অধিকন্তু, স্ট্রোমাল কোষগুলির সংক্রমণের কারণে অস্থি মজ্জা অকার্যকর হয়ে যায়, যার ফলে রক্তের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান প্লেটলেটগুলি হ্রাস পেতে থাকে। এই প্লেটলেটগুলি রক্ত জমাট বাঁধার জন্য প্রয়োজনীয়। সুতরাং যতবেশি প্লেটলেট হ্রাস পাবে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি তত বাড়বে যা ডেঙ্গু জ্বরের একটি বড় জটিলতা।

ডেঙ্গুর লক্ষণ ও উপসর্গ

সাধারণ ডেঙ্গু জ্বর

ডেঙ্গুতে ফ্লুর মতো লক্ষণ সৃষ্টি হয় এবং এটি ২-৭ দিনের জন্য স্থায়ী হয়। ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত আক্রান্ত মশার কামড়ের ৪-১০ দিন পরে (ইনকিউবেশন পিরিয়ডের পরে) ঘটে। ডেঙ্গুতে উচ্চ জ্বরের (৪০° সেলসিয়াস বা ১০৪° ফারেনহাইট) সাথে কমপক্ষে নিম্নলিখিত দুটি উপসর্গের সাথে থাকে।

• উচ্চ জ্বর (৪০° সেলসিয়াস বা ১০৪° ফারেনহাইট)
• মাথা ব্যাথা
• চোখের পিছনে ব্যথা
• বমি বমি ভাব বা বমি
• গ্রন্থি স্ফীত হয়ে যাওয়া
• জয়েন্ট, হাড় বা পেশী ব্যথা
• ফুসকুড়ি

মারাত্মক ডেঙ্গু

মারাত্মক ডেঙ্গুতে পরিণত হওয়ার সময়, অসুস্থতার প্রথম লক্ষণের প্রায় ৩-৭ দিন পরে সংকটপূর্ণ পর্যায়টি ঘটে। এই সময় তাপমাত্রা হ্রাস পাবে; এর অর্থ এই নয় যে ব্যক্তি প্রয়োজনীয়ভাবে সুস্থ হয়ে উঠছে। অন্যদিকে, এই সতর্কতা লক্ষণগুলিতে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন কারণ এটি মারাত্মক ডেঙ্গু হতে পারে-

• সাংঘাতিক পেটে ব্যথা
• অবিরাম বমি
• মাড়িতে রক্তপাত
• রক্ত বমি
• দ্রুত শ্বাস – প্রশ্বাস
• ক্লান্তি / অস্থিরতা

গুরুতর ডেঙ্গু সন্দেহ হলে ব্যক্তিকে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে  নিয়ে যাওয়া উচিত কারণ:

• রক্তচাপ হঠাৎ বিপজ্জনকভাবে কমে গিয়ে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম হতে পারে। সাধারণত আক্রান্ত রোগীদের ৫% ক্ষেত্রে ডেঙ্গু    শক সিনড্রোম হয়ে থাকে।
• প্রচুর রক্তক্ষরণ
• গুরুতর অঙ্গ প্রতিবন্ধকতা

ডেঙ্গু জ্বরের ঝুঁকিসমূহ:

এডিস মশা যেসব স্থানে রয়েছে, সেখানেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
এলাকাঃ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ও প্রায় গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশি। আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা, এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব রয়েছে।
মৌসুমঃ গরম এবং বর্ষাতেই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশি থাকে। সাধারণত মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু হয়ে থাকে। শীতকালেতে লার্ভা অবস্থায় ডেঙ্গু মশা অনেক দিন বেঁচে থাকে, ফলে শীতকালে প্রাদুর্ভাব একেবারে কমে যায়। বর্ষাতে লার্ভা থেকে নতুন করে ডেঙ্গু ভাইরাস বাহিত মশা বিস্তার লাভ করে।
পরিবেশঃ যেসব স্থানে স্বচ্ছ পানি জমে থাকে, যেমন ডাবের খোসা, পরিত্যক্ত টায়ার, খোলা পানির ট্যাংক, ফুলের টব ইত্যাদিতে এডিস মশা ডিম পারে। এছাড়া একুরিয়াম, ফ্রিজ বা এয়ার কন্ডিশনারের নিচের পানি জমে থাকলে সেখানেও ডিম পারতে পারে।

ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত অধিকাংশ রোগীই সাধারণত ৫ থেকে ১০ দিনের মধ্যে এমনিতেই ভালো হয়ে যান, বিশেষ কোন ধরনের চিকিৎসা ছাড়াই। তবে আক্রান্ত রোগীকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে। পাশাপাশি ডেঙ্গুজনিত কোনো মারাত্মক জটিলতা যাতে না দেখা দেয়, তার ব্যবস্থাও নিতে হবে। সাধারণত বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হয়। চিকিৎসার পাশাপাশি আরও কিছু বিষয় মেনে চলতে হবে।

পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেয়াঃ সম্পূর্ণ সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বিশ্রামে থাকতে হবে।
সুষম খাদ্য আহারঃ পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার পানি, ডাবের পানি ও অন্যান্য তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে।
আইভি স্যালাইনঃ খাবার খেতে না পারলে, রোগী যেন দুর্বল না হয়ে পড়েন সেক্ষেত্রে দরকার হলে ডাক্তারের পরামর্শে শিরাপথে স্যালাইন দেওয়া লাগতে পারে।

প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধঃ জ্বর কমানোর জন্য শুধু প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ যথেষ্ট। তবে, অন্যান্য ব্যাথানাশক (এনএসআইডি) যেমন এসপিরিন, ডাইক্লোফেনাক, ইন্ডোমেথাসিন কোনোক্রমেই খাওয়ানো যাবে না, কারণ এতে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বেড়ে যাবে। ডাইক্লোফেনাক, ইন্ডোমেথাসিন আক্রান্ত ব্যাক্তির জ্বর নামিয়ে এনে ঘাম ঝরিয়ে শকে নিতে পারে। এতে কিডনির ক্ষতির পাশাপাশি খাদ্যনালিতে রক্তক্ষরণ ত্বরান্বিত করে জীবনের ঝুঁকি রয়েছে। জ্বর বা ব্যাথা কমানোর জন্য সাপোজিটরি নিলে শুধুমাত্র প্যারাসিটামল নেয়া যাবে।
গা মোছানোঃ জ্বর কমানোর জন্য ভেজা কাপড় বা তোয়ালে দিয়ে বারবার গা মোছাতে হবে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয়

ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধ করলে গেলে প্রথমেই এডিস মশার বিস্তার রোধ এবং মশার কামড় থেকে সুরক্ষিত থাকতে হবে। মশা যাতে না কামড়াতে পারে, সে ব্যবস্থা করতে হবে। বাড়ির চারপাশের ঝোপ ঝাড়, জঙ্গল, জলাশয় ইত্যাদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এডিস মশা মূলত স্বচ্ছ পানি জমে থাকে এসব স্থানেই ডিম পারে। তাই ডাবের খোসা, ফুলদানি, টব, পরিত্যক্ত টায়ার ইত্যাদি সরিয়ে ফেলতে হবে। খোলা পানির ট্যাংক, ফুলের টব ইত্যাদিতে যেন পানি জমে না থাকে সে দিক নিশ্চিত করতে হবে। এডিস মশার বিস্তার রোধে আমাদের করণীয়-

পরিবেশ ব্যবস্থাপনাঃ চারপাশের অপ্রয়োজনীয় পাত্র বা কন্টেইনার নষ্ট করে ফেলা বা এমন ভাবে সরিয়ে রাখা যাতে পানি না জমতে পারে। খোলা পানির ট্যাংকেও এডিস মশার লাভা জমে থাকতে পারে। এটা এমনভাবে রাখতে হবে যাতে এডিস মশার ডিম না পাড়তে পারে এবং এতে বংশবৃদ্ধি না করতে পারে।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনাঃ গৃহস্থালি বা অন্য কোন কাজে ব্যাবহৃত অপচনশীল বর্জ্য সঠিকভাবে ব্যাবস্থাপনা করতে হবে। লার্ভার আবাসস্থল দমিয়ে রাখতে “সংরক্ষণ, সংগ্রহ ও ধ্বংস” নীতিটি খুবই কার্যকর।
রাস্তাঘাট পরিষ্কার রাখাঃ নিয়মিত রাস্তা পরিষ্কার রাখা আবশ্যক। এছাড়া নালা নর্দমা পরিষ্কার রাখতে হবে যাতে পানি জমতে না পারে।

ব্যাক্তিগত প্রতিরোধঃ ব্যাক্তিগতভাবে কিছু পদক্ষেপের মাধ্যমে খুব সহজে ও কার্যকরভাবে ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধ করা যায়

• ফুলহাতা ও হালকা রংয়ের কাপড় পরিধান করা।
• দরজা ও জানালায় মশা প্রতিরোধী নেট লাগানো
• ঘুমানোর সময় মশারী ব্যাবহার করে ঘুমানো, যাতে মশা কামড়াতে না পারে। এডিস মশা সাধারণত দিনে বেলায় কামড়ায়।
• ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীদেরও মশারীর নিচে রাখাতে হবে যাতে, যাতে অন্যদের জন্য ঝুঁকি না বাড়ে।
• শরীরের অনাবৃত অংশে মশা প্রতিরোধী ক্রীম লাগানো যেতে পারে।

যেহেতু ডেঙ্গুর নির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা বা ভ্যাকসিন নেই সেহেতু “রোগ প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম”। যেখানেই এডিস মশা সেখানেই ডেঙ্গুর সম্ভাবনা । কাজেই প্রতিরোধের প্রথম ধাপ হবে, এডিস মশার বিস্তার রোধ এবং মশার কামড় থেকে সুরক্ষিত থাকা। এডিস মশার থেকে সুরক্ষিত থাকলেই বাংলাদেশে ডেঙ্গু মোকাবেলা করা সম্ভব হবে। আর এর জন্য আমাদের নিজেদের পরিষ্কার পরিছন্ন থাকতে হবে এবং সেই সাথে আমাদের চারপাশের পরিবেশকেও পরিষ্কার রাখতে হবে।

 

তথ্যসূত্র: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, হেলথব্লগ

আরও পড়ুন ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

Leave a Reply

%d bloggers like this: