বাংলাদেশ ইতিহাস

ঢাকার ইতিহাস

মতিঝিল শাপলা চত্বর - Motijheel Shapla Chattarমতিঝিল শাপলা চত্বর - Motijheel Shapla Chattar dhaka

ঢাকার ইতিহাস -এর ভূমিকা:

ঢাকার ইতিহাস যেন কুয়াশার চাদরে ঢাকা; ঠিক যেন সুস্পষ্ট নয়। গবেষণা বলে ঢাকার ইতিহাস অন্তত হাজার বছরের। অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ঢাকা আজ দক্ষিণ এশিয়ার একটি স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। প্রশাসনিকভাবে এটি দেশটির ঢাকা বিভাগের প্রধান শহর। ভৌগোলিকভাবে এটি বাংলাদেশের মধ্যভাগে বুড়িগঙ্গা নদীর উত্তর তীরে একটি সমতল এলাকাতে অবস্থিত। ঢাকা একটি অতিমহানগরী (মেগাসিটি); ঢাকা মহানগরী এলাকার জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৮০ লক্ষ। বাহিরের জগতের কাছে ঢাকা পরিচিত মসজিদের শহর, রিকশার রাজধানীর মত হাজারো নামে পরিচিত। আধুনিক ঢাকা গড়ে ওঠার পেছনে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী এক ইতিহাস। সেই মোঘল আমল থেকে সিরাজউদ্দৌলা, সেখান থেকে পাকিস্তানী শাসনের পর মুক্তিযুদ্ধ এবং সবশেষে আধুনিক ঢাকা- অল্প সময়ের মধ্যেই ঢাকা নিজের ঝুলিতে পুরেছে বেশ কিছু ইতিহাস।

 

ঐতিহাসিক ঢাকার অবস্থান:

ঢাকা মধ্য বাংলাদেশে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে ২৩●৪২’ থেকে ২৩●৫৪’ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০●২০’ থেকে ৯০●২৮’ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। নিম্ন গাঙ্গেয় সমভূমিতে অবস্থিত এই শহরের মোট আয়তন ৩৬০ বর্গ কি.মি. (১৪০ বর্গ মাইল)।যদিও পূর্বের ঢাকার ইতিহাস আর এখনকার ঢাকার মধ্যে অনেক অমিল। ঢাকায় এখন মোট ২৪ টি থানা আছে। এগুলো হলো – লালবাগ, কোতোয়ালি, সূত্রাপুর, হাজারীবাগ, রমনা, মতিঝিল, পল্টন, ধানমণ্ডি, মোহাম্মদপুর, তেজগাঁও, গুলশান, মিরপুর, পল্লবী, শাহ আলী, তুরাগ, সবুজবাগ, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, ডেমরা, শ্যামপুর, বাড্ডা, কাফরুল, কামরাঙ্গীর চর, খিলগাঁও ও উত্তরা। ঢাকা শহরটি মোট ১৩০টি ওয়ার্ড ও ৭২৫টি মহল্লায় বিভক্ত। ঢাকা জেলার আয়তন ১৪৬৩.৬০ বর্গ কিলোমিটার (৫৬৫ বর্গমাইল) এই জেলাটি গাজীপুর, টাঙ্গাইল, মুন্সিগঞ্জ, রাজবাড়ী, নারায়ণগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ জেলা দ্বারা বেষ্টিত।

 

 ঢাকার নামকরণের ইতিহাস: 

অন্যান্য স্থানের মত ঢাকার নামকরণ নিয়ে রয়েছে নানা মত। ঢাকার  ইতিহাস ঘেঁটে উল্লেখযোগ্য মতগুলো হলঃ

১। ঢাক বা ঢাকি হতে ঢাকা:

বাংলাদেশের এ অঞ্চলে প্রচুর ঢাক বা ঢাকিগাছ (বৈজ্ঞানিক নাম Butea Frondosa) জন্মাতো। ঢাক বা ঢাকিগাছের পরিমাণ অনেক বেশি থাকায় এলাকাটির নাম হয় ঢাকা।

২। দেবী দুর্গার গুপ্ত বা ঢাকা অবস্থায় থাকার কারণে ঢাকা:

দেবী দুর্গা গুপ্তস্থানে লুকায়িত ছিলেন। ভক্তরা খনন কালে এ স্থানে দেবীকে আবিষ্কার করেন। গুপ্তস্থান বা ঢাকা অবস্থান হতে দেবীকে এস্থানে (ঢাকা-ঈশ্বরী) পাওয়া যায় তাই নাম হয় ঢাকা। এর প্রমাণ পাওয়া যায় ঢাকেশ্বরী মন্দির স্থাপনের মধ্য দিয়ে।

৩. ঢাক বা ড্রাম বাজানো থেকে ঢাকা:

ঢাকার  ইতিহাস বলে কথিত আছে মুঘল সুবাদার ইসলাম খান ১৬১০ সালে এ স্থানে প্রাদেশিক (সুবাহ) রাজধানী উদ্বোধনের দিন ঢাক বা ড্রাম বাজিয়ে আনন্দ উৎসব করেছিলেন। এই ঢাক বাজানোকে কেন্দ্র করে স্থানটির নাম হয় ঢাকা।

৪. ঢাকাইয়া উপ ভাষা হতে ঢাকা:

এককালে ঢাকাইয়া উপভাষা বা ঢাকা ভাষা নামে একটি উপ ভাষার প্রচলন ছিল। এখনো ঢাকার আদিবাসিন্দাদের মধ্যে ঢাকাইয়া ভাষার প্রচলন রয়েছে। এই উপভাষায় কথা বার্তা বলার জন্য স্থানটিকে ঢাকা নামে অভিহিত করা হয়।

৫. ঢাক্কা শব্দ হতে ঢাকা:

ঢাকার  ইতিহাস ঘেঁটে পাওয়া যায় রজত রঙ্গিণীতে ঢাক্কা শব্দটি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এখান হতে বুড়িগঙ্গা তীরবর্তী এলাকা পর্যবেক্ষণ করা হতো বিধায় ঢাক্কা শব্দ হতে নামকরণ হয়েছে ঢাকা। এমতালম্বীরা প্রমাণস্বরূপ ইংরেজিতে ঢাকাকে Dacca লেখার কথা উপস্থাপন করে থাকেন।

 

৬. পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ডবাক হতে ঢাকা:

এলাহাবাদ (ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি শহর যার বর্তমান নাম প্রয়াগরাজ) লিপিতে সমুদ্র গুপ্তের আমলে ডবাক নামে পূর্বাঞ্চলের একটি রাজ্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই ডবাক রাজ্য হতে ঢাকার উৎপত্তি হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। আর ডবাক রাজ্যটি এ এলাকায় অবস্থিত ছিল।

ঢাকার স্থান নাম নিয়ে আরো মতবাদ থাকতে পারে। ঢাকার  ইতিহাস ঘেঁটে ঢাক বা ড্রাম বাজিয়ে মুঘল সুবাদার ইসলাম খান কর্তৃক প্রাদেশিক রাজধানীর উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে ’ঢাকা’ নামের উৎপত্তি যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয়।

 

ঢাকার রাজধানী হবার ইতিহাস:

ঢাকার ইতিহাস পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় যে ঢাকা কতবার বাংলার রাজধানী হয়েছিল এ নিয়ে অনেক বিভ্রান্তিকর তথ্য পাওয়া যায়। তবে যদি প্রশ্ন করা হয় যে ঢাকা মোট কতবার বাংলার রাজধানী হয় সেক্ষেত্রে উত্তর হচ্ছে ৪ বার, যদি প্রশ্ন করা হয় যে ঢাকা মোট কতবার রাজধানী হয় সেক্ষেত্রে উত্তর হবে ৫ বার, আবার যদি প্রশ্ন হয় ঢাকা মোট কতবার বাংলাদেশের রাজধানী হয় এক্ষেত্রে উত্তর হবে ১ বার। ঢাকার ইতিহাস বলে যে-

  • ১৬১০ সালের ১৬ জুলাই সুবেদার ইসলাম খাঁ বার ভূইয়াদের নেতা মুসা খাঁ কে পরাজিত করে বাংলা দখল করেন এবং ঢকার নাম রাখেন জাহাঙ্গীরনগর। এই সময় বাংলার রাজধানী রাজমহল থেকা ঢাকায় স্থানান্তরিত করা হয়।
  • ১৬৬০ সালে মীর জুমলা বাংলার সুবেদার হলে ঢাকাকে পুনরায় রাজধানী করেন।
  • ১৯০৫ সালে বাংলা ও বিহার নিয়ে প্রদেশ করা হলে তার রাজধানী হয় ঢাকা কিন্তু ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গের ফলে ঢাকা রাজধানীর মর্যাদা হারায়।
  • ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হলে পশ্চিম পাকিস্থানের রাজধানীর নাম হয় করাচি এবং পূর্ব পাকিস্থানের রাজধানীর নাম হয় ঢাকা।
  • ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ঢাকাকে বাংলাদেশের রাজধানী করা হয়।

ঐতিহাসিক ঘটনাবলী:

ঢাকার ইতিহাস পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় যে, মুসলিম পূর্ব যুগে বর্তমান ঢাকা জেলা অঞ্চল ‘‍বঙ্গ’ নামে পরিচিত প্রশাসনিক অঞ্চলের অন্তর্ভূক্ত ছিল। এর কিয়দংশ কখনো কখনো সমতট এবং কখনো কখনো হরিকেল নামে পরিচিত ছিল। এয়োদশ শতাব্দীর প্রারম্ভে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বখতিয়ার খিলজী বঙ্গ দেশে সেন রাজত্বের অবসান ঘটিয়ে মুসলিম রাজত্বের সূচনা করেন।মোঘল যুগের পূর্বে বাংলার হিন্দু ও মুসলিম শাসকেরা ঢাকার চারিদিকের বিভিন্ন অবস্থানে তাদের রাজধানী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এসব রাজধানী নগরীর কয়েকটি নিদর্শন এখনো বিক্রমপুর, ভাওয়াল ও সোনারগাঁওয়ে দেখা যায়। ১৫৭৫ সালে মোঘলরা পাঠান সুলতানের কাছ থেকে বাংলার শাসনভার ছিনিয়ে নিলেও তাদেরকে বাংলার ভূস্বামী বা ভূইয়াদেরকে নিয়ন্ত্রণে রাখবার জন্য যথেষ্ঠ বেগ পেতে হয়।

 

ঢাকার ইতিহাস পর্যবেক্ষণ করে আরও জানা যায় যে, ১৬১০ খ্রিষ্টাব্দে প্রাদেশিক রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর প্রায় একশত বছর ঢাকার মর্যাদা অক্ষুণ্ণ ছিল। এ শহরে ছিল প্রশাসনিক সদর দফতর এবং সুবাহদার ও অন্যান্য কর্মচারীদের বাসস্থান। ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক কারণে মাহজাদা সুজা (১৬৩৯-৫৯) রাজধানী স্থানান্তর করেন। সুবাহদারি স্থানান্তরিত হলে ঢাকা রাজধানীর গুরুত্ব হারিয়ে একটি স্থানীয় প্রশাসনিক কেন্দ্রে পরিণত হয়।পরবর্তী সুবাহদার শাহ সুজা ঢাকায় নির্মাণ কর্মকান্ড শুরু করেন। শাহ সুজার দীউয়ান মীর আবুল কাশিম ১৬৪৫ খ্রিষ্টাব্দে বড় নামে একটি সুপ্রশস্ত ইমারত নির্মাণ করেছিলেন। ইমারতটির অবস্থান বুড়িগঙ্গার তীরে এবং বর্তমান চকবাজারের দক্ষিণে।ঢাকার ইতিহাসে বেশ কয়েকটি নির্মাণ কাজের সঙ্গে মীরজুমলা নাম জড়িয়ে আছে, প্রথমে মীরজুমলার গেট পরবর্তী সময়ে যা রমনা গেট নামে পরিচিত হয়। কার্জন হল এর কাছাকাছি ও পুরাতন হাইকোর্ট ভবনের পশ্চিমে ময়মনসিংহ রোডে গেটটি অবস্থিত।

 

ঢাকার ইতিহাস পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় যে, পরবর্তী সুবাদার শায়েস্তা খান ছিলেন একজন খ্যাতিমান নির্মাতা। অবশ্য তিনি একটি কাটরাও নির্মাণ করেন। এটি ছোট কাটরা নামে পরিচিত, শাহ সুজার বড় কাটরা থেকে পৃথক করার জন্য এ নামকরণ। তিনি বেশ কয়েকটি মসজিদ ও সমাধিসৌধও নির্মাণ করেন। মসজিদ গুলির মধ্যে চকবাজার মসজিদ, বাবুবাজার মসজিদ ও সাতগম্বুজ মসজিদ বিখ্যাত। এসব মসজিদ ঢাকার ইতিহাস কে সমৃদ্ধ করেছে। সমাধিগুলির মধ্যে সবচাইতে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বিবি পরীর সমাধি।নদীপথের পাশে অবস্থানের কারণে ঢাকা প্রাক-মোঘল যুগেই স্থানীয় বাণিজ্যের কেন্দ্র ছিল। কেননা ঢাকা ছিল একটি উৎপাদন কেন্দ্র।এখানে উৎপাদিত সুতিবস্ত্র উচ্চমান সম্পন্ন এবং বহির্বিশ্বে ছিল এর প্রচুর চাহিদা। মসলিন নামে পরিচিত বিভিন্ন ধরনের সুতিবস্ত্র বাইরে রপ্তানি হতো। এ সব ক্রয়ের জন্য ইউরোপীয় কোম্পানীগুলো আমদানি করত প্রচুর স্বর্ণ ও রৌপ্য পিন্ড।

ঢাকার ইতিহাস থেকে আরও জানা যায় যে, বাংলার নওয়াবদের রাজনৈতিক ক্ষমতার পতন এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির উত্থান আঠারো শতকের শেষভাগে ঢাকার প্রশাসনিক গুরুত্বকে ম্লান করে দেয়। উপরন্তু, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যিক ও উৎপাদন নীতি নগরীর আর্থিক ভিত্তিকে ধ্বংস করে দেয়।উন্নয়নের নতুন ধারা এবং সমৃদ্ধির নতুন যুগের সূত্রপাতের মাধ্যমে ১৮৪০- এর দশক নগর ইতিহাসে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করে। নগর উন্নয়নের এ যাত্রা তখন থেকেই অব্যাহতভাবে চলতে থাকে। প্রশাসনিক ক্রমবৃদ্ধি ইতঃপূর্বে ঢাকা জেলা প্রশাসনের কেন্দ্র ছিল। এটি ১৮২৯ সালে ঢাকা বিভাগ নামে একটি বৃহৎ বিভাগের সদর দফতরে পরিণত হয়। এরপর ঢাকার প্রশাসনিক গুরুত্ব বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং ১৮৮৫ সালের মধ্যে বঙ্গপ্রদেশে কলকাতার পরে ঢাকা নগরীকে সর্ববৃহৎ বেসামরিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়।

ঢাকার ইতিহাস পর্যবেক্ষণ করে আরও জানা যায় যে১৯০৫-১১ সালের দিকে ঢাকার প্রশাসনিক গুরুত্ব নাটকীয়ভাবে আরও বৃদ্ধি পায় যখন এটিকে পূর্ব বাংলা ও আসাম নামে নতুন প্রদেশের রাজধানী করা হয়। একটি হাইকোর্ট এবং একটি সচিবালয়সহ একজন লেফটেন্যান্ট গভর্নর নিযুক্ত করা হয়।১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান এবং স্বাধীন পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার পর পূর্ব বাংলা নামে নতুন প্রদেশের রাজধানী হওয়ায় ঢাকার উথানে অধিকতর স্থায়ী উন্নয়ন সাধিত হয়। এ সময় হতে ঢাকা শুধু এ নতুন প্রদেশের প্রশাসনিক সদর দফতরই ছিল না বরং এখানে আইন পরিষদ এবং জাতীয় সংসদের অধিবেশন বসত।সুদীর্ঘ ঢাকার ইতিহাস পূর্ণতা পায় অনেক সংগ্রাম, ত্যাগ এবং রক্তের বিনিময়ে নয়মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে। একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে ঢাকা রাজনৈতিক, প্রশাসনিক কার্যকলাপ এবং অর্থনৈতিক, সামাজিক, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্ররূপে মর্যাদা লাভ করে।

 

ঢাকার আবহাওয়া ও জলবায়ু:

ঢাকার জলবায়ু প্রধানত উষ্ণ, বর্ষণমুখর এবং আর্দ্র গ্রীষ্মমন্ডলীয়। কোপেন জলবায়ু শ্রেণীবিভাগ এর অধীনে, জলবায়ু নিয়ে ঢাকার ইতিহাস পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় যে, ঢাকার জলবায়ু ক্রান্তীয় সমভাবাপন্ন। এই শহরের একটি স্বতন্ত্র মৌসুম রয়েছে, এখানে বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ২৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং জানুয়ারী থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যে তাপমাত্রা ১৯.৫ থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। মে থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যে গড়ে প্রায় ২১২১ মিলিমিটার(৮৩.৫ ইঞ্চি) বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে, যা সারাবছরের মোট বৃষ্টিপাতের প্রায় ৮৭%। যানজট এবং এবং শিল্প কারখানার অপরিকল্পিত বর্জ্য নির্গমনের ফলে প্রতিনিয়ত বায়ু এবং পানি দূষণ বাড়ছে, ফলে শহরের জনস্বাস্থ্য এবং জীবন মান মারাত্বকভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। ঢাকার চারপাশে জলাশয় এবং জলাভূমি গুলি ধ্বংসের সম্মুখীন কারণ, এগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে বহুতল ভবন এবং অন্যান্য আবাসন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে। দূষণের ফলে প্রকৃতির যে ক্ষতি হচ্ছে তার ফলে এই এলাকার জীববৈচিত্র হুমকির সম্মুখীন।

 

ঢাকার দর্শনীয় স্থানসমূহ:

ঢাকার ইতিহাস পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় এই শহর অনেক দর্শনীয় স্থান সমৃদ্ধ একটি শহর।

ঐতিহাসিক স্থানসমূহ: লালবাগ কেল্লা, আহসান মঞ্জিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ হল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, শাঁখারিবাজার, হোসেনী দালান, ছোট কাটরা, বড় কাটরা, কার্জন হল, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ভবন (পুরাতন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলা ভবন), ঢাকেশ্বরী মন্দির, তারা মসজিদ, মীর জুমলা গেট, পরীবিবির মাজার

পার্ক, বিনোদন ও প্রাকৃতিক স্থানঃ রমনা পার্ক, বাহাদুর শাহ্‌ পার্ক- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যান, বোটানিক্যাল গার্ডেন, ঢাকা শিশু পার্ক, বুড়িগঙ্গা নদী, ঢাকা চিড়িয়াখানা, বাংলাদেশ জাতীয় যাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর, বলধা গার্ডেন

স্মৃতিসৌধ ও স্মারকঃ জাতীয় শহীদ মিনার, শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ, (রায়ের বাজার), অপরাজেয় বাংলা-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ ভাস্কর্য আসাদ গেইট

আধুনিক স্থাপত্যঃ জাতীয় সংসদ ভবন, বাংলাদেশ ব্যাংক ভবন, ভাসানী নভো থিয়েটার, বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্ক, মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ।

হ্রদঃ ধানমন্ডী হ্রদ, গুলশান হ্রদ, বনানী হ্রদ, ডিয়া বাড়ি হ্রদ

 

ঢাকার ইতিহাস -এ যা কিছু প্রথম:

ঢাকার ইতিহাস ঘেঁটে করে যা কিছু প্রথম এই শহরের-

  • মন্দির: ঢাকার প্রথম মন্দির সম্ভবত বকশিবাজারের ঢাকেশ্বরী মন্দির। ধারণা করা হয় এ মন্দিরের নাম থেকেই এই শহরের নামকরণ হয়েছে ‘ঢাকা’।এটির প্রতিষ্ঠাতা সেনবংশের রাজা বল্লাল সেন এর মাধ্যমেই ঢাকার প্রাচীনত্ব প্রমাণিত হয়।
  • মসজিদ: ১৪৫৬-৫৭ সালে নির্মিত নারিন্দার বিনত বিবির মসজিদই সম্ভবত ঢাকার প্রথম মসজিদ।
  • মুসলিম শিলালিপি: নারিন্দার বিনত বিবি মসজিদে প্রাপ্ত শিলালিপিটিই সম্ভবত ঢাকার প্রথম মুসলিম শিলালিপি।
  • গির্জা: পর্যটক তাভারনিয়ার ও মানরিকের বর্ণনায় প্রাপ্ত গির্জাটি ১৬১২ সালের দিকে অগাস্টিয়ানদের নির্মিত বলে জানা গেলেও এর অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
  • নির্বাক চলচ্চিত্র: ঢাকার ইতিহাস থেকে জানা যায় ১৯৩১ সালে নির্মিত ঢাকার প্রথম পূর্ণাঙ্গ নির্বাক চলচ্চিত্র দি লাস্ট কিস।

 

  • পাবলিক মার্কেট: ঢাকা পৌরসভার চেয়ারম্যান নবাব ইউসুফজান ১৯১৩ সালে ঢাকায় প্রথম পাবলিক মার্কেট স্থাপন করেন।
  • খেলাফত কমিটির অধিবেশন: নবাব সলিমুল্লার জ্যেষ্ঠপুত্র খাজা হাবিবুল্লাহর উদ্যোগে ডিসেম্বর ১৯২০ সালে আহসান মঞ্জিলে ঢাকা খেলাফত কমিটির প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।
  • পৌরসভা: ১৮৬৪ সালে ঢাকায় প্রথম পৌরসভা গঠিত হয়।
  • ব্যালট পেপারে নির্বাচন: ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯১৯ সালের পরের নির্বাচনে ঢাকায় প্রথম ব্যালট পেপার ব্যবহৃত হয়।
  • ঘোড়াগাড়ির প্রবর্তক: আরমেনিয়ান জিএম সিরকোর প্রথম ঢাকায় ঘোড়াগাড়ি প্রবর্তন করেন বলে ধারণা করা হয়। তার প্রবর্তিত ঘোড়াগাড়ি ঢাকায় পরিচিতি পায় ঠিকাগাড়ি নামে।
  • জেনারেটরে বৈদ্যুতিক বাতি: ঢাকার ইতিহাস থেকে জানা যায় ৭ ডিসেম্বর ১৯০১ সালে নবাব আহসান উল্লাহর আমন্ত্রণে ছোট লাটের সেক্রেটারি বোলটন ঢাকায় আসেন। বোলটন আহসান মঞ্জিলে হেমন্তের এক শনিবার বিকাল ৫টার সময় সুইচ টিপে ব্যক্তিগত জেনারেটর চালু করে বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালান।

 

  • ম্যাজিস্ট্রেট: সম্ভবত ইংরেজ মি. ডে ঢাকার প্রথম ম্যাজিস্ট্রেট।
  • নির্বাচিত চেয়ারম্যান: জনগণের ভোটে নির্বাচিত ঢাকার প্রথম চেয়ারম্যান আনন্দ চন্দ্র রায়।
  • হাসপাতাল: কলকাতার দেশীয় হাসপাতালের শাখা হিসেবে ১৮০৩ সালে ঢাকার প্রথম হাসপাতাল স্থাপিত হয়।
  • ডিপার্টমেন্টাল স্টোর: ঢাকার নবাব পরিবারের খাজা নাজিমউদ্দিন ও খাজা শাহাবউদ্দিন ২৩ মার্চ ১৯২৩ সালে ঢাকায় প্রথম ডিপার্টমেন্টাল স্টোর খোলেন।
  • জজ: ১৭৭৮ সালে ঢাকার প্রথম জজ নিযুক্ত হন মি. ডানকানসান।
  • ইমামবাড়া: ঢাকার ইতিহাস থেকে বেশ কয়েকটি প্রাচীন ইমামবাড়ার কথা জানা গেলেও ঢাকার প্রথম ইমামবাড়া সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায় না।

 

  • গুরুদুয়ারা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠাগারের পশ্চিম পাশে তপুর শিখ সঙ্গত নামে স্থাপিত শিখ মন্দির। এটি গুরুদুয়ারা নানক শাহী নামে পরিচিত।
  • ব্রাহ্মসমাজ মন্দির: পাটুয়াটুলীর মুখে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের পাশে ২২ আগস্ট ১৮৬৯ সালে ঢাকা ব্রাহ্মসমাজ মন্দিরটি নির্মিত হয়।
  • বিদ্যালয়: ১৮১৬ সালের এপ্রিলে ছোট কাটরায় স্থাপিত লিওনার্দোর স্কুল।
  • সরকারি বিদ্যালয়: ঢাকার ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, ১৫ জুলাই ১৯৩৫ সালে প্রতিষ্ঠিত কলেজিয়েট স্কুলটিই ঢাকার প্রথম সরকারি বিদ্যালয়।
  • বালিকা বিদ্যালয়: ১৮৭৩ সালে ব্রাহ্মসমাজের উদ্যোগে ফরাশগঞ্জের একটি বাড়িতে মাত্র দুজন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে ঢাকার প্রথম বালিকা বিদ্যালয়।
  • কারিগরি বিদ্যালয়: ১৮৭৬ সালে ঢাকায় প্রথম সার্ভে স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এটিই ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিত।
  • সরকারি কলেজ: ১৮৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকার প্রথম সরকারি কলেজ ঢাকা কলেজ।
  • বেসরকারি কলেজ: ঢাকার প্রথম বেসরকারি কলেজ জগন্নাথ কলেজ।

 

  • নৈশ্য কলেজ: ১৯৬১ সালে স্হাপিত বকশিবাজারে অবস্থানরত নাইট কলেজ। বর্তমানে ফার্মগেটে স্থানান্তরিত তেজগাঁও কলেজ।
  • মেডিকেল কলেজ: ঢাকার প্রথম মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতাল কলেজ।
  • মাদ্রাসা-মক্তব: ঢাকার ইতিহাস থেকে জানা যায়  যে, ঢাকা শহরে অনেক মসজিদের সঙ্গেই ছিল মক্তব ও মাদ্রাসা। সরকারের স্বীকৃত মাদ্রাসা হিসেবে ঢাকা মাদ্রাসাই সম্ভবত ঢাকার প্রথম মাদ্রাসা।
  • বেতার কেন্দ্র: ১৬ ডিসেম্বর ১৯৩৯ সালে নাজিমউদ্দিন রোডে খান বাহাদুর নাজির উদ্দিন সাহেবের ভাড়া বাড়িতে দুটি স্টুডিও নিয়ে অল ইন্ডিয়া রেডিও ঢাকার বেতার সম্প্রচার শুরু করে।
  • ফটোগ্রাফিক স্টুডিও: ১৯১০ সালে ১৬ নম্বর নবাবপুর রোডে আর সি দাস অ্যান্ড সন্স নামে ঢাকায় প্রথম ফটোগ্রাফিক স্টুডিও প্রতিষ্ঠিত হয়।

 

  • মোটরগাড়ি:  ঢাকার ইতিহাস থেকে জানা যায় ১৯০৫ সালে ঢাকায় প্রথম মোটরগাড়ি চালু করেন নবাব সলিমুল্লাহ।
  • রিকশা: সম্ভবত ১৯৩৬-৩৭ সালে ঢাকার মৌলভীবাজারের দুই ব্যক্তি ব্যবসায়িক উদ্দেশে কলকাতার চন্দননগর থেকে ১৮০ টাকায় ঢাকায় দুটি সাইকেল রিকশা আমদানি করেন।
  • মুদ্রণযন্ত্র: ঢাকার প্রথম মুদ্রণযন্ত্র বাংলা মুদ্রণযন্ত্র। মুদ্রণযন্ত্রটি ঢাকায় ১৮৬০ সালে স্থাপন করা হয়।
  • বই: মুনতাসীর মামুনের মতে, ঢাকার ছোট কাটরা থেকে ১৮৪৯ সালে কাটরা প্রেস থেকে ব্যাপটিস্ট মিশনারির প্রকাশিত The first report of the East bengal Missionary Society MDCC-CXL VIII, with an Appendix etc. রিপোর্ট ই  ঢাকার প্রকাশিত প্রথম বই।
  • সংবাদপত্র: ঢাকার প্রথম সংবাদপত্র ঢাকা নিউজ।
  • বাংলা সংবাদপত্র: ঢাকা থেকে প্রকাশিত প্রথম বাংলা সংবাদপত্র ঢাকা প্রকাশ।

 

  • ইংরেজি সংবাদপত্র: ঢাকার প্রথম সংবাদপত্র ঢাকা নিউজ।
  • উর্দু সংবাদপত্র: ১৯০৬ সালে ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয় উর্দু সংবাদপত্র আল মাশরিক।
  • বিজ্ঞান পত্রিকা: জানুয়ারি ১৮৮১ সালে ঢাকার প্রথম বিজ্ঞান পত্রিকা ভিষক প্রকাশিত হয়।
  • থিয়েটার: ঢাকার প্রথম থিয়েটার সম্ভবত পূর্ববঙ্গ রঙ্গভূমি। প্রতিষ্ঠাকাল নিয়ে মতভেদ থাকলেও ধারণা করা হয় ১৮৬১ সালের দিকে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
  • নাটক: ঢাকায় প্রথম মঞ্চস্থ নাটক নিয়ে দ্বিধা থাকলেও এক্ষেত্রে দীনবন্ধু মিত্রের নীল দর্পণকেই প্রথম মানা হয়।
  • যাত্রা: সম্ভবত ‘সীতার বনবাস’ যাত্রাপালাটি ঢাকায় প্রদর্শিত প্রথম যাত্রা।

 

  • বায়োস্কোপ: ১৮৯৮ সালে নবাব আহসানউল্লাহ কলকাতা থেকে বায়োস্কোপ এনে পরিবার ও ঢাকাবাসীকে দেখানোর ব্যবস্থা করেন।
  • সিনেমা হল: ঢাকার পিকচার হাউস নাট্যমঞ্চটি (শাবিস্তান হল) ১৯১৪ সালে সিনেমা হলে রূপান্তরিত হয়।
  • বাণিজ্যিক ব্যাংক: ঢাকার প্রথম বাণিজ্যিক ব্যাংক ছিল ঢাকা ব্যাংক।
  • বিদ্যুৎ বাতি: ৭ ডিসেম্বর-১৯০১ সালে নবাব আহসানউল্লাহর অর্থায়নে ঢাকার বেশকিছু রাস্তায় বিদ্যুৎ বাতির ব্যবস্থা করা হয়।
  • তেলের বাতি: ১৮৭১ সালে সাধারণ ঢাকাবাসীর চাঁদায় শহরে সর্বপ্রথম ১০০টি ল্যাম্পপোস্ট আর তেলের বাতি চালু করা হয়।

 

  • শ্মশান: আদিতে ঢাকার নদী ও খালপাড়ে মরদেহ পোড়ানো হতো। ঢাকার আদি স্বীকৃত শ্মশানের মধ্যে দয়াগঞ্জ শ্মশানঘাট, পোস্তগোলা ও লালবাগের শ্মশানের কথা জানা যায়।
  • কবরস্থান: আদি ঢাকায় যত্রতত্র কবর দেওয়ার রেওয়াজ ছিল। ১৮৮২ সালে ঢাকার পুরনো নাখাসে মিউনিসিপ্যালিটির তত্ত্বাবধানে প্রথম কবরস্থান স্থাপন করা হয়।
  • ডক্টরেট-পিএইচডি: নিশিকান্ত চট্টোপাধ্যায় বাংলার যাত্রাপালা নিয়ে গবেষণা করে সুইজারল্যান্ড থেকে প্রথম ঢাকাবাসী হিসেবে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
  • নায়েব নাজিম: ঢাকার প্রথম নায়েব নাজিম মুহম্মদ আলী খান।
  • মুসলমান গ্র্যাজুয়েট :আদিনাথ সেনের মতে, ঢাকার প্রথম মুসলমান গ্র্যাজুয়েট খাজা মুহম্মদ আসগর।
  • নারী চিত্রশিল্পী: নবাব পরিবারের মেহেরবানু খানমই সম্ভবত ঢাকার প্রথম নারী চিত্রশিল্পী।
  • ঢাকার প্রথম চলচ্চিত্র: ঢাকার নবাব পরিবারের খাজা আদিল ও খাজা আজমল ঢাকার প্রথম ছবি সুকুমারী নির্মাণ করেন। এ চলচ্চিত্রটি ছিল পরীক্ষামূলক।

 

তথ্যসূত্রঃ Dhaka.gov.bd, Wikipedia

আজকের ঢাকা

বর্তমান ঢাকার কিছু ছবির গ্যালারী Saad Abdullah ভাইয়ের ফেসবুক হতে সংগৃহীত

 

 

 

পুরাতন ঢাকার কিছু ছবির গ্যালারী ফেসবুক হতে সংগৃহীত

 

 

 

 

 

কিশোরগঞ্জ জেলা

2 Comments

Leave a Reply

%d bloggers like this: